দেড় দশক পরেও আনন্দ ও অঞ্জনের শোকে বিহ্বল ফালাকাটা। পুলিশের গুলিতে দুই পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে আজ, বৃহস্পতিবার ফের এলাকাবাসী মিছিলে সামিল হবেন। তাঁদের আশা, রাজ্যে পালা বদল হয়েছে। এ বার পুলিশের গুলি চালনার ঘটনার নতুন করে তদন্ত হবে। শাস্তির ব্যবস্থা হবে দোষীদের। ১৯৯৬ সালের ৮ অগস্ট দুলাল দোকান এলাকার কয়েকজন বাসিন্দারা সঙ্গে ফালাকাটা হাই স্কুলের ছাত্রদের প্রথমে বচসা ও পরে মারপিট শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালায়। একটি গুলি ছিটকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অঞ্জন চন্দের মুখ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। অন্য একটি গুলি একাদশ শ্রেণির ছাত্র আনন্দ সূত্রধরের বুকে লাগে। দু’জন রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। প্রতিবাদে বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। থানায় বিক্ষোভ দেখাতে গেলে ফের গুলি চলে। জখম হন ১৮ জন। আগুন জ্বলে বিডিও এবং ভূমি রাজস্ব দফতরে। বিভিন্ন মহলে ঘটনার নিন্দা হয়। তৎকালীন যুব কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফালাকাটায় যান। দুই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ঘটনার নিন্দা করেন। সেই ঘটনা দেড় দশক পরেও ভোলেনি ফালাকাটা। ইতি মধ্যে রাজ্যে পালা বদল হয়েছে। তৎকালীন যুব কংগ্রেস সভানেত্রী বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী। আনন্দর বাবা পেশায় কাঠ মিস্ত্রি রাখাল সূত্রধরের আশা নতুন সরকার ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হবে। ঘটনার পরে বামফ্রন্ট সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেওয়া ৫০ হাজার টাকা ও নিজের জমানো টাকা দিয়ে কলেজ পাড়ার বাড়ির সামনে ছেলের স্মৃতিতে বেদি তৈরি করেন তিনি। প্রতিদিন সেখানে ফুল দেন আনন্দর বাবা মা সত্যবালা দেবী। প্রায় ৬৮ বছর বয়সী রাখালবাবু বলেন, “১৫ বছর পরেও দোষী পুলিশ কর্মীরা শাস্তি পেল না। প্রতিদিন বেদির সামনে দাঁড়িয়ে ছেলের আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি দোষীদের শাস্তির জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি। নতুন মুখ্যমন্ত্রীকে লিখে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।” মা বলেন, “নতুন সরকার এসেছে। এ বার নিশ্চই সুবিচার মিলবে।” অঞ্জনের দাদা অনুপ চন্দ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটাই আবেদন ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের কড়া শাস্তি হোক।” ঘটনার কথা ভুলতে পারেননি ফালাকাটা হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নীরদবরণ রায়। তিনি বলেন,“ছবির মতো ছেলে দুটোর মুখ চোখের সামনে ভাসে। দিনটিকে কিছুতে ভুলতে পারি না। যন্ত্রণা হয়।” আজ, মিছিল করে বাসিন্দারা ফের তাঁদের ক্ষোভ যন্ত্রণার কথা জানাবেন। দ্রুত তদন্তের দাবি তুলবেন। ছাত্র-শিক্ষক সহ বিভিন্ন মহলে এ বারও যেন সেই একই প্রশ্ন উঁকি দিয়ে যাচ্ছে কবে ঘটনার তদন্ত হবে! ফালাকাটার তৃণমূল বিধায়ক অনিল অধিকারী বলেন,“মৃত ছাত্রদের পরিবার মূখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী নিজে দেখছেন।” |