প্রতিবন্ধীদের স্বনির্ভর করছে স্বপ্নতোরণ
স্বনির্ভর হতে মাশরুম চাষে হাতেখড়ি হয়েছে প্রতিবন্ধীদের। দরমার ঘরে পলিথিন মুড়িয়ে তৈরি হয়েছে আধো অন্ধকার একটি ঘর। ঘরের ছাদ থেকে ঝুলছে সারি সারি খড়ের তৈরি কলসির মতো দেখতে পাত্র। পাত্রের ফাঁক থেকে মাথা বের করা সাদাটে মাশরুমই প্রতিবন্ধী যুবক যুবতীদের স্বাবলম্বী করে তুলবে বলে আশা স্কুল কর্তৃপক্ষের। কয়েকজন প্রতিবন্ধী যুবক-যুবতীদের নিয়ে বছর পাঁচেক আগে তৈরি স্বপ্নতোরণ নামে সংস্থা। জলপাইগুড়ি শহর এবং লাগোয়া গ্রামের বিভিন্ন মেলায় হাতের কাজ বিক্রি করে। সেই টাকা প্রতিবন্ধী যুবক যুবতীদের হাতে তুলে দিত সংস্থাটি। হাতের কাজ বিক্রির টাকা থেকে কিছুটা জমিয়ে সংস্থাটি রবীন্দ্রনগর কলোনি এলাকায় তিন কাঠা জমি কেনেন। বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় সেই জমিতে তৈরি হয়। একটি প্রতিবন্ধীদের হাতের কাজ শেখানোর স্কুল বাড়ি। লক্ষ্য সকলকে আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করে তোলা। সেই স্কুল বাড়ির উঠোন এখন মাশরুম চাষ কেন্দ্র। পেশাদারদের কাছে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন জনা কুড়ি ছাত্র ছাত্র। সকলেই মুখ ও বধির প্রতিবন্ধী. ইশারায বুঝে নিচ্ছে কিভাবে মাশরুম বের হওয়ার পরে তা কাটতে হয়। কতটা যত্ন নিয়ে মাশরুম প্যাকেট বন্দি করতে হয়। মাশরুম বিশেষজ্ঞ দিব্যেন্দু মজুমদার বলেন, “ওদের যথেষ্ট উৎসাহ রয়েছে। ভালোই কাজ শিখেছে। একটা ঘর তৈরি করতে পারলে প্রতিদিন অন্তত ২০ কেজি মাশরুম উৎপাদন সম্ভব। মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হতে পারে।”
ছবি: সন্দীপ পাল।
মাসখানেক আগে পরীক্ষামূলক ভাবে মাশরুম চাষ শুরু করেছে সংস্থাটি। এ দিন বুধবার থেকে তারা উৎপাদিত মাশরুম বিক্রি শুরু করল। এ দিন স্কুলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জলপাইগুড়ির বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা। তিনি স্কুলকে পৃথক মাশরুমের ঘর তৈরি করার জন্য সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। বিধায়ক বলেন, “ওদের মধ্যে চেষ্টা রয়েছে। যেমন সুন্দর হাতের কাজ তৈরি করে, তেমনই মাশরুম করছে। ওদের পাশে সবসময়েই থাকার চেষ্টা করি।” স্বাবলম্বী হতে মাশরুম শুধু নয়, স্কুলের চালাঘরে বাঁশ, কাগজের নানা হাতের কাজ তৈরি করে আবেয়া, উৎপল, প্রবীররা। লাল-নীল রঙের ফুল, কাগজের পাতাবাহার, ফুলদানি নানান ঘর সাজানোর জিনিস। গ্রাম, শহরের বিভিন্ন মেলায় সে সব বিক্রি করে মাসে দেড় থেকে দু হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়ে যেত। তবে প্রয়োজনের তুলনায় এই আয় বেশ কম। আয় বাড়তে বিকল্প আয়ের খোঁজেই মাশরুমের চাষ শিখছে জলপাইগুড়ির স্বপ্নতোরণ প্রতিবন্ধী স্কুলের ২০ জন ছাত্র ছাত্রী। ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে অন্তত ২০ কেজি মতো মাশরুম পাওয়া যায়। ১০০ টাকা কেজি বাজার দরে মাশরুম বিক্রি হলে লাভ বেশ ভালোই থাকবে বলে আশা করছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। শহরের ব্যস্ত এলাকায় মাশরুমের তৈরি নানা খাবার বিক্রির কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। সেখানে মাশরুমের পকোড়া, সিঙাড়া বা চিলি মাশরুম চেখে ভালো লাগলে কাঁচা মাশরুমও কিনতে পাওয়া যাবে। এই কেন্দ্রও প্রতিবন্ধী ছাত্র ছাত্রীরাই চালাবে বলে জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়াও বিভিন্ন মেলায় হাতের কাজের চাহিদাও দিন দিন কমে আসছে বলে স্কুল কতৃপক্ষের অভিঞ্জতা. স্কুলের মুখপত্র দেবাশিস চক্রবর্ত্তী বলেন, মেলায় ঘর সাজানোর জিনিস বিক্রি করে যা আয় হয় তা ওদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়. কিন্তু সারা বছর মেলা পাই না. আর ওদের যদি কোনও মাসে হাতখরচ না দেওয়া হয় তবে উৎসাহ হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণেই মাশরুম চাষ করেই সকলকে স্বাবলম্বী করে তোলার আশায় রয়েছি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.