নিকাশি নালা আটকে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ভবনের প্রাচীর নির্মাণকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের একাংশের সঙ্গে নির্মাণকারী সংস্থার শ্রমিকদের গোলমালের জেরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্থি থানার শেরপুর এলাকায়। গত ৩০ জুলাই ডায়মন্ড হারবার মহকুমাশাসকের দফতরে এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বৈঠক হলেও কোনও সমাধানসূত্রে মেলেনি। এই অবস্থায় গ্রামবাসীদের বাধায় আটকে রয়েছে নির্মাণ কাজ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, উস্থির শেরপুর রোডে নোনাতলা মোড়ের কাছে জমি কিনে কয়েক মাস আগে প্রাচীর দেওয়ার কাজ শুরু করে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। প্রায় ৬০ বিঘা জমি ঘেরার জন্য রাজারামপুর গ্রামের পাশ দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ ১২ ফুট উচ্চতার প্রাচীর তৈরির কাজ শুরু হয়। রাজারামপুর এবং আশপাশের কয়েকটি গ্রাম পিরতলা, বারদেউলি-সহ ৫৬টি গ্রামের নিকাশি ও বর্ষার অতিরিক্ত জল রাজারামপুর হয়ে শেরপুর খালে পড়ত। কিন্তু যে নিকাশি নালা দিয়ে ওই জল যেত তার উপর দিয়ে প্রাচীর তৈরি হওয়ায় নিকাশি ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। তারই প্রতিবাদে তাঁরা প্রাচীর তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
রাজারামপুর গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, দল নিকাশি ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জমা জলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মশার উপদ্রব বাড়ছে। তা ছাড়া গ্রামের পুকুরের জল উপচে বাড়িতে ঢুকে পড়ছে। একে মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। |
তাঁদের দাবি, শেরপুর খালের সঙ্গে সংযোগকারী এই নিকাশি নালা দিয়ে জল নিকাশির উপযুক্ত ব্যবস্থা করার পর প্রাচীর তৈরি করা হোক। পাশপাশি তাঁদের অভিযোগ, স্থানীয় মগরাহাট পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়কের মদতে এবং প্রশাসনের নজরদারি না থাকার সুযোগ নিয়ে ওই সংস্থা জোর করে নিকাশি নালার উপর দিয়ে প্রাচীর তৈরির কাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দা বদরুদ্দোজা শেখ, সেহরার শেখ, আব্দুল মোমিন শেখদের অভিযোগ, গ্রামের মানুষ ওই প্রাচীর তৈরির কাজে বাধা দেওয়ায় তাঁদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। গ্রামের ছেলেমেয়েদের রাজারামপুর বাসমোড় হয়ে শিরাকোল স্কুলে, বাজারে যাতায়াত করতে হয়। অভিযোগ, নির্মাণকারী সংস্থার শ্রমিকেরা গ্রামের ছেলেমেয়েদের মারধর করছে। এই অবস্থায় ভয়ে ছাত্রচাত্রীরা স্কুলে পরীক্ষাও দিতে যেতে পারছে না।
যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছে ওই সংস্থা। সংস্থার তরফে তপন সর্দার বলেন, “ওই গ্রামের শেখপাড়ার কয়েকজন প্রাচীর তোলা নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। তা দিতে অস্বীকার করাতেই কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে।” নিকাশি নালা বন্ধ হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রাচীরের পিছনে নিকাশি নালার কিছু অংশ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। বাকি অংশের কাজ ওদের বাধায় আটকে গিয়েছে। তা ছাড়া বর্ষার জল জমে থাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।”
এ দিকে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ প্রসঙ্গে মগরাহাট পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক গিয়াসুদ্দিন মোল্লা বলেন, “ওই গ্রামের কিছু সিপিএম সমর্থক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। সমস্ত বিষয়ের উপরেই নজর রেখেছে প্রশাসন।”
ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “নিকাশি নালার উপর দিয়ে প্রাচীর তৈরি নিয়ে গ্রামের কিছু মানুষের অভিযোগকে ঘিরে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেই বিষয়ে আলোচনার জন্য ওই সব গ্রামবাসী এবং সংস্থার কয়েকজনকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। যদিও আমাকে গ্রামবাসীদের কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে ঠিক হয়েছে পুলিশ-প্রশাসন এবং অভিযোগকারী ও সংস্থার তরফে দু’জন করে প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা হবে। ওই কমিটি পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। আপাতত কাঁচা নিকাশি নালা তৈরি করে জল নিকাশি সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনও গোলমাল না বাধে সে জন্য নজর রাখা হয়েছে।” |