ঝড়ে চাল উড়ে গিয়েছে। রোদ, বৃষ্টিতে সমস্যায় পড়েছে ছাত্রছাত্রীরা। মিডডে মিলও অনিয়মিত। ছাত্রসংখ্যা কমে এখন একশোয় এসে ঠেকেছে।
সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা-সহ অন্য সরকারি সাহায্য না পেয়ে এমনই হাল হয়েছে ক্যানিং-১ ব্লকের বাঁশড়া নতুন অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দরবার করেও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকার এক ব্যক্তির দান করা জমিতে ১৯৬৭ সালে বাঁশড়া নতুন অবৈতনিক বিদ্যালয় তৈরি হয়। পরে ২০০১-এ বাঁশড়া এলাকায় একই সংসদের মধ্যে আরও একটি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি হয়। লক্ষ্মীনারায়ণপুর এবং বাঁশড়া স্কুলের আলাদা গ্রাম শিক্ষা কমিটি (ভিইসি) এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল। কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দু’টি স্কুলের একটি শিক্ষা কমিটি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করা হয়। দু’টি স্কুলেরই মিডডে মিল-সহ অন্য খাতের টাকা ওই অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। ভিইসি বৈঠক করে সরকারি টাকা বিলি এবং খরচের বিষয়ে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকেই শুরু হয় সমস্যা। |
ভিইসি গঠনের ক্ষেত্রে ওই দু’টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদে যিনি আগে যোগ দিয়েছেন ‘সিনিয়রিটির’ নিরিখে তিনিই ওই গ্রাম শিক্ষা কমিটির সম্পাদক পদের দাবিদার। একই ভাবে ‘সিনিয়র’ পঞ্চায়েত সদস্য কমিটির সভাপতি পদের দাবিদার। বাঁশড়া স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভিইসি-র সম্পাদক পদের দাবিদার হলেও এক তৃণমূল নেতার সমর্থনে নিয়ম না মেনে লক্ষ্মীনারায়ণপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সম্পাদক করা হয়। তাতে সিলমোহর দেয় ক্যানিং-১ তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতি। অভিযোগ, কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না করে লক্ষ্মীনারায়ণপুর স্কুল নিজেদের মতো করে সব কিছু ঠিক করে নেয়। ফলে সব কিছু থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে বাঁশড়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বাঁশড়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিবানী সর্দার (সাহা) বলেন, “২০০৯-এর মার্চ থেকে মিডডে মিল বন্ধ। আগে আমাদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল। পরে দু’টি স্কুলের একটি অ্যাকাউন্ট করার কথা বলা হয়। কিন্তু আমাদের অন্ধকারে রেখে সব কিছু করা হয়। এ ব্যাপারে সবাইকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।” স্থানীয় বাসিন্দা উৎপল সাঁপুই, সাধন নস্কররা বলেন, “লক্ষ্মীনারায়ণপুরের এক তৃণমূল নেতা নিজের প্রভাব খাটিয়ে পঞ্চায়েত সমিতিকে দিয়ে এই সব করিয়েছেন। সিপিএমের আমলে স্কুলে মিডডে মিল-সহ অন্য ব্যবস্থাগুলি ঠিকঠাক ছিল। আর এখন আমাদের স্কুল সব কিছু থেকে বঞ্চিত। আর অন্য দিকে, লক্ষ্মীনারায়ণপুর স্কুলের শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে।”
লক্ষ্মীনারায়ণপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌরাঙ্গ মণ্ডল অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়, “এ নিয়ে মামলা চলছে। যেখানে যা জানানোর জানিয়েছি। এর বেশি কিছু বলব না।”
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুরঞ্জনা চক্রবর্তী বলেন, “ওই স্কুলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে একটা সমস্যা হচ্ছে বলে শুনেছি। বিষয়টি স্কুল পরিদর্শককে দেখার জন্য বলেছি।” অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভেন্দু মিস্ত্রি বলেন, “আমি ওই স্কুলে গিয়েছিলাম। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।” ক্যানিং-১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের নারায়ণ ঘোষ বলেন, “দুই স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরে একটা সমস্যা হচ্ছে। তবে তা সমাধানের চেষ্টা চলছে।” |