বয়স্ক বাসিন্দাদের বেধড়ক মেরে ডাকাতি সোনারপুরে
হাতে ভোজালির কোপ নিয়ে শুয়ে রয়েছেন ৮৫ বছরের এক বৃদ্ধ চিকিৎসক। চোখের নীচে কালশিটে। ভোরবেলা বাড়িতে ঢুকে এক দল ডাকাতের তাণ্ডবের চিহ্ন তখনও তাঁর চোখে-মুখে লেগে রয়েছে। কথা বলতে গেলেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তিনি।
পুলিশ জানায়, সোনারপুর থানা এলাকার হরিনাভির বাসিন্দা জগদীশ চৌধুরী নামে ওই চিকিৎসকের বাড়িতে বুধবার ভোরে এক দল ডাকাত হানা দেয়। ঘণ্টা দেড়েক ধরে তারা ওই বাড়িতে তাণ্ডব চালায়। টাকা-গয়না, মোবাইল ফোন লুঠের সময়ে বাড়ির লোকজনকে বেধড়ক মারধর করে। অত্যাচার থেকে রেহাই পাননি বৃদ্ধ চিকিৎসকের শয্যাশায়ী স্ত্রী মনিকাদেবীও। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, লুঠ হওয়া জিনিসের মোট মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা।
ওই সময়ে রাস্তায় পুলিশের টহলদার গাড়ি থাকার কথা। প্রশ্ন উঠেছে, তা সত্ত্বেও দেড় ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালিয়ে ডাকাতেরা পালাল কী ভাবে?
ডাকাতের মারে জখম জগদীশ চৌধুরী (বাঁ দিকে), সুনীত দাস (ডান দিকে)।
হরিনাভির এনএসসি বসু রোড লাগোয়া ওই বাড়ির একতলায় জগদীশবাবু, তাঁর স্ত্রী এবং দীপালি নামে এক পরিচারিকা থাকেন। দোতলায় থাকেন জগদীশবাবুর মেয়ে, জামাই এবং নাতনি।
ঠিক কী ঘটেছে এ দিন? জগদীশবাবু জানিয়েছেন, এ দিন ভোরবেলা হঠাৎ বাড়ির পিছনের লোহার গেট ভেঙে ঘরের ভিতরে ঢোকে ছ’-সাত জন দুষ্কৃতী। তখন বসার ঘরে শুয়েছিলেন তিনি। ঢুকেই জগদীশবাবুর উপরে চড়াও হয় ডাকাতেরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। হাতে ভোজালির কোপ বসিয়ে দেয় এক ডাকাত। খুলে নেওয়া হয় তিনটি আংটি। এর পরেই পাশের ঘরে শুয়ে থাকা মনিকাদেবীর উপরে চড়াও হয় কয়েক জন। তার পরে দীপালির কাছ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি থেকে নগদ টাকা লুঠ করে ডাকাতেরা।
ওই পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, একতলায় লুঠপাট চালানোর সময়ে কাউকে টুঁ শব্দ করতে দেয়নি ডাকাতেরা। সব হাতানোর পরে ওই পরিচারিকার মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে তাকে দোতলায় জগদীশবাবুর মেয়ে-জামাইয়ের বন্ধ ঘরের সামনে নিয়ে যায় তারা। পরিচারিকাকে বলে, মেয়ে-জামাইকে নাম ধরে ডাকতে। সেই ডাক শুনে জগদীশবাবুর জামাই সুনীতবাবু দরজা খুলতেই তাঁকে মারধর শুরু করে দুষ্কৃতীরা। সুনীতবাবু বলেন, “আমাদের ঘরে এসে মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে আলমারির চাবি নিয়ে টাকা ও গয়না লুঠ করে ওরা।” সুনীতবাবু ও তাঁর মেয়েকে বেধড়ক মারা হয়। সুনীতবাবুর পায়ে ভোজালির কোপ মারে দুষ্কৃতীরা। কেড়ে নেওয়া হয় তাঁর মোবাইলও। ভোর পাঁচটা নাগাদ বাড়ির সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় দুষ্কৃতীর দল।
মনিকা চৌধুরী।
সুনীতবাবুর ঘরে একটি চপার ফেলে গিয়েছে তারা। ওই সময়ে জগদীশবাবুর আর এক পরিচারিকা আসছিলেন। তিনি বলেন, “বাড়ির সামনে কয়েক জন একটি সুমো গাড়িতে উঠছিল। আমি বাড়ির ভিতরে যাওয়ার পরে বিষয়টি স্পষ্ট হয়।”
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই বাড়ির এক প্রাক্তন পরিচারিকা এই ঘটনায় যুক্ত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। জগদীশবাবুও বলেন, “কয়েক দিন আগে চুরির অভিযোগে এক পরিচারিকাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে এই ঘটনায় জড়িত কি না, পুলিশকে দেখতে বলেছি।” পুলিশ জানিয়েছে, চৌধুরী পরিবারের বয়ান অনুযায়ী, দুষ্কৃতীরা হিন্দি ও বাংলায় কথা বলছিল। সকলেরই মুখ কাপড়ে বাঁধা ছিল। জগদীশবাবুর কাছ থেকে সেই বিবরণ শুনেছে পুলিশ। এ দিন সকালে ঘটনার কথা জানতে পেরেই জগদীশবাবুর বাড়িতে হাজির হন দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের পদস্থ কর্তারা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে।”
জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, “পুলিশের টহলদার গাড়ির নজরে পড়ার আশঙ্কায় বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা।” পালানোর সময়ে যে তারা সহজেই পুলিশের নজর এড়াতে পেরেছে, সে কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ওই দিন ভোরে পুলিশি টহলদারির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।
—নিজস্ব চিত্র



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.