সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি সুশান্ত চৌধুরীই দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বসে বরুণ বিশ্বাসকে খুনের ‘ছক কষেছিল’ বলে দাবি করল সিআইডি। গোয়েন্দাদের দাবি, জেরার মুখে তাঁদের কাছে এ কথা কবুল করেছে সুশান্ত।
তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে সুশান্তকে বুধবার দুপুরে তোলা হয় বনগাঁর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম) মধুমিতা রায়ের এজলাসে। সুশান্তর হয়ে কোনও আইনজীবী সওয়াল করেননি। সুশান্ত নিজেই কথা বলার অনুমতি চায়। সরকারি আইনজীবী সমীর দাস জানান, নিজেকে ডায়াবেটিসের রোগী জানিয়ে সুশান্ত বিচারকের কাছে সিআইডি হেফাজতে না পাঠানোর আবেদন করে। তা খারিজ করে তাকে ১৪ দিন সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। |
সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী, মিত্র ইন্সটিটিউশন (মেন)-এর শিক্ষক বরুণকে খুনের ঘটনায় সুশান্ত-সহ এ পর্যন্ত ৭ জনকে ধরেছে সিআইডি। যদিও তদন্তে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন সুটিয়াবাসীর একাংশ। ২০০০ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে সুটিয়ায় একের পর এক গণধর্ষণের পরে এলাকাবাসী দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগঠিত করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’ (বরুণ ছিলেন মঞ্চের সম্পাদক)। মঞ্চের কয়েক জন সদস্য এ দিনই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যান। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা না হলেও লিখিত দাবিপত্র পেশ করা হয়। মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার জানান, বরুণ খুনের ‘প্রকৃত সত্য’ উদ্ঘাটন দাবি জানানো হয়েছে রাজ্যপালের কাছে। সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়ার আর্জিও রয়েছে। মঞ্চের বক্তব্য, জেলে বসে খুনের ‘ছক কষে’ থাকলেও বরুণের উপরে সুশান্তর পুরনো আক্রোশকে ‘ব্যবহার’ করেছে অন্য কেউ।
বরুণ-হত্যায় শুরু থেকে সুশান্তের দিকেই সন্দেহের তির ছিল সিআইডি-র। জেলে গিয়ে সুশান্তকে জেরাও করেছে তারা। সিআইডি-র দাবি, সুশান্ত জেরায় তাদের কাছে স্বীকার করেছে, দমদম জেলে বসে সে-ই বরুণকে খুনের ফন্দি আঁটে। বরুণ-খুনের ঘটনায় দেবাশিস সরকার নামে এক কলেজ ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি মোবাইল ফোন। সিআইডি সূত্রের খবর, ওই ফোন নম্বরটির সঙ্গে দমদম গোরাবাজার এলাকার আর একটি মোবাইল নম্বরে বরুণকে খুনের আগে-পরের কয়েক দিন ২২ বার যোগাযোগ হয়েছিল। মামলার সরকারি আইনজীবী জানান, গোরাবাজারের ওই ফোনের মালিকের হদিস সুশান্ত দিতে পারে বলে সিআইডি-কে জানিয়েছে। এ দিন আদালত চত্বরে প্রতিবাদী মঞ্চের প্রচুর সদস্য হাজির ছিলেন। মহিলারাও এসেছিলেন। দোষীদের ‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ চেয়ে প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন ছিল তাঁদের হাতে। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ মোতায়েন ছিল। |