‘প্রিয়’ শিক্ষক বদলি হয়ে যাচ্ছেন অন্য স্কুলে। বিদায়-সংবর্ধনায় কিছুটা জাঁকজমক করতে চেয়েছিল ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু প্রধান শিক্ষক স্কুলের ‘নিয়ম’ মেনে তা করেননি। এ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পোস্টারও পড়ে স্কুলে। বুধবার সেই পোস্টার ছেঁড়াকে ঘিরে অশান্তি বাধল স্বরূপনগরের বালতি হাইস্কুলে।
ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে হাতাহাতি-ধস্তাধস্তি হল স্থানীয় কংগ্রেস নেতা তথা ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক ও তাঁর দলবলের। গোলমালে জড়িয়ে পড়লেন গ্রামবাসীদের একাংশও। দুই ছাত্র-সহ জখম হলেন পাঁচ জন। ভাঙচুর চালানো হল প্রাক্তন স্কুল সম্পাদকের দোকানে। পুলিশ এবং বিএসএফ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। এই ঘটনার জেরে শনিবার পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। যাঁর বদলিকে ঘিরে এত অশান্তি, সেই বাংলার শিক্ষক সুব্রত আচার্য এ দিন বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের ভালবাসা আমার সম্পদ। তবে ওরা একটু সংযত হতে পারত। স্কুলে যা হয়েছে, তা দুঃখজনক।” |
বালতি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন গাইন বলেন, “যে শিক্ষক অবসর নেন, কেবল মাত্র তাঁকেই জাঁকজমক করে বিদায়-সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এটাই স্কুলের রীতি। এ ক্ষেত্রে এক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। সে জন্য অফিস-ঘরে তাঁকে বিদায়-সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তা মানতে পারেনি ছাত্রছাত্রীরা।” তবে, গোলমালের পিছনে প্রধান শিক্ষক স্কুলের প্রাক্তন সম্পাদক-সহ ‘বহিরাগত’দের দায়ী করে তাঁদের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের আবেগের কথা বিবেচনা করে পুরনো ‘নিয়ম’ বদলের কথাও ভাবা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
হাতাহাতিতে জখম স্কুলের প্রাক্তন সম্পাদক মিজানুর মোল্লা স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ। স্কুলে গিয়েছিলেন কেন?মিজানুরের দাবি, “স্কুলেরই দুই কর্মী গিয়ে আমাকে ডেকে আনেন। দেওয়াল নোংরা হয়েছে দেখে আমি চুন লাগিয়ে দিতে বলি। এ জন্যই ছাত্রছাত্রী এবং গ্রামবাসীদের একাংশ আমাদের মারধর ও হেনস্থা করে। জখম হন আমার দুই সঙ্গীও। গ্রামবাসীদের একাংশ আমার দোকান ভেঙেছে। টাকা লুঠ করেছে।” এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন মিজানুরও।
পুলিশ ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সুব্রতবাবু বদলি হয়ে গিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের একটি স্কুলে। মঙ্গলবার তিনি শেষ স্কুল করেছেন। ওই দিনই অফিস-ঘরে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁকে বিদায়-সংবর্ধনা দেওয়া হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের দেওয়ালে পোস্টার মারে। বুধবার স্কুলে এসে পোস্টার ছেঁড়া দেখে তারা প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে। পোস্টার ছেঁড়ার পিছনে মিজানুর মোল্লা রয়েছেন, এই কথা কোনও ভাবে কানে আসায় পড়ুয়াদের একাংশ তাঁর ইমারতি সরঞ্জামের দোকানে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। মিজানুর কয়েক জনকে নিয়ে স্কুলে আসেন। এর পরেই গোলমাল বাধে। ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে যায় কয়েক জন ছাত্র। দ্বাদশ শ্রেণির রাইহান মোল্লা নামে এক ছাত্র গুরুতর জখম হওয়ায় তাকে স্থানীয় শাঁড়াপুল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে স্থানান্তরিত করানো হয় কলকাতার হাসপাতালে। রাইহানের আহত হওয়ার খবর পেয়ে তার গ্রাম চিতাড়ু থেকে গ্রামবাসীদের একাংশ স্কুলে চড়াও হয়। মিজানুর ও তাঁর দুই সঙ্গীকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ছাত্রদের পক্ষে গোলাম রব্বানি সর্দার ও তুষার বিশ্বাস বলে, “প্রাক্তন সম্পাদকের সঙ্গে স্কুলে আসা কয়েক জন হুমকি দিচ্ছিল। ওদের মারে আমাদের দুই সহপাঠী আহত হয়।” |