কপিল দেব |
মেরি কম মোটেও ব্রোঞ্জ জেতেনি। আমার মতে মেরি কম সোনা জিতে ফিরছে। জীবনে অনেক না-পাওয়ার মধ্য দিয়ে বড় হতে হয়েছে ওকে। সেই দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ অতিক্রম করে, দুই বাচ্চার মা হয়ে গিয়েও লন্ডন অলিম্পিকে সেমিফাইনালে যাওয়াটাই তো সোনা জয়ের সমান। কোনও সন্দেহ নেই গোটা দেশের অনেকেই হয়তো আরও ভাল কিছু ওর কাছ থেকে আশা করেছিলেন। তাঁরা হয়তো ভেতরে ভেতরে দুঃখ পেয়েছেন সেমিফাইনালে মেরিকে হারতে দেখে। তাঁদের দু’টো কথা বলব। এক) মেরির যাত্রাটার দিকে তাকান। দেখবেন সোনার মতোই উজ্জ্বল দেখাচ্ছে এই কৃতিত্বকে। দুই) যথেষ্ট লড়াই করে হেরেছে মেরি। তাই এই হার মোটেও অসম্মানের কিছু নয়। আমার মতে মেরি কম ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসে চিরশ্রেষ্ঠদের এক জন। |
|
আমি লড়াইটা দেখেছি। মেরি প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক ভাল ছিল। আমার দেখে ভাল লেগেছে যে, তা সত্ত্বেও ও লড়ে গিয়েছে। ব্রোঞ্জ দিয়ে মেরি কম-কে বিচার করলে ঠিক হবে না। মেরি কম ভারতীয় সামাজিক জীবনের একটা বিশাল স্টোরি। যেটা আমাকে আলোড়িত করেছে। আরও বেশি করে করেছে যেহেতু দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে উঠে এসেছে। এ রকম একটা জায়গা থেকে উঠে এসেছি বলে আমি জানি যে, পরিকাঠামো না থাকা অবস্থায় উঠে আসাটা কত কঠিন। আমার সবচেয়ে যেটা ভাল লাগছে যে, মেরি কমের এই খ্যাতিটা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটা বিশাল বিজ্ঞাপন হবে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে উঠে আসা লোক গোটা দেশের মুখে হাসি ফোটাল এটা একটা দারুণ ব্যাপার। আর যেটা হবে, মঙ্গলীয় মুখমণ্ডল হলেও সে যে ভারতীয় সেই ধারণাটা স্বীকৃতি পাবে। আমার ক্ষেত্রে বহু বার হয়েছে বিদেশে কাস্টমসে বলা হয়েছে তুমি নিশ্চয়ই ভারতীয় নয়। আশা করি মেরি কমের এই সাফল্যের পর আমার মতো মুখের অধিকারীদের আর ভারতীয় বলে দাবি জানাতে হবে না। |
ভাইচুং ভুটিয়া |
|
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় |
অসাধারণ কৃতিত্ব। সেমিফাইনালে হেরে গেলেও সেই কৃতিত্ব এতটুকু কমছে না। দুই বাচ্চার মা হয়েও এক জন অলিম্পিকের মতো ইভেন্টে পদক জিতছে এটাই তো ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসে একটা বিরল ঘটনা। মেরি কমের উঠে আসার পথটা দেখলে আরও বেশি করে মনে হবে শুধু অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জয়ের ঘটনা হিসেবে এটাকে দেখলে ঠিক হবে না। মেরি কম হচ্ছে অনন্ত লড়াই করে সর্বোচ্চ মঞ্চে যুদ্ধ জেতার কাহিনি। ভারতের মতো দেশ, যেখানে এমনিতেই পদকের সংখ্যা খুব কম সেখানে প্রত্যেকটা পদক জয়ই বিশেষ কৃতিত্বের। মেরির ক্ষেত্রে সেটা আরও বেশি, কারণ ওর মণিপুর থেকে উঠে আসা। কোনও দিন সে ভাবে বিশ্বমানের কোনও সুযোগ-সুবিধে ছাড়াই ওকে তৈরি হতে হয়েছে। বলা হয় বক্সারদের মানসিকতাটাই আসল। মেরি দেখিয়ে দিয়েছে, ও কী প্রবল মানসিক শক্তির অধিকারী। না হলে মণিপুর থেকে এসে অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জিততে পারত না। |
|