পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যে ফুল চাষে দ্বিতীয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। অথচ, জেলায় ফুল সংরক্ষণের জন্য একটিও হিমঘর নেই। বছর ছয়েক আগে পাঁশকুড়ায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে একটি হিমঘর তৈরি হয়েছিল। কিন্তু নিম্ন মানের সেই হিমঘরে ফুল তাজা থাকত না বলে বন্ধ হয়ে যায় ছ’মাসের মধ্যেই। পরিকাঠামোর উন্নতি করে সেই হিমঘর চালুর জন্য আর উদ্যোগী হয়নি প্রশাসন। ফলে জেলায় ফুল সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যায় পড়েছেন ফুলচাষিরা।
অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা রাজ্যে ফুল চাষে প্রথম স্থানে থাকলেও জেলা ভাগের পরে পূর্ব মেদিনীপুর দ্বিতীয় স্থানে চলে গিয়েছে, নদিয়ার পরে। মূলত জেলার পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, শহিদ মাতঙ্গিনী ও তমলুক ব্লকে ফুল চাষ হয়। প্রতি দিন ঝুরো ফুল যা ওজন দরে বিক্রি হয়, তার পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৩৪৫ মেট্রিক টন। ‘কাট ফ্লাওয়ার’ সংখ্যায় বিক্রি হয় ৫০ কোটিরও বেশি।
ফুলচাষিরা জানান, বরাবরই জেলায় হিমঘরের অভাব রয়েছে। বারবার আবেদনও জানালেও কোনও ফল হয়নি। সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতিরআন্দোলনের জেরে গত ২০০১ সালে তৎকালীন উদ্যান পালন দফতর মন্ত্রী আবদুল রেজ্জাক মোল্লা পাঁশকুড়ায় ১.৭১ একর জমিতে চার কোটি টাকার প্রস্তাবিত ফুল বাজার ও হিমঘর তৈরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু পাঁচ বছরেও সেই কাজ হয়নি। শেষে ২০০৬ সালে এক কোটি টাকা ব্যয়ে ফুল বাজার এবং হিমঘর তৈরি করে উদ্বোধন করেন তৎকালীন উদ্যানপালন মন্ত্রী শৈলেন সরকার। বাজার পরিচালনার জন্য একটি কমিটিও গঠন করেন তিনি।
স্থানীয় মহপুর গ্রামের গণেশ মাইতি, ভবানীপুর গ্রামের শশাঙ্ক জানা, নারান্দা গ্রামের নিমাই বারি, জানাবাড় গ্রামের অসিত হাইতদের অভিযোগ, “হিমঘরটি এতই নিম্নমানের ছিল যে সেখানে ফুল তাজা থাকত না। বাজারে সেই ফুলের দাম না পাওয়ায় হিমঘরে আর ফুল রাখতেন না কেউ। ফলে ছয় মাসের মধ্যেই হিমঘরটি অচল হয়ে যায়। পরে পুরোপুরি তালা পড়ে সেখানে।” সমিতির অভিযোগ, হিমঘরটির পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বারবার রাজ্য সরকারকে জানালেও সুরাহা হয়নি। রাজ্যে সরকার পরিবতর্নের পর নতুন সরকারের উদ্যান পালন দফতর মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল ওই ‘অচল’ হিমঘর পরিদর্শনে আসেন। চাষিরা উন্নত মানের হিমঘর নির্মাণের জন্য তাঁর কাছে আবেদন জানান। পাঁশকুড়া ফুল বাজারটিকে বর্তমানের আড়তদার বাজারের বদলে খোলা বাজারে পরিণত করার দাবিও জানান তাঁরা। উজ্জ্বলবাবু আগের পরিচালন কমিটি ভেঙে নতুন পরিচালন কমিটি গঠনের কথা জানান ও সেই কমিটিই খোলা বাজারের সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়ে যান। মন্ত্রীর আশ্বাস পেলেও উন্নত মানের হিমঘর কবে তৈরি হবে, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন জেলার ফুলচাষিরা। সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নারায়ণ নায়ক বলেন, “হিমঘরের অভাবে ফুলচাষিরা বিশেষ দিনের জন্য যেমন ফুল সংরক্ষণ করে রাখতে পারছেন না, তেমনই দিনের দিন কম দামে ফুল বেচে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।” |