নৃত্যগীত আলেখ্য শুরু হয়েছে আগেই। কবাডি খেলার সূত্রেও কারাপ্রাচীরের বাইরে এসেছেন ওঁরা। এ বার রাজ্যের জেলগুলিতে বন্দিদের নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ফুটবল টিম। আয়োজিত হতে চলেছে পুরোদস্তুর একটি ফুটবল লিগ।
রাজ্যের ছ’টি জেল সার্কেলকে নিয়ে আগামী মাসেই শুরু হবে এই অভিনব ফুটবল প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় জেলের বন্দিরা ছাড়াও অংশ নেবেন সুব্রত ভট্টাচার্য, শ্যাম থাপার মতো প্রাক্তন ফুটবল তারকারা। জেল দফতর সূত্রের খবর, আলিপুর, দমদম, প্রেসিডেন্সি, বহরমপুর, মেদিনীপুর এবং জলপাইগুড়ি সার্কেলকে নিয়ে মোট ছ’টি ফুটবল টিম তৈরি করা হচ্ছে। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে এই ছ’টি টিমকে নিয়ে শুরু হচ্ছে ফুটবল লিগ। প্রতিটি দল নিজেদের মধ্যে দু’বার মুখোমুখি হবে। লিগ টেবিলের প্রথম দু’টি টিম যাবে নক-আউট পর্যায়ে। ওই দু’টি দলের সঙ্গে নক-আউট পর্যায়ে যুক্ত হবে আরও দু’টি দল। সেখানেই থাকবেন তারকারা।
জেল দফতরের এক কর্তা বলেন, “প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, ওই দু’টি দল তৈরি হবে প্রাক্তন ফুটবল তারকাদের নিয়ে। ইতিমধ্যেই আমরা এ ব্যাপারে সুব্রত ভট্টাচার্য, শ্যাম থাপার মতো তারকাদের সঙ্গে কথা বলেছি।” জেলের দু’টি এবং প্রাক্তন তারকাদের দু’টি দলের মধ্যেই হবে সেমিফাইনাল। জয়ী দু’টি দল ফাইনাল খেলবে। ওই জেল-কর্তা জানিয়েছেন, টুর্নামেন্টের সবগুলি ম্যাচই জেলের ঘেরাটোপের বাইরে করার কথা ভাবা হয়েছে। তার মধ্যে ময়দানের বড় ক্লাবগুলির মাঠও রয়েছে।
সাংস্কৃতিক ‘থেরাপি’র মাধ্যমে বন্দিদের সমাজের মূলস্রোতের অংশীদার করার চেষ্টা এ রাজ্যে প্রথম শুরু করেন প্রাক্তন এডিজি (কারা) বংশীধর শর্মা। ২০০৫ সালে তাঁর আমন্ত্রণেই জেলের বন্দিদের নিয়ে ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ গীতিআলেখ্য তৈরি করেন নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়। আলেখ্যটি প্রভূত জনপ্রিয়তা পায়। সম্প্রতি তার প্রধান অভিনেতা নাইজেল আকারাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি সিনেমাও। অলকানন্দার ভূমিকায় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত অভিনীত সেই ছবি ‘মুক্তধারা’ গত সপ্তাহেই মুক্তি পেয়েছে। জেলের কয়েদিদের নিয়ে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে কবাডি টিম এবং সংশোধনাগার আবাসিক স্পোর্টস ক্লাবও। কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ কবাডি অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতাতেও অংশ নিচ্ছে বন্দিদের ওই দলটি। বংশীধরবাবুর কথায়, “কালচার থেরাপির মাধ্যমে বন্দিদের প্রতিভাকে তুলে ধরা যায়। সেটাকে বাইরের জগতে হাজির করলে, বন্দিরা সাধারণ মানুষের হাততালি পেলে, তাঁদের আত্মসম্মানবোধ এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে।”
সেই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই এ বারের সংযোজন ফুটবল। আইজি (কারা) রণবীর কুমার বলেন, “বাঙালিদের মধ্যে ফুটবল সব সময়েই খুব জনপ্রিয়। সে কারণেই ফুটবলকে বেছে নেওয়া হয়েছে।” এর আগে জেলের মধ্যেই বন্দিদের নিয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতা হত। এ বার কবাডির মতো ফুটবলকেও জেলের ঘেরাটোপের বাইরে নিয়ে আসা হচ্ছে। রণবীর জানান, ফুটবল প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেলে ভবিষ্যতে কবাডির মতো জেলের নিজস্ব ফুটবল টিমও তৈরি করা হবে। বিদেশি বন্দি বিশেষত, বাংলাদেশি বন্দিদের নিয়ে পৃথক কোনও দল তৈরি করা যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। তবে বিচারাধীন বন্দিদের আপাতত বাদ দেওয়ারই সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও রণবীর বলেন, “কোনও বিচারাধীন বন্দি তেমন ইচ্ছুক হলে অবশ্য আমরা আদালতের বিশেষ অনুমতি নিয়ে তাঁরও খেলার ব্যবস্থা করতে পারি।” |