নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
দু’টি নতুন লোধা আশ্রম হস্টেল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। একটি শালবনি ব্লকের পাথরকুমকুমিতে, অন্যটি সবং ব্লকের দেভোগ-এ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আদিবাসী মঙ্গল কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঠিক হয়েছে, প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ চেয়ে রাজ্য দফতরের কাছে আবেদন করবে জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। অর্থ বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু হবে।
লোধা উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন সময়ে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু অনেক সময় তা বাস্তবায়িত হয় না। এর ফলে উন্নয়নের কোটি কোটি টাকা এসেও পড়ে থাকে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে লোধা সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেও। আদিবাসীদের উন্নয়নের কাজ দেখভাল করার জন্য জেলায় আদিবাসী মঙ্গল কমিটি রয়েছে। এই কমিটি সভাপতি পদে রয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। সচিব পদে রয়েছেন জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের আধিকারিক শান্তনু দাস। মূলত আদিবাসীদের উন্নয়নে কী কী করণীয়, কোন প্রকল্প রূপায়ন করা জরুরি, তাই ঠিক করে এই কমিটি। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জুলাই মাসে মঙ্গল কমিটির সভায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ অর্থ পড়ে থাকায় এ দিনের সভায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন কয়েকজন সদস্য। সভায় উপস্থিত সাংসদ পুলিনবিহারী বাস্কের বক্তব্য ছিল, “আদিম জনজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত লোধা মানুষের কোনও কাজ ফেলে রাখা চলবে না। গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ তৈরির টাকা দফতরে পড়ে রয়েছে। গৃহ তৈরি করা হচ্ছে না। একই ভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা ব্লক স্তরে পড়ে রয়েছে। কাজ হচ্ছে না।” কেশপুরের বিধায়ক রামেশ্বর দোলুইয়ের অভিযোগ, ‘‘গত ২০১১-১২ আর্থিক বছরে লোধা উন্নয়নের জন্য কোনও অর্থ জেলায় বরাদ্দ হয়নি। লোধা উন্নয়নের জন্য সরকার অর্থ দিয়ে থাকে। কিন্তু সঠিক সময় দফতর তা খরচের শংসাপত্র পাঠাতে পারে না। তাই লোধা উন্নয়নে অর্থ পাওয়া যায় না।” প্রসঙ্গত, সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না-পারার জন্য ইতিমধ্যে জেলা পরিষদের কাছ থেকে অর্থ ফেরত নিয়েছে দফতর। এক নির্দেশের প্রেক্ষিতে জেলা পরিষদ ওই দফতরকে ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েও দিয়েছে।
এ দিন মঙ্গল কমিটির সভায় জেলায় সব মিলিয়ে ১১০টি লোধা শিশু সংরক্ষণাগার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭৮টির জন্য অর্থ মঞ্জুর হয়েছে। এ কাজ দ্রুত শেষ করে বাকি ৩২টির জন্য সরকারের কাছে অর্থ চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। শালবনি ব্লকের পাথরকুমকুমি ও সবং ব্লকের দেভোগ-এ ২টি নতুন লোধা আশ্রম হস্টেল তৈরি হবে। নতুন লোধা বাড়ি তৈরির জন্য সরকারের কাছে অর্থ চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। লোধা শিশু রক্ষণাগারের জন্য ১১০টি নলকূপ তৈরির প্রস্তাব পাঠানো হবে। লোধাদের স্বাস্থ্য পরিবেষা দেওয়ার জন্য ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় রয়েছে। তাই এ জন্যও প্রস্তাব পাঠানো হবে। পাশাপাশি, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর থেকে বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতিকে নানা প্রকল্পে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তার বিস্তারিত রিপোর্ট আগামী সভায় পেশ করা হবে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা মঙ্গল কমিটির সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “বেশ কয়েকটি প্রকল্পের জন্য সরকারের কাছে অর্থ চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থ মঞ্জুর হলেই ওই সব প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।” এখন সিদ্ধান্ত মতো এত শত প্রকল্প বাস্তবে রূপায়িত হয় কি না, সেটাই দেখার। |