নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
এমনিতেই কর্মী-সঙ্কট। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় রাজ্য সরকার অনুমোদিত সরকারি কর্মীর সংখ্যা যেখানে ৩৫ হাজার ৪১৫ জন, আছেন মাত্রই ২১ হাজার ৭৯৭ জন। শূন্যপদের সংখ্যা ১৩ হাজার ৬১৮! পরিস্থিতি দেখে কয়েকটি দফতরে অবসরপ্রাপ্ত কর্মী নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। রাজ্যের ১৮টি জেলায় এই রকম নির্দেশ পৌঁছেছে। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরে অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগের কাজও অত্যন্ত ঢিমেতালে চলছে বলে অভিযোগ। ফলে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। একটি কাজের জন্য বারে বারে তাঁদের এক দফতরে আসতে হচ্ছে। সরকারি দফতরে বহু পদ শূন্য থাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে কর্মী-সংগঠনগুলোর মধ্যেও। শুধু বামপন্থী সংগঠনগুলো নয়, ক্ষুব্ধ জাতীয়তাবাদী একাধিক সংগঠনও। তাদের বক্তব্য, যে দফতরে অর্ধেক পদ শূন্য, সেখানে কাজ করতে তো সমস্যা হবেই।
এই জেলায় অবসরপ্রাপ্ত কর্মী-নিয়োগ হচ্ছে না কেন? জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত’র বক্তব্য, “প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, নিয়োগের আগে কিছু প্রক্রিয়া থাকে। একাধিক দফতরে সেই প্রক্রিয়া চলছে। পরিস্থিতি দেখে কিন্তু প্রশাসনকেই দুষছে বিভিন্ন কর্মী-সংগঠন। স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের (পশ্চিমবঙ্গ) জেলা সম্পাদক সুব্রত সরকার বলেন, “আমরা নতুন নিয়োগের পক্ষে। তবে, অনেক পদ শূন্য থাকায় বিভিন্ন দফতরে সমস্যা হচ্ছে। সরকার যখন কয়েকটি ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগের পরিকল্পনা করেছে, প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠিয়েছে, আপাতত তাই হোক। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও নিয়োগের গতি শ্লথ।” অবসরপ্রাপ্তদের নতুন করে নিয়োগের বিরোধিতা করছে বামপন্থী কো-অর্ডিনেশন কমিটি। কমিটির জেলা সম্পাদক গঙ্গাধর বর্মন বলেন, “বেকার যুবক-যুবতীদেরই শূন্যপদে নিয়োগ করা হোক। তা না-করে অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগের পরিকল্পনা করেছে সরকার।”
কর্মী-সঙ্কট এড়াতে ঠিক কী নির্দেশ রয়েছে রাজ্য সরকারের? গত বছরের ডিসেম্বরেই এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা জেলায় জেলায় পৌঁছয়। বলা হয়, যে জেলায় ১৫টির বেশি ব্লক রয়েছে সেখানে ২০০ জন এবং যে জেলায় ১৫টির কম ব্লক রয়েছে- সেখানে ১২০ জন করে অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা যাবে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৯টি ব্লক। সরকারি নির্দেশ মতো এখানে কালেক্টরেটের বিভিন্ন দফতরে ১০০ জন ও ভূমি-সংস্কার দফতরে ১০০ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী নিয়োগ করা যাবে। এ ছাড়া পঞ্চায়েত, কৃষি প্রভৃতি দফতরেও শূন্যপদে কিছু কর্মী নিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ডিসেম্বরে নির্দেশ এলেও কেন এখনও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন কর্মী-সংগঠন। জেলায় শূন্যপদের সংখ্যা এমনিতেই বেশি। ফলে কাজ করতে সমস্যা হয়। ২৯টি ব্লকে ২ হাজার ৭৯১টি পদের অনুমোদন রয়েছে সরকারের। কিন্তু সেখানেও শূন্যপদের সংখ্যা ১ হাজার ১৯৬টি। অর্থাৎ, প্রায় অর্ধেক।
কৃষি দফতরে রাজ্য সরকার অনুমোদিত পদ ২ হাজার ৮৮৭টি। এর মধ্যে শূন্যপদ ১ হাজার ৬৬৭। ৬৬ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টরের মধ্যে ১০টি পদই শূন্য। ৬ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের মধ্যে ২টি পদ শূন্য। ৪৪৩ জন কৃষি-প্রযুক্তি সহায়কের মধ্যে ২০৯টি পদই শূন্য। প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগে ৯২৩টি পদের মধ্যে শূন্যপদের সংখ্যা ৪২৪। স্বাস্থ্য দফতরের ৭ হাজার ৮৪৭টি পদের মধ্যে ২ হাজার ৮৪৭টি পদই শূন্য। পূর্ত দফতরে ১ হাজার ৭৫৭টি পদের মধ্যে ৭৫৩টি পদ শূন্য। এই সব পদ পূরণ হলেও নতুন করে পদ-সৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করে কর্মী-সংগঠনগুলো। না-হলে কাজের ‘চাপ’ বাড়বে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় সব দফতরেই কর্মী-সঙ্কট রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশ মতো অবসরপ্রাপ্ত কর্মী-নিয়োগের ক্ষেত্রেও জেলা প্রশাসন গড়িমসি করলে সমস্যা জটিল হবে বলে মনে করছে বিভিন্ন কর্মী-সংগঠন। |