নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা-প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদ শূন্য। এক-এক জন অফিসারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। ফলে, কাজের গতি কমছে। তাতে উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা। সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেও। অফিসে গিয়েও দেখা মিলছে না আধিকারিকদের। এই পরিস্থিতিতে জেলা-প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দ্রুত শূন্য-পদ পূরণের আর্জি জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কাজ হয়নি। ফলে, প্রায় দু’মাস হতে চলল পদগুলি শূন্য হয়েই পড়ে রয়েছে। এর ফলে যে কাজের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে, তা মনে করছেন মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান মৃগেন্দ্রনাথ মাইতিও। তিনি বলেন, “যাতে দ্রুত আধিকারিক নিয়োগের ব্যাপারে সরকার ব্যবস্থা নেয় সে জন্য আমরাও চেষ্টা করছি। না হলে একই ব্যক্তির উপরে চাপ বাড়ছে। এতে কাজের গতিও কিছুটা কমছে।”
শূন্য রয়েছে দুই অতিরিক্ত জেলাশাসকের পদ অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) ও অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত)। শূন্য জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রোজেক্ট ডিরেক্টরের পদও। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) আবার মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদেরও সিইও হন।
প্রায় ২ মাস হতে চলল অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) উত্তম পাত্র বদলি হয়ে গিয়েছেন। তার পর অতিরিক্ত দায়িত্ব বর্তেছিল অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অরিন্দম দত্তের উপরে। তিনিই আবার জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রোজেক্ট ডিরেক্টরেরও দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। কিছু দিন আগে বদলি হয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শুভাঞ্জন দাসও। সেই পদেরও অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় অরিন্দমবাবুকেই। এক সঙ্গে এতগুলি দায়িত্ব কী ভাবে সামলাবেন তিনি? তাই প্রোজেক্ট ডিরেক্টরের পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরিবর্তে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় অনগ্রসর শ্রেণি-কল্যাণ দফতরের আধিকারিক শান্তনু দাসকে। অতিরিক্ত জেলাশাসক হিসাবে রজতকান্তি সাইনি যোগ দেন জেলায়। তারপর আরও একটি অতিরিক্ত জেলাশাসকের (পঞ্চায়েত) পদ শূন্য হয়। তখন ফের সেই পদে অরিন্দমবাবুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে একই ব্যক্তি তিন অতিরিক্ত জেলাশাসকের দায়িত্বে। তার বাইরে রয়েছে মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের সিইও-র দায়িত্বও।
একই ব্যক্তির উপরে এতগুলি দায়িত্ব থাকায় কমছে কাজের গতিও। এ ভাবে আরও কিছু দিন চললে জেলার উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ারই আশঙ্কা। কারণ, অতিরিক্ত জেলাশাসকের পদে থাকা এক জন ব্যক্তির পক্ষে দিনে একাধিক বৈঠক করা, ফাইল সই করা, পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও একাধিক অফিসে বসারও সুযোগ থাকে না। অথচ, জেলার দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ সমস্যা নিয়ে দেখা করতে আসেন। তাঁদের ফিরে যেতে হয়। এমনিতেই পশ্চিম মেদিনীপুর ‘পিছিয়ে পড়া’ জেলা। যে জেলার জন্য একগুচ্ছ বিশেষ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করেছে। তা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরির উপরেও জোর দিয়েছে। তার জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ দেবে বলেও জানিয়েছে। অন্য দিকে, রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হলেও জেলার পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদ এখনও সিপিএমের। ফলে পঞ্চায়েত-স্তরে একটা ডামাডোল ব্যবস্থা চলছে। পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই একমাত্র উন্নয়ন প্রত্যন্ত গ্রামে পৌঁছতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সেই দফতরের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসকই নেই! |