বাতিল হয়ে গেল বাম বিধায়কের তফসিলি জাতিভুক্তি সংক্রান্ত সার্টিফিকেট।
বামফ্রন্ট তথা আরএসপি বিধায়ক পার্থ দাসের এই সার্টিফিকেট বাতিল হওয়ায় তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত আসন থেকে জিতে আসা এই বিধায়কের বিধায়ক পদই বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ত্রিপুরা বিধানসভার স্পিকারের কাছে তাঁদের রিপোর্টটি পাঠিয়ে দিয়েছেন। পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘এখনও পর্যন্ত আমাকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়নি।’’ যদিও রাজ্যের প্রবীণ সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা, তথ্য-সংস্কৃতি এবং তফসিলি জাতি-উপজাতি কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী অনিল সরকার জানিয়েছেন, ‘‘রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের তদন্তানুসারে জানা গিয়েছে যে, বিধায়ক পার্থ দাসের তফসিলি প্রশংসাপত্রটি গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি পার্থকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।’” এসসি স্টেট লেভেল স্ক্রুটিনি কমিটির অধিকর্তা নিরঞ্জন রায়বর্মণ জানিয়েছেন, ‘‘বিধায়ক পার্থ দাসকে ডাকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। দু’-এক দিনের মধ্যেই হয়তো তিনি চিঠি পেয়ে যাবেন।’’ ‘ভুয়ো সার্টিফিকেট’ দিয়ে বামফ্রন্ট বিধায়ক ভোট লড়ায় স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে পড়েছে ত্রিপুরার ক্ষমতাসীন বাম নেতৃত্ব। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধরের কথায়, ‘‘বামপন্থী দলের কোনও প্রতিনিধির কাছ থেকে এ জিনিস কাঙ্ক্ষিত নয়।’’
রাজ্যের ষষ্ঠ বামফ্রন্ট বিধানসভায় দক্ষিণ ত্রিপুরার শালগড়া (সংরক্ষিত) বিধানসভা কেন্দ্রের আরএসপি বিধায়ক পার্থ দাস। মন্ত্রী অনিল সরকার বিধানসভায় জানিয়েছিলেন, রাজ্যের দুই বিধায়কের ‘এসসি সার্টিফিকেট’ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। তদন্তও করছে সংশ্লিষ্ট দফতর। এই দুই বিধায়ক হলেন আরএসপি-র পার্থ দাস ও উত্তর পানিসাগর কেন্দ্রের সিপিএম বিধায়ক সুবোধ দাস। অভিযোগ ছিল, ভোটের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় তাঁরা নিজেদের তফসিলি জাতিভুক্ত বলে যে সার্টিফিকেট ও হলফনামা জমা দিয়েছেন তা ‘ভুয়ো’। এরপরেই বিরোধীদের চাপে দু’টি সার্টিফিকেটই খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দেয় রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার। তফসিলি জাতি-উপজাতি কল্যাণ দফতরের সচিব শান্তনু দাসের নির্দেশে ‘এসসি স্টেট লেভেল স্ক্রুটিনি কমিটি তদন্ত শুরু করে। পার্থবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে কমিটি তাদের রিপোর্টে বলেছে, পার্থবাবুর এসসি সার্টিফিকেটটি ‘গ্রহণযোগ্য নয়’। স্ক্রুটিনি কমিটি অধিকর্তা নিরঞ্জন রায়বর্মণ জানিয়েছেন, “চিঠি দিয়ে তাঁদের অভিমত রাজ্য বিধানসভার সচিব, জেলা প্রশাসন-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” পার্থ দাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শেষ হলেও বিধায়ক সুবোধ দাসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। পরবর্তী ভোটের আর মাত্র ছ’মাস বাকি। এই প্রাক্-নির্বাচনী সময়ে এমন এক খবরে স্বভাবতই উজ্জীবিত প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাজ্যের বিরোধী দল কংগ্রেসের অভিযোগ, জাল তফসিলি সার্টিফিকেট দিয়ে ২০০৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পার্থ বাবু প্রার্থী হন। কংগ্রেস মুখপাত্র রতন চক্রবর্তী অবিলম্বে পার্থবাবুর বিধায়ক পদ খারিজ করার দাবি তুলেছেন। ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সুদীপ রায়বর্মণ বলেন, ‘পার্থবাবুর বিধায়ক পদ খারিজ করতে হবে। এ ছাড়াও, বিধায়ক হওয়ার সুবাদে তিনি যে সব সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, সেগুলি সরকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কংগ্রেস দাবি জানাবে। রাজ্য সরকার যেন আরএসপি বিধায়কের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন, সে দাবিও করা হবে।’’ পার্থবাবুর কড়া শাস্তি চান কংগ্রেস নেতৃত্ব। মন্ত্রী অনিল সরকার জানিয়েছেন, ‘‘পার্থ দাসের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে যা যা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, রাজ্য সরকার তা করবে।” |