নামনি অসমে গোষ্ঠীসংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংসদে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়ল কেন্দ্র। এই সংঘর্ষের জন্য অনুপ্রবেশকেই প্রথম থেকে দায়ী করছে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার। আজও সেই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে এই সংঘর্ষকে ইউপিএ সরকারের ‘বৃহত্তম ব্যথর্তা’ বলে অভিহিত করেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। তাঁর কথায়, “একে দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হিসেবে দেখলে চলবে না। এটা ভারতবাসী বনাম সীমান্তের ওপার থেকে অনুপ্রবেশকারীদের সমস্যা।”
আজই আবার কোকরাঝাড়-সহ তিনটি জেলা থেকে চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এই নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৭। এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে তৈরি রাখার কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। লোকসভায় বিজেপির আনা মুলতুবি প্রস্তাবের উপর বিতর্কের সময় তিনি বলেন, প্রয়োজনে আবার সেনাবাহিনী নামানো হবে। সিবিআই-এর এক অতিরিক্ত অধিকর্তা কালই সেখানে যাচ্ছেন বলেও তিনি জানান। রাজ্যের দাবি মেনে ওই সংঘর্ষের ঘটনার সিবিআই তদন্ত হবে। আর অনুপ্রবেশ প্রশ্নে আডবাণী এ দিন যে ভাবে আক্রমণ শানিয়েছেন, তার জবাবে কংগ্রেসের বক্তব্য, দল বরাবরই বিদেশিদের অবৈধ ভাবে থাকার বিপক্ষে। কিন্তু তারা বিদেশি চিহ্নিত করার নামে মানুষকে হেনস্থা করার বিপক্ষে।
এ দিন লোকসভায় এই প্রসঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে তুলোধোনা করেন আডবাণী। তাঁর কথায়, “রাজ্যে জনসংখ্যা প্রায় তিন কোটি। তার মধ্যে ৩ থেকে ৪ লক্ষ লোক ঘরছাড়া। এটা অভূতপূর্ব ঘটনা।” বছরের পর বছর ধরে চলা অনুপ্রবেশকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করে তাঁর বক্তব্য, “শুধু রাজ্য সরকার এই সমস্যার সমাধান করতে পারে না। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা হয় না। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটা বড় সঙ্কট।” এর আগে অনুপ্রবেশ না ঠেকানোর জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। অবৈধ বিদেশি চিহ্নিত করার জন্য শীর্ষ আদালত নির্দেশও দিয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্র তা পালন করেনি বলে অভিযোগ করে আডবাণীর মন্তব্য, “অন্য কোনও দেশ এটা সহ্য করত না। এটা ভয়াবহ ঘটনা। অবাধ অবৈধ অনুপ্রবেশ আবার ভারতভাগ ঘটাতে পারে।”
অসমে অনুপ্রবেশকারীদের হিসেব দিতে গিয়ে অবশ্য আডবাণী কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েন। ২০০০ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীপ্রকাশ জয়সওয়ালের বিবৃতি উদ্ধৃত করে আডবাণী বলেন, অসমে ১ কোটি ২০ লক্ষ অনুপ্রবেশকারী আছেন। তাদের মধ্যে ৫০ লক্ষ বাংলাদেশি। পরে তিনি বলেন, “হিসেবটি তাড়াহুড়ো করে করা। ফলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অসমে অনুপ্রবেশকারীদের ঠিক হিসেব দিন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বললে সবচেয়ে ভাল হয়।” সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী পবন সিংহ ঘাটোয়ার আবার আডবাণীকে কটাক্ষ করে বলেন, “এটা দুঃখের যে আডবাণী শরণার্থী বা ত্রাণ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার পথে না গিয়ে অনুপ্রবেশ নিয়ে হইচই করলেন।” পাঁচ ঘণ্টা বিতর্কের পরে মুলতুবি প্রস্তাবটি ধ্বনিভোটে পরাজিত হয়।
রাজ্যসভাতেও এই বিষয়ে সরকার ও বিরোধীপক্ষের উত্তপ্ত তর্ক-বিতর্ক হয়। বিতর্কের সূচনা করে বিজেপির বলবীর পুঞ্জ কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়ার অভিযোগ আনেন। তাঁর দাবি, বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের ‘রাষ্ট্রহীন’ ঘোষণা করা হোক। তাদের রাজ্যে সম্পত্তি কেনা নিষিদ্ধ করা হোক। তারা যেন ভোট দিতে না পারে। তাঁকে কংগ্রেসের ভুবনেশ্বর কলিতার পাল্টা প্রশ্ন, “আপনারা কী চান? লোকের মধ্যে ভেদাভেদ করতে না তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে? বিপদের সময়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা উচিত নয়।” সামগ্রিক ভাবে বিরোধীরা প্রশ্ন তোলেন, ১৯৮৫ সালে অসম চুক্তি সইয়ের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অধিবাসীদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু কংগ্রেস তা বছরের পর বছর করেনি কেন? অসম গণ পরিষদের (অগপ) সাংসদ বীরেন্দ্রপ্রসাদ বৈশ্যও অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের আন্তরিকতা এবং বাস্তববাদী নীতির অভাবের কারণেই রাজ্যে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অসম গণ পরিষদের দিকে পাল্টা আঙুল তোলেন কলিতা। তাঁর বক্তব্য, অগপ ক্ষমতায় থাকাকালীন অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠায়নি কেন? সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সংঘর্ষ যখন চরমে, তখন ৩৪০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল। তাতে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার শরণার্থী ছিলেন। ৬ অগস্টের হিসেব, ২৪৫টি ত্রাণ শিবির রয়েছে। তাতে ৩ লক্ষ ৬৪ হাজার লোক রয়েছেন। ৯৫টি শিবির বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। |