কে বলে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তাঁর অখণ্ড অবসর? ‘চাণক্য’ যে ফিরে গেলেন তাঁর পুরনো পেশা সেই মাস্টারিতেই! কোথায় যেন মিলে গেল তাঁর পুরনো কর্মক্ষেত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিদ্যানগর কলেজ আর রাইসিনা হিলসের পেল্লায় প্রাসাদ।
আজ আবার রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ালেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। পড়ালেন ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস, সংবিধানের গোড়ার কথা, সংসদের খুঁটিনাটি। সামনে তখন বসা এক মনোযোগী ছাত্র। তিনিও মাস্টার ‘মাস্টার ব্লাস্টার’। এক ছাত্রীও হাজির যাঁর গভীর ‘রেখাপাতে’ কম চঞ্চল হয়নি রাজ্যসভার অন্দর।
শপথটা আগেই হয়ে গিয়েছিল। আজ বাদল অধিবেশনের প্রথম
দিনে সাংসদ হিসেবে ইনিংস শুরু করলেন রাজ্যসভার দুই মনোনীত সদস্য সচিন তেন্ডুলকর এবং ভানুরেখা গণেশন। প্রশ্নোত্তর পর্ব, জিরো আওয়ার দু’দফায় সভায় ছিলেন দুই নক্ষত্র। দু’বারই হট্টগোলে সভা মুলতুবি। তার পর সংসদ থেকে বেরিয়ে সচিন-রেখা রওনা হলেন রাষ্ট্রপতি ভবন। |
সাক্ষাতের দিনক্ষণ স্বাভাবিক ভাবেই আগে থেকে ঠিক ছিল। কিন্তু বাইশ গজ আর রুপোলি পর্দার দুই কিংবদন্তির সঙ্গে দেশের রাষ্ট্রপতির আলাপচারিতাটা সাধারণত যেমন হওয়ার কথা, এ দিন ঠিক তেমন হল না। বরং সে আলাপচারিতায় ব্ল্যাকবোর্ড-চক ছাড়া ক্লাসরুম নেমে এল মসৃণ গতিতে। রাষ্ট্রপতি
তখন ভূমিকা পাল্টে ফেলেছেন। নতুন দুই সাংসদকে তিনি সংসদের কার্যপ্রণালী যেমন বোঝাচ্ছেন, তেমনই প্রসঙ্গ টানছেন সংবিধানের কিছু বিশেষ বিশেষ অংশের। ঘুরে চলেছে সময়ের কাঁটা।
এ হেন ‘ক্লাস’ থেকে বেরিয়ে কী বললেন পড়ুয়ারা? দৃশ্যতই তৃপ্ত সচিনের প্রতিক্রিয়া “গোটা ব্যাপারটাই ভীষণ উপভোগ্য আর শিক্ষণীয়।” রমাকান্ত আচরেকরের পর প্রণববাবুই তো আজ হয়ে উঠলেন আক্ষরিক অর্থেই সচিন তেন্ডুলকরের ‘স্যার’! আর রেখা? এই সাক্ষাৎপর্বকে তিনি এক কথায় ব্যাখ্যা করেছেন ‘আশীর্বাদ’ বলে!
আসলে সমাপতনটা হয়তো ভবিতব্যই ছিল। দীর্ঘ কয়েক দশকের বর্ণময় সাংসদ জীবন যাঁর, এই সে দিন পর্যন্তও যিনি ছিলেন লোকসভার নেতা, ছিলেন কয়েক গুচ্ছ মন্ত্রিগোষ্ঠীর ‘মাথা’ এবং সর্বোপরি ছিলেন মনমোহন সিংহ তথা সনিয়া গাঁধীর ‘মুশকিল আসান’, সেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছেই সংসদীয় জীবনের কার্যত ‘হাতেখড়ি’ পেলেন ভারতের জনপ্রিয়তম দুই তারকা! এই ‘সুবিচার’টা হয়তো তাঁদের প্রাপ্য ছিল।
কে লেখে এমন চিত্রনাট্য? কে গড়ে এমন ‘রণকৌশল’? আর কে-ই বা বলে, ‘চাণক্য’রা ছুটি পান? |