ব্লগের অস্বস্তি কাটাতে গিয়ে দলেরই অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তুললেন বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী।
ব্লগে অ-বিজেপি (এবং অ-কংগ্রেসি) প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাবনার কথা বলে গত তিন দিন ধরে দল-সঙ্ঘ-শরিকদের রোষ সামলাতে হচ্ছে আডবাণীকে। আজ সংসদে বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনে অসমে হিংসা নিয়ে সরকার পক্ষকে প্রবল আক্রমণ করে সম্ভবত সেই ‘দোষ’ স্খালন করতে চেয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু ফল হল উল্টো। তাঁর কথায় এমন বিতর্ক শুরু হল যে অসম প্রসঙ্গ চলে গেল পিছনে।
বিজেপি চেয়েছিল, অসমে হিংসা নিয়ে সরকারকে সর্বশক্তি দিয়ে আক্রমণ করা হবে। সেটা যেমন সংসদের ভিতরে, তেমনই বাইরেও। তাই আজ সকাল থেকে বৃষ্টি মাথায় করে নিতিন গডকড়ীর নেতৃত্বে যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসেন বিজেপি নেতারা। অন্য দিকে, সংসদে এই নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনে দল। সেই নিয়ে বলতে গিয়ে অসম থেকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত সাংসদ তথা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে আক্রমণ শুরু করেন। তার পরেই ইউপিএ সরকারকে ‘অবৈধ’ বলে বসেন তিনি। |
আডবাণীর এই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে সনিয়া গাঁধী দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি উত্তেজিত ভাবে বলতে শুরু করেন,‘কথা ফিরিয়ে নিন, কথা ফিরিয়ে নিন’। তাঁর নির্দেশে কপিল সিব্বল বা সজ্জন কুমারেরর মতো কংগ্রেস মন্ত্রীরা তো বটেই, সরব হন ইউপিএ-র শরিক দলের নেতারাও। পরে প্রধানমন্ত্রীও সাংবাদিকদের জানান, আডবাণীর এ ধরনের মন্তব্য অমর্যাদাকর ও দুর্ভাগ্যজনক। সরকার পক্ষের সম্মিলিত চাপে শেষ পর্যন্ত ঢোক গিলতে হল আডবাণীকে। বিতর্কিত শব্দটি প্রত্যাহার করে নিতে হয়। যার ফলে কংগ্রেস ও সরকারকে কোণঠাসা করার যাবতীয় পরিকল্পনা ভেস্তে যায় বিজেপির। উল্টে কংগ্রেসই পাল্টা আক্রমণের সুযোগ পেয়ে যাওয়ায় অস্বস্তি বাড়ে দলের।
এর মধ্যে প্রাথমিক ভাবে একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা অবশ্য হয়েছিল বিজেপির পক্ষ থেকে। সুষমা স্বরাজ লোকসভায় এবং শাহনওয়াজ হুসেন সাংবাদিক সম্মেলনে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেন, আডবাণী আসলে ২০০৮ সালে ‘ঘুষ নিয়ে’ আস্থা ভোট জয়কে কটাক্ষ করেছিলেন। ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে জয় সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি। এমনকী, আডবাণী নিজেও পরে সংসদে বলেন, তিনি বছর গোলমাল করে ভুল বলে ফেলেছেন। কিন্তু এই সব ব্যাখ্যায় বিশেষ কাজ হয়নি। তত ক্ষণে তির বেরিয়ে গিয়েছে। যার ফলে যন্তর মন্তরে বিজেপির ধর্নাও ফিকে হয়ে গিয়েছে।
এর পরে অবশ্য পাল্টা আক্রমণের পথে নেয় বিজেপি। সেখানে নিশানা করা হয় সনিয়াকেই। যে ভাবে সনিয়া গাঁধী আজ আডবাণীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন তার প্রেক্ষিতে শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, “দলের সাংসদদের শান্ত না করে আরও উত্তেজিত করে তুলছিলেন সনিয়া গাঁধী। আজ প্রধানমন্ত্রী, শিন্দে বা সনিয়া কোনও নেতাই দলের নেতাদের সামলাতে পারেননি।” কিন্তু তাতে খুব বেশি লাভ হয়নি। বরং আডবাণীর কাজে বারবারই যে দল অস্বস্তিতে পড়ছে, সে কথা ধরা পড়ে দলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্যে। তিনি বলেন, “একের পর এক ইস্যুতে আডবাণী দল ও কর্মীদের অস্বস্তি বাড়াচ্ছেন। প্রথমে ব্লগ। এতে শুধু দলের উপর তলাতেই নয়, নিচু তলাতেও প্রভাব পড়েছে। আজ আবার সংসদে এই কাণ্ড।” অসমে হিংসার বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের কতটা চাপের মধ্যে পড়তে হবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় ছিল কেন্দ্র। কিন্তু আডবাণীর একটা কথায় পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনার মতো সুযোগ মিলে যায় তাদের কাছে। এবং তার ফায়দা তুলতে দ্বিধা করেনি সনিয়া গাঁধীর দল। |