বিরোধী আক্রমণের মুখে তিনি উত্তেজিত হতেন না, এমন নয়। তবে সেই উত্তেজনা বা ক্রোধের বিশেষ বহিঃপ্রকাশ এত দিন দেখেনি সংসদ। কিন্তু আজ, সম্ভবত এই প্রথম, লোকসভায় ক্ষোভে ফেটে পড়লেন সনিয়া গাঁধী। শুধু তাই নয়, রীতিমতো নেতৃত্ব দিলেন দলের পাল্টা আক্রমণের।
সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনে আজ অসমের পরিস্থিতি নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ নিয়ে বলতে উঠে ইউপিএ সরকারকে ‘অবৈধ’ বলে মন্তব্য করেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। আর তাতেই চটে যান কংগ্রেস সভানেত্রী। আডবাণীর দিকে আঙুল উঁচিয়ে জানতে চান, কীসের ভিত্তিতে তিনি এই মন্তব্য করেছেন? কে তাঁকে এই অধিকার দিয়েছে? এখানেই থেমে থাকেননি সনিয়া। আডবাণীর মন্তব্যের প্রতিবাদে মুখর হতে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সাংসদদের। জোর গলায় দাবি করেছেন, আডবাণীকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে তাঁর মন্তব্য। বলেছেন, আডবাণী শুধু কংগ্রেস সাংসদদের নয়, দেশের মানুষকে অপমান করেছেন। এ জন্য ওঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। |
বিজেপি এবং শাসক জোটের সাংসদদের কথা কাটাকাটির জেরে লোকসভা মুলতুবি হয়ে গেলেও শান্ত হননি সনিয়া। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবনকুমার বনশলকে ডেকে পাঠিয়ে স্পিকার মীরা কুমারের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেন তিনি। লোকসভায় সনিয়ার এমন অভূতপূর্ব ক্রোধ প্রকাশকে অবশ্য বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করছেন না কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, কৌশলগত কারণেই এমন আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন তিনি।
লোকসভায় এত দিন বিরোধীদের সামলাতেন মূলত প্রণব মুখোপাধ্যায়ই। দাপটের সঙ্গেই মোকাবিলা করতেন বিরোধী আক্রমণ। গত আট বছরের ইউপিএ জমানায় ‘দাদা’র সেই ‘গুস্সা’ বহু বার দেখেছে লোকসভা। কিন্তু প্রণববাবু এখন রাষ্ট্রপতি ভবনে। তাঁর জায়গায় লোকসভার নেতা হয়েছেন সুশীলকুমার শিন্দে। তিনি শান্ত স্বভাবের মানুষ। তাঁর কাছে সেই আক্রমণাত্মক অবস্থান প্রত্যাশা করা যায় না, বলছেন কংগ্রেস নেতারাই।
এই পরিস্থিতিতে সরকার পক্ষকে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছেন খোদ সনিয়া। বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রণববাবুর অনুপস্থিতিতে দুর্বল হয়ে পড়েনি সরকার। ‘চাণক্য’-বিহনে সংসদে সরকারের দশা কী হবে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন যে সব কংগ্রেস নেতা, তাঁরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন।
প্রণববাবুর অনুপস্থিতিতে এখন থেকে কার্যত তিনিই যে সংসদে দলকে নেতৃত্ব দেবেন, সেটা আজ আরও একটি ঘটনায় বুঝিয়ে দিয়েছেন সনিয়া। লোকসভার অধিবেশন শুরু হওয়ার পর অসম সমস্যা নিয়ে হট্টগোলের কারণে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সভা মুলতুবি হয়ে যায়। অধিবেশন ফের শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণ আগে লোকসভায় চলে আসেন সনিয়া। দেখেন, তেলেঙ্গানার কংগ্রেস সাংসদরা জটলা করছেন। সূত্রের খবর, পৃথক তেলেঙ্গানার দাবিতে সরব হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন তাঁরা। সনিয়া সটান চলে যান তাঁদের কাছে। বলেন, সভায় কোনও রকম হট্টগোল তিনি বরদাস্ত করবেন না। চিৎকার করতে হলে তাঁরা যেন সংসদের বাইরে গিয়ে করেন। সনিয়ার এহেন কড়া নির্দেশের পরে গুটিগুটি নিজেদের আসনে গিয়ে বসা ছাড়া স্বাভাবিক ভাবেই আর কোনও পথ ছিল না তেলেঙ্গানার কংগ্রেস সাংসদদের। লোকসভার এই গোটা পর্বে উপস্থিত ছিলেন রাহুল গাঁধীও। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে যাঁর ‘গুস্সা’কে প্রচারের হাতিয়ার করেছিল কংগ্রেস। তবে আডবাণীর মন্তব্যের জেরে আজ রাহুল কিন্তু কোনও রাগ দেখাননি। সভার পিছনের দিকের আসনে বসে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন মায়ের দিকে। যে ‘ক্রুদ্ধ’ সনিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা লোকসভাই। |