সাত বছরের মেয়েটা স্কুলে গিয়েছিল পরীক্ষা দিতে। আর ফেরেনি। বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ স্কুল থেকে কিছুটা দূরে নর্দমায় পুষ্পা ঠাকুরের দেহ দেখতে পান বাসিন্দারা। গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপ। এর পরেই ধুন্ধুমার বেধে যায় আসানসোলের বার্নপুরে। ক্ষুব্ধ জনতা স্কুলে ভাঙচুর চালায়। পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাথর ছোড়া হয়। পুলিশ পাল্টা লাঠি চালিয়ে জনতাকে সরিয়ে দেয়।
খুনের কারণ নিয়ে পুলিশ এখনও অন্ধকারে। তবে, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের আশ্বাস, “তদন্ত শুরু হয়েছে। শীঘ্রই ঘটনার কিনারা হবে।”
|
পুলিশ জানিয়েছে, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলে ঘটনা সম্পর্কে খানিকটা ধারণা মিলতে পারে। কোনও পারিবারিক রেষারেষি থেকে খুন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে এডিসিপি জানিয়েছেন। তবে পুষ্পার বাবা সুরেশ ঠাকুর এ দিন বলেন, “আমার সঙ্গে কারও কোনও বিবাদ নেই। কারা আমার এমন সর্বনাশ করল বুঝতে পারছি না।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বার্নপুরের নবঘন্টি এলাকার বাসিন্দা পুষ্পা ইস্কো পরিচালিত একটি প্রাথমিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। মঙ্গলবার সকালে সে স্কুলে পরীক্ষা দিতে যায়। আর বাড়ি ফেরেনি। প্রধান শিক্ষিকা চন্দনা দাশগুপ্ত জানান, ছুটির পরে সকাল ৯টা নাগাদ পুষ্পা স্কুল থেকে বেরিয়ে যায়। তার পরে কী ঘটেছে তাঁদের জানা নেই। দিনভর খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান না পেয়ে রাতে সুরেশবাবু স্থানীয় হিরাপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন।
কী ভাবে ওই ছাত্রী নিখোঁজ হল, সে প্রশ্ন তুলে সকাল থেকেই এলাকার কিছু বাসিন্দা স্কুলের গেটে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। দেহ মেলার পরে সেখানে আরও লোকজন জড়ো হয়।
|
|
|
স্কুল চত্বরে পুলিশকে লক্ষ করে ইট জনতার। |
স্কুলে তছনছ নোটিস বোর্ড। |
|
গেটের সামনে মৃতদেহ রেখে বিক্ষোভ শুরু হয়। স্কুলে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে জনতা। চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, নোটিস বোর্ড তছনছ করা হয়। তত ক্ষণে স্কুলে পৌঁছে গিয়েছিলেন কয়েকজন শিক্ষিকা ও ছাত্রী। তাণ্ডব দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে যান তাঁরা। হিরাপুর থানার পুলিশ পৌঁছলে তাদের লক্ষ করে ইট ছোড়ে জনতা। তাতে জখম হন স্কুলের সামনে ভিড় জমানো কয়েকজন অভিভাবক। লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে মৃতদেহ আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ। প্রধান শিক্ষিকার কথায়, “গোটা স্কুল কার্যত তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। পড়ুয়াদের কোথায় বসতে দেব, জানি না। ১০ অগস্ট পর্যন্ত পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।”
|
পরে কুকুর নিয়ে তদন্তে যায় পুলিশ। তাতেও কোনও সূত্র মেলেনি। দুপুর আড়াইটে নাগাদ ময়না-তদন্তের পরে পুষ্পার মৃতদেহ বার্নপুরে ফিরলে নতুন করে অশান্তি বাধে। থানার সামনে দেহ রেখে বিক্ষোভ শুরু করেন এলাকাবাসী। তাঁরা দাবি তোলেন, ছাত্রী খুনের ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে পাকড়াও করে শাস্তি দিতে হবে। তারই মধ্যে জনতার একাংশ বার্নপুর বাসস্ট্যান্ডে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। ইট-পাটকেল ছুড়ে কয়েকটি বাসের কাচ ভাঙচুর করা হয়। বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভয়ে যাত্রীরা এ-দিক, ও-দিক ছুটতে শুরু করেন। এলাকায় দোকানপাটের ঝাঁপ পড়তে থাকে। পুলিশ ও র্যাফ বিক্ষুব্ধদের তাড়া করে হটিয়ে দেয়।
|
বুধবার ছবিগুলি তুলেছেন শৈলেন সরকার। |