|
‘ভোকাল টনিকে’ উদ্বুদ্ধ করলেন সুব্রত
প্রশান্ত পাল • আনাড়া |
|
আয়ারল্যান্ডের দরিদ্র পরিবারের ছেলেটির ধ্যান জ্ঞান ছিল ফুটবল। কিন্তু তার পরিবারের নিত্যসঙ্গী দারিদ্র। সেই পরিবারের ছেলের ফুটবল খেলার ‘কিটস’ কেনার সামর্থ কোথায়? অভাব কি তাহলে ছেলেটির কাছ থেকে ফুটবল কেড়ে নেবে? তার বোন বলেছিল, দরকারে আমরা একবেলা না খেয়ে থাকব। কিন্তু ওকে খেলার সরঞ্জাম কিনে দিতে হবে। একটানা আয়ারল্যান্ডের এক জাতীয় দলের ফুটবলারের উত্থানের কথা বলে থামলেন প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য। আনাড়া রেল ময়দানে বসে সুব্রতর কথাগুলো প্রায় গিলছিল জঙ্গলমহল একাদশ ও আনাড়া ফুটবল আকাডেমির খুদে ফুটবলাররা। সুব্রত তাঁদের মনে করিয়ে দেন, “প্রতিভার বিকাশের পিছনে এ রকম ভাবেই কারও না কারও অবদান থাকে।” রবিবার বিকেলে আনাড়ায় এ ভাবেই পাওয়া গেল এক সময়কার কলকাতা ময়দান কাঁপানো সুব্রত ভট্টাচার্যকে। প্রতিভাদের উত্থানের পিছনে এ রকমই নানা টুকরো টুকরো যে সমস্ত ঘটনার কথা থাকে, তা বলছিলেন তিনি। আনাড়ার রেল ময়দানে সে দিন জঙ্গলমহল একাদশ ও পুরুলিয়া একাদশের (আনাড়া ফুটবল আকাডেমি) প্রীতি ম্যাচে হয়। |
ফুটবলারদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সুব্রত ভট্টাচার্য। |
বর্তমান প্রজন্মের ছেলেরা এখন মাঠমুখো হচ্ছে না। এক সময় খেলাধুলার যেটুকু চর্চা ছিল, তাও ধুঁকছে। সেই ভাবনা থেকেই কিছু দিন আগে পেশায় চতুর্থ শ্রেণির রেলকর্মী, আনাড়ার যুবক পিন্টু মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুরু এই প্রশিক্ষণ শিবিরের। পিন্টুর কথায়, “আনাড়াকে ঘিরে অনেকগুলি ছোট-বড় জনপদ রয়েছে। তার মধ্যে একাধিক গ্রাম আদিবাসী অধ্যুষিত। কিছুদিন আগেও এই গ্রামগুলিতে ফুটবলের রীতিমত চর্চা হত। যে কোনও কারণে অনেক গ্রামেই এখন আর তা হয় না। কিন্তু প্রতিভা রয়েছে। তাদের খুঁজে এনে ঘষা মাজা করা দরকার। সেই ভাবনা থেকেই এই প্রশিক্ষণ শিবিরের ভাবনা।” পিন্টুবাবুর এই উদ্যোগে পাশ পেয়েছেন কয়েকজনকে।
স্থানীয় রানিপুর, সোনাইজুড়ি, রামপুর, জয়চণ্ডী, জোড়বেড়িয়া, খাসপাড়া, শুশুনিয়ার মতো গ্রামগুলি থেকে তাঁরা খুঁজে নিয়ে এসেছেন খুদে প্রতিভাদের। তাঁদের নিয়েই সাত সকালে কোচ প্রবীর ভট্টাচার্যের সঙ্গে কাজ ফেলে মাঠে নেমে পড়েন পিন্টু নিজেও। জানালেন, প্রবীরবাবু বেশ কয়েক বছর ফুটবলার গড়ার কাজেই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ রকম ভাবেই একদিন খেলার মাঠে তাঁদের পরিচয় এবং এই শিবির তৈরির কথা মাথায় আসে। এই শিবিরের ছেলেরা গত রবিবারই সুব্রত ভট্টাচার্য, গৌতম সরকার ও সমরেশ চৌধুরীদের মতো প্রাক্তন তারকাদের সামনে জঙ্গলমহল একাদশকে ২-০ গোলে হারাল। আনাড়ার ছেলে বাদশা রায় গোল দু’টি করেছে। তার সঙ্গে ইন্দ্রজিৎ সহিস, বিষ্ণু হাঁসদারা বলে, “আমরা তো ফুলবল খেলতেই চাই। কিন্তু এত দিন ভালো ফুলবল শেখানোর মতো কেউ ছিলেন না। এই শিবিরে এসে, সুব্রতদার কথা শুনে আমরা প্রচণ্ড অনুপ্রাণিত হয়েছি।” |
আনাড়ায় প্রীতি ম্যাচের একটি মুহূর্ত। ছবি: সুজিত মাহাতো। |
সুব্রতও জানালেন, এখানকার ছেলেদের মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী দিনে এরা আরও ভাল খেলতে পারবে। শুধু খেলার ধরণের বদল দরকার। এরা কলকাতাতেও খেলতে পারে। আসলে সার্বিক প্রয়াসের মধ্যে দিয়েই খেলোয়াড় উঠে আসে। একটা বড় খেলা করা হল, লোক জড়ো হলতা দিয়ে ভালো খেলোয়াড় উঠে আসে না। তাঁর প্রত্যাশা, “এখানে প্রবীর-পিন্টুরা ফুটবলের কোচিং ক্যাম্প চালাচ্ছেন। এ রকম ক্যাম্প থেকেই ভবিষ্যতের খেলোয়াড় উঠে আসবে।” গৌতম সরকারের কথায়, “অতীতে জেলা থেকে অনেক প্রতিভা পেয়েছি। সে দিক থেকে এই ধরণের ক্যাম্পগুলির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এখন এই প্রতিভাদের দরকার সঠিক পরিচর্যার।”
সুব্রত জানান, যাঁরা বাংলার ফুটবলের উন্নয়নে কিছু করার কথা ভাবছেন, তাঁদের কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। সমরেশ চৌধুরীর কথায়, “এখান থেকে আমরা কলকাতায় খেলোয়াড় পাঠাব। এই প্রত্যাশা আমার রয়েছে।” |