বিদায় বিজেন্দ্র
লজ্জার স্বর্ণপদক নিয়ে ফিরে আসছে ভারতীয় হকি
লিম্পিকে ভারতের সরকারি ভাবে ৯২ বছরের অংশগ্রহণের ইতিহাসে এ বারই সর্বাধিক পদক জেতার কৃতিত্ব এখনই প্রতিষ্ঠিত। লন্ডন গেমসের আরও পাঁচ দিন বাকি থাকতেই। কিন্তু প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতোই ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের গৌরবের পাশাপাশি জঘন্য লজ্জাও থাকছে টেমসের তীরে।
ভারতীয় সময় সোমবার মাঝরাত থেকে পরের বারো ঘণ্টার মধ্যে বক্সিং রিং আর অ্যাথলেটিক্সের ট্র্যাক ও ফিল্ডে দেশকে লজ্জিত করলেন বিজেন্দ্র সিংহ এবং রেঞ্জিথ মহেশ্বরী। রাতে বিকাশ গৌড়াও ভারতকে লজ্জামুক্ত করতে পারলেন না। ডিসকাস ফাইনালে অষ্টম স্থানে শেষ করলেন তিনি। গৌড়ার সেরা থ্রো ৬৪.৭৯ মিটার। সেখানে সোনাজয়ী জার্মানির রবার্ট হার্টিং ছুড়েছেন ৬৮.২৭ মিটার।
তবে ভরত ছেত্রীর ভারতীয় হকি এ বার যা লজ্জা উপহার দিল দেশকে, তার তুলনা পাওয়া কঠিন। গ্রুপের শেষ ম্যাচে দুর্বল বেলজিয়ামের কাছেও আজ তিন গোল হজম করতে হল ভারতকে। ফলে গ্রুপে ছ’দলের মধ্যে ছ’নম্বরে শেষ করতে হল। এ বার এগারো-বারো স্থানের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলা ভারতের। তবে ইতিমধ্যেই অলিম্পিকে সব থেকে খারাপ ফল করে ফেলেছে তারা। আটলান্টায় অষ্টম হয়েছিল ভারত।
এ বারের অলিম্পিকে পাঁচ ম্যাচে ভরত ছেত্রীরা ১৮টি গোল হজম করলেন। বিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছেন মাত্র ছ’বার। এ দিন স্কোর হল ০-৩।
পর্যুদস্ত। যুদ্ধ শেষের বিজেন্দ্র। ছবি: উৎপল সরকার।
তবে শুধু ভারতই নয়, উপমহাদেশের হকিই ডুবেছে অন্ধকারে। মঙ্গলবার লন্ডনে এশীয় হকির জন্য বরাদ্দ ছিল শুধুই লজ্জা। ‘এ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে পাকিস্তান ০-৭ হারল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। সাত পয়েন্টে থাকা পাকিস্তানের কাছে শেষ চারের দরজা খোলার সুযোগ ছিল এই ম্যাচ জিতলে। স্বভাবতই সমালোচনার ঝড় বইছে পাকিস্তান জুড়ে।
লন্ডন অলিম্পিকে মাত্র একটি ম্যাচ জেতা বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে ‘ভাল ফল’ করার কথা বলেছিলেন ভরত ছেত্রীরা। কিন্তু ভারতীয়দের হকি বিপক্ষ শিবিরে ভয় ধরানো তো দূরের কথা, আঁচড়টা পর্যন্ত কাটতে পারল না। অথচ গত বছরের শেষে চ্যাম্পিয়ন্স চ্যালেঞ্জ ট্রফির ফাইনালে বেলজিয়ামের কাছে এই টিমই হেরেছিল অনেক লড়ে। ফল ছিল ৩-৪। ‘এ’ গ্রুপের সবচেয়ে নীচে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। তাদের অবস্থা ভরতদের থেকে একটু ভাল। তারা একটি ম্যাচ ড্র করেছে। লন্ডনের পারফরম্যান্স দেখে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক পারগত সিংহের বিশ্লেষণ, “টিম হিসাবে মোটেই খেলতে পারেনি ভারত।” অন্য দিকে প্রাক্তন পাক অধিনায়ক ইসলাহউদ্দিন সিদ্দিকি সে দেশে হকির ভবিষ্যৎ নিয়েই চিন্তিত। বলছেন, “দল শুধু হারতে থাকলে লোকে খেলাও দেখতে আসবে না। ছোটরা শিখতেও আসবে না। আজ আমরা টেনিস স্কোরে হারলাম। আগে পাঁচ-ছ’গোলে জিততাম। এখন সেই ফলে হারছি।”
বিজেন্দ্রর সামনে মহা সুযোগ ছিল ভারতের প্রথম অলিম্পিয়ান হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্ট থেকে দ্বিতীয় পদক জেতার। চার বছর আগে বেজিং অলিম্পিকের ব্রোঞ্জজয়ী বিজেন্দ্র গত রাতে লন্ডনে ৭৫ কেজি বিভাগের সেমিফাইনালে উঠতে পারলেই পদক নিশ্চিত ছিল। গড়তে পারতেন মহা ইতিহাস। কিন্তু দু’বছর আগে গুয়াংঝৌ এশিয়াডের ফাইনালে যাঁকে ৭-০ পয়েন্টে চুরমার করে বিজেন্দ্র সোনা জিতেছিলেন হাসতে হাসতে, সেই উজবেক বক্সার আব্বস আতোয়েভের কাছে ১৩-১৭ পয়েন্টে হেরে যান ফেভারিট ভারতীয়।
বিজেন্দ্রর হারের থেকেও ভারতীয় বক্সিং মহলকে বেশি অবাক করছে, তাঁর হারের ধরনটা। বিজেন্দ্র বরাবরের ডিফেন্সিভ বক্সার। আত্মরক্ষা করতে-করতে প্রতিপক্ষকে পালটা মার দিয়ে বাজিমাত করার পক্ষপাতী। কিন্তু আতোয়েভের বিরুদ্ধে অদ্ভুত ভাবে কোনও অজানা কারণে আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ডুবে গেলেন।
“আব্বসের বিরুদ্ধে আমি কিছু ভুলচুক করে ফেলেছি। যার খেসারত আমাকে দিতে হল। যদি আবার ওর সঙ্গে লড়াইয়ের সুযোগ পেতাম, ওই ভুলগুলো আর করতাম না। এবং আমিই জিততাম,” বলেছেন বিজেন্দ্র। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, তদন্ত করে দেখা উচিত একজন এত অভিজ্ঞ বক্সার অলিম্পিক কোয়ার্টার ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে নিজের বরাবরের স্ট্র্যাটেজি থেকে এ ভাবে আচমকা সরে গিয়ে সম্পূর্ণ অন্য গেমপ্ল্যান নিলেন কী ভেবে? বিজেন্দ্র অবশ্য হারের অন্য অজুহাতও দিয়েছেন। “গত রাতে দ্বিতীয় রাউন্ড চলার সময় আমার পিঠের পেশিতে হ্যাঁচকা টান লেগে যায়। তার পর থেকে বাকি লড়াইয়ে আমি রিংয়ে নড়চড়ায় পুরো একশো ভাগ স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করিনি। তবে নিজের পুরো একশো ভাগ দিয়েই লড়েছি। ব্যাড লাক আমার।”
বিজেন্দ্র এ বার ৮১ কেজি বিভাগেই তাঁর কেরিয়ার স্থানান্তরিত করবেন। বলে দিচ্ছেন, “ট্যাকটিক্যাল কারণে আমি খুব তাড়াতাড়িই ৭৫ কেজি ছেড়ে ৮১ কেজিতে লড়াই শুরু করব। আমার মনে হয়, আরও বেশি ওজনের ক্যাটেগরিতে লড়লে আমার পদক জেতার আরও বেশি সুযোগ তৈরি হবে। আমার চোখ ২০১৬-এর রিও অলিম্পিকের দিকে থাকছে।”
এ দিন পুুরুষদের ট্রিপল জাম্পের যোগ্যতা অর্জন পর্বেই তাঁর তিনটে লাফই ‘ফাউলে’র কারণে বাতিল হয়ে যায়। শুধু ফাইনাল পর্বের টিকিট না পাওয়া নয়, চরম লজ্জার বিদায় মহেশ্বরীর! কারণ পরিসংখ্যান বলছে, তাঁর আগে অলিম্পিকে কোনও ভারতীয় অ্যাথলিটের নামের পাশেই সব ক’টা লাফ, কিংবা থ্রো অথবা দৌড়ে ‘নো মার্ক’ পড়েনি। যার অর্থ, একটাও বৈধ নয়। সব ক’টাই ‘ফাউল’ লাফ, কিংবা থ্রো অথবা দৌড়! এবং এখনই প্রশ্ন উঠে গেছে, মহেশ্বরীর বিদেশে থেকে এত দিন ট্রেনিং নেওয়ার জন্য ফেডারেশনের এত কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে কী লাভ হল? দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে মহেশ্বরীর ব্রোঞ্জ পদক জেতা ১৭.০৭ মিটারের লাভ দেখে ভারতীয় অ্যাথলেটিক মহল তাঁকে অলিম্পিক পদকের দাবিদার ভেবে বসেছিল। কিন্তু লন্ডনে কোয়ালিফাইংয়েই মার্কিন ট্রিপল জাম্পার ক্রিশ্চিয়ান টেলর ১৭.২১ মিটার লাফান। আর মহেশ্বরী প্রথম দু’বার ‘ফাউল’ লাফ দেওয়ার পর শেষ বারে দৌড়ে এসে লাফাতেই পারলেন না। ভারতীয় ট্রিপল জাম্পার শুধু দৌড়ে এসেই থেমে গেলেন! বক্সিংয়ে মেরি কম আর দেবেন্দ্র সিংহ বাদে বাকিদের যেমন ছুটি হয়ে গেছে, অ্যাথলেটিক্সেও তেমন টিমটিম করে জ্বলছেন অলিম্পিকের সমাপ্তি দিনে ম্যারাথনে রাম সিংহ যাদব। ভারতীয়দের পদক অভিযান কি ৪ সংখ্যাতেই থেমে থাকবে লন্ডনে?




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.