দরপত্র ছাড়া ও বন দফতরের অনুমতি না নিয়ে গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগে মঙ্গলকোটের বনকাপাশিতে সারদা স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির সম্পাদককে দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও রাখেন স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকেরা। তাঁরা পুলিশ ও মহকুমাশাসকের কাছেও বেআইনি ভাবে গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ করেন। সন্ধ্যায় প্রধান শিক্ষক পীযূষকুমার দাঁ ও সম্পাদক বিশ্বজিৎ দে পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা মেনে নিলে বিক্ষোভ থামে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্কুল ভবন থেকে এক কিলোমিটার দূরে গোশুম্বা গ্রামের কাছে স্কুলেরই একটি খেলার মাঠ রয়েছে। তার চারপাশে সোনাঝুরি, শিরিষ, শিশু, ইউক্যালিপটাস গাছ রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে গাছগুলি কেটে ফেলা হচ্ছিল। গত রবিবার সন্ধ্যায় ঠিকাদারের লোকজন সেগুলি গাড়িতে করে নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। বাসিন্দারা বাধা দিলে বনকাপাশি পঞ্চাননতলায় গাছগুলি ফেলে রেখেই তারা পালিয়ে যায়।
অভিভাবকেরা জানান, সোমবার তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন কোনও রকম দরপত্র ছাড়াই গাছগুলি বিক্রি করা হচ্ছিল। এমনকী স্কুল কর্তৃপক্ষ বন দফতরের অনুমতিও নেননি। তাঁদের অভিযোগ, কালবৈশাখীতে মাত্র দু’টি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অথচ ১৯টি গাছ জলের দরে ‘পছন্দসই’ ঠিকাদারকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা সুশান্ত সামন্ত, প্রণবানন্দ ঘোষেদের অভিযোগ, “ওই গাছগুলির দাম কমপক্ষে তিন লক্ষ টাকা। অথচ ৩৪ হাজার টাকায় তা বিক্রি করা হয়েছে।” |
পড়ে রয়েছে কাটা গাছ। নিজস্ব চিত্র। |
এ দিন দুপুরে পরিচালন সমিতির সম্পাদক বিশ্বজিৎ দে স্কুলে পৌঁছলে তাঁর কাছে কৈফিয়ত চান অভিভাবক ও বাসিন্দারা। তাঁদের হাতে আটকে পড়েন প্রধান শিক্ষকও। গ্রামবাসী অসীম ঘোষ, উৎপল চক্রবর্তী, গদাই ঘোষেদের দাবি, “আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গাছ কেটে বিক্রির ব্যাপারে কোনও সদুত্তর পাইনি। সে কারণে মঙ্গলকোটের কৈচর ফাঁড়িতে ও মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করে পুরো ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছি।”
স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই মাঠের দক্ষিণ দিকে সাহেবপুকুরের বাসিন্দারা চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, গাছের জন্য তাঁদের বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সে কারণে ২৮ মে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক পীযূষবাবু জানান, গাছ কাটা ও বিক্রির মধ্যে ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’ হয়েছে বলে তিনি মনে করছেন। বিশ্বজিৎবাবুও স্বীকার করেন, “গাছ বিক্রিতে দরপত্র ডাকা বা বন দফতরের অনুমতি নেওয়া হয়নি।” তবে কৈচর ২ পঞ্চায়েতের অনুমতি নিয়ে গাছ কাটা হচ্ছিল জানিয়ে তাঁর দাবি, “ছোট বিষয় নিয়ে বেশি জলঘোলা হচ্ছে।”
পঞ্চায়েত প্রধান এনামুল হক বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনে গাছ কাটতে বলা হয়েছিল স্কুলকে। কিন্তু তারা তো বন দফতরের অনুমতিই নেয়নি।” মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।” পুলিশ জানায়, বন দফতর ও ব্লক অফিসের কর্মীদের নিয়ে কমিটি তৈরি করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। |