সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর আগে বিজেপির সঙ্গে সেতু রচনার যতই চেষ্টা করুন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম, তাঁকে যাতে কোনও ভাবেই রেয়াত করা না হয়, তার জন্য প্রধান বিরোধী দলকে পরামর্শ দিলেন সঙ্ঘ নেতৃত্ব।
সঙ্ঘ নেতৃত্বের মতে, শুধু চিদম্বরম নয়, তাঁর পুত্রের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। টু-জি কাণ্ডে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের এখনও মীমাংসা হয়নি। এই পরিস্থিতিতেই তাঁকে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফলে চিদম্বরমকে আক্রমণের পথ থেকে বিজেপির সরে আসা চলবে না। আজ সন্ধ্যায় বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাড়িতে অনুষ্ঠিত এনডিএ-র বৈঠকেও স্থির হয়েছে, অতীতের মতো সংসদে চিদম্বরমকে বয়কট করা না হলেও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলি নিয়ে আগের মতোই প্রতিবাদে মুখর হবেন জোটের সাংসদেরা।
বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতির চেষ্টায় দু’দিন আগে আডবাণীর বাড়িতে গিয়ে চিদম্বরম প্রায় চল্লিশ মিনিট বৈঠক করেন। কথা বলেন আডবাণীর স্ত্রী-কন্যার সঙ্গেও। অসমের হিংসার মধ্যে আডবাণী যে ভাবে কোকরাঝাড় সফর করেছেন, তার প্রশস্তিও করেন চিদম্বরম।
আর আজ সংসদ অধিবেশন শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে সংসদে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা ‘বন্ধু’ অরুণ জেটলির কক্ষে গিয়েও একান্তে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। কংগ্রেস সূত্রের খবর, প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর সংসদের কাজ চালানো ও বিরোধীদের সঙ্গে কক্ষ সমন্বয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার লোকের অভাব। সুশীলকুমার শিন্দেকে লোকসভার নেতা করা হলেও তিনি এ ব্যাপারে কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরেই সংশয় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চিদম্বরমকে অনেকটা বাড়তি দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। তার উপর বিভিন্ন সংস্কারমুখী বিলও আটকে রয়েছে। বিজেপির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়া সেগুলি পাশ করানো সম্ভব নয়। সেই হিসাব করেই সংসদ শুরুর আগে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করার কাজে নেমেছেন চিদম্বরম।
কিন্তু সঙ্ঘ নেতৃত্ব মনে করছেন, শুধু সংসদ সুষ্ঠু ভাবে চালানোর লক্ষ্যেই নয়, বিজেপিকে ‘তুষ্ট’ করার পিছনে চিদম্বরমের অন্য ‘অভিসন্ধি’ রয়েছে। বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় এখনও ফেঁসে রয়েছেন তিনি ও তাঁর পরিবার। চিদম্বরমের রাজনৈতিক বিরোধী তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাও ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন বিজেপির সঙ্গে।
চিদম্বরমকে আদালতে টেনে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যিনি সব থেকে বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন, সেই সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও এখন এনডিএ-র শরিক। স্বামীর পিছনে সঙ্ঘের প্রত্যক্ষ মদতও রয়েছে। ফলে কোনও অবস্থাতেই চিদম্বরমকে রেয়াত না করার পরামর্শই বিজেপিকে দিচ্ছে সঙ্ঘ।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “সরকার সংসদে কোন বিল কী ভাবে নিয়ে আসতে চায়, সেগুলি পর্যালোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিজেপি কখনওই উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের আগে মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতির মতো বিষয়গুলিই কংগ্রেস-বিরোধী আন্দোলনের সব থেকে বড় হাতিয়ার। ফলে তা নিয়ে লাগাতার আন্দোলন চলবে। সংসদের ভিতরেও যেমন, বাইরেও।” |