সরাচ্ছেন প্রণবের লোক
ছুটির পরেও কাজ করতে পারবেন, প্রশ্ন অর্থমন্ত্রীর
শটা-পাঁচটার অফিস সময়ের বাইরে কাজ করতে রাজি? জবাব ‘না’ হলে পাল্টা প্রশ্ন, অসুবিধাটা কোথায়? পারিবারিক, শারীরিক, না কি এমনিই?
শনি-রবি ছুটি মেলেনি গত সপ্তাহে। মিলবে না জন্মাষ্টমীর ছুটিও। তার পর নয়া মন্ত্রীর কাছ থেকে এমন প্রশ্নমালা পেয়ে কার্যত হতবাক অর্থ মন্ত্রকের আমলারা। বুঝেই উঠতে পারছেন না, কী উত্তর দেওয়া উচিত!
প্রশ্নবাণের এখানেই শেষ নয়। মন্ত্রী জানতে চেয়েছেন, অর্থ মন্ত্রকে কাজ করে আমলারা খুশি কি না? খুশি না-হলে অন্য কোথায় তাঁরা কাজ করতে ইচ্ছুক? অর্থ মন্ত্রকের মধ্যেই অন্য দফতরে বা না একেবারে অন্য মন্ত্রকে? অন্য দায়িত্ব নিতে চাইলে তার জন্য কী যোগ্যতা রয়েছে, তা-ও জানতে চেয়েছেন মন্ত্রী। মন্ত্রকের কাজের উন্নতির জন্য অফিসারদের পরামর্শও চেয়েছেন তিনি।
নতুন অধিনায়ক এসে নিজের মতো দল গড়বেন, সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু পি চিদম্বরম অর্থ মন্ত্রকের কাজের ধরনটাই একেবারে বদলে দিতে চাইছেন।
নয়া অর্থমন্ত্রী গত কালই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, অর্থনীতির হাল ফেরাতে তিনি তাঁর পূর্বসূরির ‘বিতর্কিত’ নীতি শোধরাতে দ্বিধা করবেন না। লগ্নিকারীদের আস্থা জয়ের সব রকম চেষ্টা করবেন। সওয়াল করবেন সুদের হার কমানোর জন্যও। কর ফাঁকি রোধ আইনের ক্ষেত্রে নরম মনোভাব ও ঘাটতি কমানোর বার্তা দিয়ে আজ শেয়ার বাজারে একটা ঝাঁকুনি দিতে পেরেছেন চিদম্বরম।
ঝাঁকুনি লেগেছে অর্থ মন্ত্রকের অন্দরমহলেও। প্রথমেই মন্ত্রকের শীর্ষস্তরে, রাজস্বসচিব ও ব্যয়সচিবের মধ্যে দায়িত্ব অদলবদল করে দিয়েছেন চিদম্বরম। তাঁর আস্থাভাজন অরবিন্দ মায়ারামকে অর্থসচিবের পদে নিয়ে এসেছেন। এ বার যুগ্মসচিব স্তরেও আস্থাভাজন অফিসারদের দায়িত্ব দেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছেন তিনি। দুই যুগ্মসচিব প্রবোধ সাক্সেনা ও রাজেশ খুল্লারের মধ্যে দায়িত্ব বদল হয়ে গিয়েছে। আরেক যুগ্মসচিব টমাস ম্যাথিউকে রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঠানো হতে পারে। নতুন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার পদে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রঘুরাম রাজনের নিয়োগে আজ অনুমোদন দিয়েছেন চিদম্বরম।
২০০৯ সালে চিদম্বরমের পরিবর্তে অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তখন চিদম্বরমের আস্থাভাজন আমলাদের সরিয়ে প্রণববাবুর বিশ্বাসী অফিসারদের গুরুদায়িত্বে নিয়ে আসা হয়েছিল। এ বার উলট পুরাণ শুরু হয়েছে। প্রণববাবু বিদেশমন্ত্রী থাকার সময় থেকে তাঁর সঙ্গে কাজ করা অতিরিক্ত সচিব বিমল জুলকাকে ফের বিদেশ মন্ত্রকে পাঠানো হতে পারে। অর্থ মন্ত্রক থেকে রাষ্ট্রপতির প্রেস সেক্রেটারির পদে যাওয়া বেণু রাজামণির জায়গাতেও নিজের পছন্দের কাউকে আনতে চাইছেন চিদম্বরম। প্রত্যক্ষ কর ও পরোক্ষ করের কেন্দ্রীয় পর্ষদের প্রধানের পদ দু’টিতেই নতুন মুখ আনা হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ উন্নয়ন পর্ষদেও অর্থ মন্ত্রকের প্রতিনিধিত্ব পাল্টে দিয়েছেন চিদম্বরম।
সরকারি আমলাদের কাজে গতি আনলেই যে আর্থিক সংস্কারে গতি আসবে না, তা-ও চিদম্বরমের অজানা নয়। তিনি জানেন, সংসদে বিরোধীরা বাধা হয়ে দাঁড়াবেন। তাই রবিবার লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাড়িতে গিয়ে বৈঠক করেছিলেন তিনি। আজ আবার সংসদে অরুণ জেটলির দফতরে গিয়ে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিজেপি-র সঙ্গে সেতু মেরামত করার চেষ্টায় এর পর তিনি লোকসভার বিরোধী দলনেতা সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে জানা গিয়েছে।
কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, অর্থনীতির হাল ফেরাতে এই মুহূর্তে বেশ কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। ঘাটতি কমাতে ভর্তুকিতে কাটছাঁট করতে হবে। আবার বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরাতে প্রণববাবুর আমলের কর ফাঁকি রোধ আইনের মতো বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলিও সংশোধন করা প্রয়োজন। কঠিন অসুখ সারাতে তেতো ওষুধের নিদান দেওয়ার জন্য চিদম্বরমই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।
চিদম্বরমের কড়া দাওয়াইয়ের আঁচ বেশ ভালই টের পাচ্ছেন অর্থ মন্ত্রকের আমলারা। ছুটি বাতিল হচ্ছে, ফাইলের গতি বাড়াতে বলা হচ্ছে। মন্ত্রীর কাছে কোনও ফাইল পাঠালে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আবার ফেরত চলে আসছে। অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নোট চেয়ে পাঠাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। তার মধ্যেই কার কখন চেয়ার বদলে যাচ্ছে, বোঝা ভার।
অর্থনীতির এই কঠিন সময়ে চিদম্বরমের কড়া মনোভাব আর অপ্রিয় সিদ্ধান্তে কতটা কাজ হয়, সেটাই এখন দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.