মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেছিলেন, শিক্ষার অধিকার আইন সকলকে মানতে হবে। কিন্তু তাঁর মন্ত্রক জানিয়ে দিল, সরকারি সাহায্য ছাড়াই যে-সব সংখ্যালঘু স্কুল চলে, সেগুলির উপরে শিক্ষার অধিকার আইনের কোনও ধারাই কার্যকর হবে না।
সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক একটি রায়ের জেরেই ওই ধরনের স্কুলগুলি এই আইনের সব ধারা থেকে ‘মুক্ত’ বলে সোমবার কলকাতায় জানান মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধিকর্তা (শিক্ষার অধিকার আইন) বিক্রম সহায়। একটি বণিকসভা আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি জানিয়ে দেন, ওই সব সংখ্যালঘু স্কুল আইনের বিভিন্ন ধারা থেকে ছাড় পাবে।
শিক্ষার অধিকার আইনটা কী?
• ছয় থেকে ১৪ বছরের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে ২০০৯ সালে শিক্ষার অধিকার আইন প্রণয়ন করে কেন্দ্রীয় সরকার।
ওই আইনে বলা হয়েছে:
• কোনও শিশু স্কুলে ভর্তি হতে গেলে তাকে ফেরানো যাবে না।
• ১৪ বছর (অষ্টম শ্রেণি) পর্যন্ত কোনও পড়ুয়াকে ফেল করানো যাবে না।
• যে-সব বেসরকারি স্কুল সরকারের কাছ থেকে কোনও সাহায্য নেয় না, সেগুলিতেও ২৫ শতাংশ আসনে গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের ভর্তি করতে হবে এবং ফি ছাড়াই তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে হবে ইত্যাদি।
কিন্তু সরকারি সাহায্য ছাড়াই চলে, এমন কিছু সংখ্যালঘু স্কুল শীর্ষ আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। তারা বলে, তাদের ক্ষেত্রে শিক্ষার অধিকার আইন প্রযোজ্য নয়। গত এপ্রিলে একটি রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ওই ধরনের স্কুলে শিক্ষার অধিকার আইন রূপায়ণ করা যাবে না। সর্বোচ্চ আদালত যখন এই রায় দেয়, সেই সময়েই আবার কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বল কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে এসে জানিয়েছিলেন, সব স্কুলই শিক্ষার অধিকার আইন মানতে বাধ্য। সর্বোচ্চ আদালত এবং কেন্দ্রের এই পরস্পরবিরোধী মন্তব্যে ‘বিভ্রান্ত’ হয়ে পড়ে রাজ্য সরকার। সুস্পষ্ট ভাবে বিষয়টি জানতে চেয়ে তারা কেন্দ্রের কাছে চিঠি লেখে। সেই চিঠির উত্তর অবশ্য এখনও আসেনি।
এ দিন বণিকসভা ‘এমসিসি চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ আয়োজিত আলোচনাসভায় সিব্বলেরই মন্ত্রকের অন্যতম অধিকর্তা বিক্রম সহায় বলেন, “যে-সব সংখ্যালঘু স্কুল সরকারি সাহায্য ছাড়াই চলে, সেগুলি শিক্ষার অধিকার আইনের আওতায় পড়ে না। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টই একটি রায়ে এ কথা জানিয়ে দিয়েছে।” তিনি জানান, শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী সব স্কুলই এই আইনের আওতাভুক্ত। কিন্তু শীর্ষ আদালত যে-হেতু অন্য কথা বলছে, তাই ওই ধরনের সংখ্যালঘু স্কুলগুলি ছাড় পাচ্ছে। কলকাতায় সরকারি সাহায্যহীন সংখ্যালঘু স্কুলের তালিকায় রয়েছে লা মার্টিনিয়ার, সেন্ট জেমস, প্র্যাট মেমোরিয়াল, সেন্ট টমাস ইত্যাদি।
‘শিক্ষার অধিকার আইন অভিশাপ না আশীর্বাদ’ এটাই ছিল এ দিনের সভার আলোচ্য। যোজনা কমিশন ও জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য
নরেন্দ্র যাদব সভায় বলেন, “শিক্ষার অধিকার আইনের কিছু কিছু ধারা পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে। জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা করে প্রস্তাবিত পরিবর্তনের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শীঘ্রই চিঠি দেওয়া হবে।” যদিও ওই আইনে কী কী পরিবর্তন হতে পারে, সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি যাদব।
শিক্ষা ক্ষেত্রে এ দেশের অগ্রগতি যে মোটেই আশাপ্রদ নয়, নিজের বক্তব্যে যাদব তা স্বীকার করে নেন। তিনি জানান, দ্বাদশ যোজনায় শিক্ষাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, শিক্ষা ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ যথেষ্ট বাড়লেও রাজ্য সরকারগুলি বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না।
|
প্রযোজ্য নয় |
• অষ্টম পর্যন্ত পাশ-ফেল রদ
• প্রবেশিকা ছাড়া ভর্তি
• ২৫% আসনে ফি মকুব
• ক্যাপিটেশন ফি ছাড়া ভতির্
• সব আবেদনকারীকেই ভর্তি
• বয়স মেনে ঠিক ক্লাসে ভর্তি |
|