জীবদ্দশায় বিতর্ক পিছু ছাড়েনি তাঁর। মৃত্যুতেও তাঁর সঙ্গী সেই বিতর্কই।
বেশ কিছু দিন বাড়ির বাইরে দেখা যায়নি হরিয়ানার প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী চন্দ্র মোহন ওরফে চাঁদ মহম্মদের প্রাক্তন স্ত্রী অরুন্ধতী বালি ওরফে ফিজাকে। আজ তাঁর মোহালির বাড়ি থেকে প্রতিবেশীরা দুর্গন্ধ পান। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পুলিশ এসে বাড়ির দরজা ভেঙে ফিজার পচাগলা দেহ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে গেল তাঁর ৩৯ বছরের বিতর্কিত জীবন।
যে জীবন সম্ভবত হার মানাবে বলিউডের ছবিকেও। হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভজন লালের ছেলে তথা রাজ্যের তৎকালীন উপমুখ্যমন্ত্রী বিবাহিত চন্দ্র মোহনকে বিয়ে। বিয়েকে বৈধতা দিতে অরুন্ধতী বালি ধর্ম পরিবর্তন করে
|
ফিজা ছবি: পিটিআই |
হলেন ফিজা। চন্দ্র মোহন হলেন চাঁদ মহম্মদ। তার পরে বিচ্ছেদ, একাকীত্ব, আত্মহত্যার চেষ্টা।
তাঁর মৃত্যুও মনে করিয়ে দিল এক বলিউডি নায়িকাকে। তিনি পরভিন ববি। ২০০৫ সালের ২২ জানুয়ারি মুম্বইয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্টে নিজের বাড়ি থেকে পুলিশ উদ্ধার করে এই নায়িকার মৃতদেহ। তাঁর বাড়ির সামনে কয়েক দিনের সংবাদপত্র এবং দুধের প্যাকেট দেখে সন্দেহ হওয়ায় প্রতিবেশীরা পুলিশকে ফোন করেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছিল, অন্তত দু’-তিন দিন আগে মৃত্যু হয়েছিল পরভিনের।
এ ক্ষেত্রেও পুলিশ জানিয়েছে, ফিজার মৃত্যু হয়েছে অন্তত চার-পাঁচ দিন আগে। শয়ন কক্ষের বিছানায় পড়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন সহকারী অ্যাডভোকেট জেলারেলের পচাগলা দেহ। মৃত্যুর কারণ নিয়ে অন্ধকারে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তবে ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়া যায়নি। মোহালির পুলিশ সুপার ডি এস মন বলেন, “ঘরে কোনও ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়না-তদন্তের পরেই আসল কারণ জানা যাবে।” কালই বিমানসংস্থা এমডিএলআর এয়ারলাইন্সের প্রাক্তন কর্মী গীতিকা শর্মার (২৩) আত্মহত্যার সঙ্গে জড়িয়েছে হরিয়ানার পদত্যাগী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গোপাল কাণ্ডার নাম। নয়াদিল্লির অশোক বিহারে নিজের বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় গীতিকার দেহ। ‘সুইসাইড-নোট’-এ তাঁর আত্মহত্যার জন্য তিনি দায়ী করেছেন কাণ্ডাকে। কাল কাণ্ডা ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু আজ গীতিকার আত্মহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে কাণ্ডা জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থেই পদত্যাগ করেছেন তিনি। তাঁর আরও দাবি, গীতিকার কল রেকর্ড থেকে পরিষ্কার হয়ে যাবে, গত দু’মাসে গীতিকার সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি। এর পরে ফিজার মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কারণ ফিজাও বিয়ে করেছিলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চন্দ্র মোহনকে।
বিতর্কের শুরুটা ২০০৮ সালে। ওই বছরের নভেম্বরে বিয়ে করেন রাজ্যর তৎকালীন উপমুখ্যমন্ত্রী চন্দ্র মোহন এবং অরুন্ধতী বালি। ধর্ম পরিবর্তন করে তাঁরা হন চাঁদ মহম্মদ এবং ফিজা। এই কারণে ভজন লাল
চন্দ্র মোহনকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। চন্দ্র মোহনকে খোয়াতে হয় উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ। কিন্তু কিছু দিন পরেই নিজের প্রথম স্ত্রী এবং
সন্তানদের কাছে ফিরে যান চাঁদ মহম্মদ। ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারিতে ফোনে এবং এসএমএস-এর মাধ্যমে চাঁদ মহম্মদ ফিজাকে তালাক দেন। একটি মন্দিরে ধর্ম পরিবর্তন করে ফের হিন্দুও হন। সম্প্রতি চন্দ্র মোহন ছোট ভাই কুলদীপ বিষ্ণোইয়ের সঙ্গে সমস্ত রকম দূরত্ব ঘুচিয়ে
তাঁর রাজনৈতিক দল হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন।
কিন্তু একাকীত্ব গ্রাস করে ফিজাকে। বিশেষ সূত্রের খবর, গত বছর তিনি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন। সম্প্রতি বসপায় যোগ দেওয়ার চেষ্টাও চালাচ্ছিলেন। ২০০৯-এর বিধানসভা ভোটে ভজন লালের পরিবারের বিরুদ্ধে প্রচারও করেছিলেন। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরেই ফিজা চূড়ান্ত অবসাদে ভুগছিলেন। বেশ কয়েক বার তাঁদের সঙ্গে হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে থামাতে পুলিশ ডাকতে হয়েছিল।
এ দিনও তাঁদের ডাকে পুলিশ এল। তবে সম্পূর্ণ অন্য কারণে। একাকীত্বের নাগাল এড়িয়ে ফিজা তখন অনেক দূরে। |