ট্রেনের নাম সুপার ফাস্ট দার্জিলিং মেল। এ সি টু টায়ার। কোচ ‘এ-ওয়ান’। ৩ অগস্ট, শুক্রবার ঘড়ি ধরেই ১০টা ০৫-এ যাত্রা শুরু, শিয়ালদহ থেকে।
বিড়ম্বনারও শুরু। অসুস্থ এক সহযাত্রীর সঙ্গে আসন পাল্টে ৪১ নম্বর লোয়ার বার্থে শুয়ে পড়ার তোড়জোড় চলছে। প্রথমেই গেরো। বার্থটা সমান নয় উঁচু নিচু। এক দিকের কোনা তুবড়ে গেছে। শুতেই পিঠে লাগছে। টিকিট পরীক্ষককে ডেকে দেখাতে অমায়িক হেসে তিনি বললেন, “এখন লোহা জোড়ার মিস্ত্রি কোথায় পাই বলুন তো? একটু ম্যানেজ করে নিন।” নিতে বাধ্য। টান টান পর্দা টেনে আবছা অন্ধকারে শরীরটা এলিয়ে দিতেই বোঁটকা গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠার জোগাড়। ঝকঝকে বালিশ-চাদর-তোয়ালে। কিন্তু এত দুর্গন্ধ কেন? এই গন্ধে কারও ঘুম আসে? ঘণ্টাখানেক চেষ্টা করেও তো এল না। ব্যাগ থেকে টর্চ বের করে দেখা গেল, বার্থের কোনায় মরে পড়ে আছে ছোট্ট নেংটি ইঁদুর। নেংটির দোষ নেই। গত কয়েক দিনের চা-কফির কাপ, পানমশলা আর চিপসের প্যাকেট জমে আছে বার্থের নীচে। এবং বেশ কয়েক দিন ঝাড়পোঁছও হয়নি। এই কোচেই পাঁচ নম্বর বার্থটি নির্দিষ্ট ছিল টিকিট পরীক্ষকের জন্য। ছুটতে হল তাঁর কাছে। তিনি নেই। চাদর মুড়ি দিয়ে অন্য এক জন ঘুমোচ্ছেন। |
না জেনে মুখ থেকে চাদর সরাতেই তিনি রেগে আগুন। বললেন, “আজব কি বাত। ইয়ে সব লাফাঙ্গা আদমি কাঁহা সে আতা হ্যায়।”
ভাগ্যিস চোর-ডাকাত বলে তেড়ে আসেননি। কিন্তু এখন কী করা যায়? চার দিক থেকে ভেসে আসছে বিচিত্র নাসিকা গর্জনের আওয়াজ। হাল না ছেড়ে ব্যাগ থেকে টুথব্রাশ বের করে তা দিয়েই খোঁচা মারলাম পচে যাওয়া নেংটিকে। নীচে খসে পড়তেই নাকে রুমাল চেপে তাকে ফেলতে গিয়ে আর এক বিপদ। তবুও ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত ট্রেনের দরজা খুলে বিদায় জানালাম নেংটি বাবাকে। দরজার বিকট শব্দ। তা-ও ঘুম ভাঙেনি উর্দি পরা পুলিশের।
নিখুঁত অপারেশন। শান্তিতে বাথরুমে ঢুকে দেখা গেল ত্যাবড়ানো ছিটকিনি। শরীরের সব শক্তি ঢেলেও সেই ছিটকিনিকে আর খাড়া করা যায় না। এত রাতে কে আর উঁকি দেবে? নিশ্চিন্তে বাকি কাজ সেরে ফেলা সহজ।
ঘুম কি আর আসে? বহু পুরনো এসি মেশিনের ঘড়ঘড় শব্দে কখন ভোর হয়ে এল। ট্রেন কিষাণগঞ্জে তখনও ঢোকেনি। দু’জন নামবেন। বোধ হয় চোখে মুখে জল দিতে বেসিনে গিয়েছিলেন। বেসিনও আছে। জলও আছে। কিন্তু জং ধরে কলের মুখ বন্ধ। বিরক্তিতে গজগজ করতে করতে নেমে গেলেন তাঁরা।
আলুয়াবাড়ি ছাড়াতেই মোবাইলে কলকাতার বিশিষ্ট এক চিকিৎসকের ফোন। তিনি প্রায়ই এই ট্রেনে কিষাণগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে ক্লাস নিতে যান। সব শুনে হাসতে হাসতে বললেন, “ভাগ্যিস নেংটি ছিল। আমি এক বার এক ধেড়ে ইঁদুরের ভয়ে সারা রাত জেগে কাটিয়েছি লোয়ার বার্থে। মাত্র কয়েক দিন আগেই।”
মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক
সমীর গোস্বামী পুরো ঘটনা শুনে থ। সঙ্গে
সঙ্গে এ-ও বললেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। কী করে এ সব ঘটল, আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি।” |