জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়া এলাকার বাসিন্দা পঁচাত্তর বছরের এক বৃদ্ধাকে শনিবার রাতে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃদ্ধার নাম কল্পনা ভট্টাচার্য। রবিবার দুপুরে পান্ডাপাড়ার ১৩ নম্বর গলির দুটি ঘরের ভাড়া বাড়ি থেকে কল্পনা দেবীর দেহ উদ্ধার করা হয়। শোয়ার ঘরে মশারি টাঙানো বিছানার ভেতরে আড়াআড়ি ভাবে মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিছানার বালিশ, চাদর লন্ডভন্ড থাকায় মৃত্যুর আগে কল্পনা দেবীর সঙ্গে আততায়ীর ধস্তাধস্তি হয়েছে পুলিশ মনে করছে। ধারালো অস্ত্রের কোপে বৃদ্ধার কপালে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। বিছানা থেকে একটি রক্তমাখা বটি উদ্ধার করা হয়েছে। বিছানার পাশেই ব্যাঙ্কের পাশবই, টাকা রাখার ব্যাগ মাটিতে পড়েছিল। শোয়ার ঘরের একটি আলমারিও খোলা অবস্থায় ছিল। জলপাইগুড়ি সদর ডিএসপি হরিপদ শী বলেন, “ব্যাঙ্কের বইগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্রের কোপেই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনাবলি যা দেখা যাচ্ছে তাতে পরিচিত কেউ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন।”
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষিকা কল্পনা দেবী ভাড়া বাড়িতে একাই থাকতেন। প্রতি মাসে প্রায় হাজার সাতেক টাকা তিনি পেনশন পেতেন। শনিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ তিনি ব্যাঙ্ক থেকে পেনশনের টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। ঘন্টা দুয়েক পরে ফিরে আসেন। ব্যাঙ্কের পাশ বইয়ের তথ্য জানাচ্ছে দু’একদিন আগেই তিনি প্রায় ৯ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলেছিলেন। এরপরে শনিবারও তিনি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলেন। জানা গিয়েছে, মাসে এক-দুবার ব্যাঙ্ক আক্যাউন্ট থেকে পেনশনের টাকা তুলে এনে তিনি বাড়িতেই রাখতেন। সেই টাকা দিয়েই দৈনন্দিন খরচ চালাতেন। বাড়িতে জমানো টাকা লুঠ করতে এসেই বৃদ্ধাকে খুন করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
বিছানার পাশে রাখা টেবিল এবং মেঝেয় বেশ কিছু অধুনা অচল খুচরো পয়সাও পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। পাশের ঘরে একটি জানলার লোহার শিকও ভাঙা হয়েছে। সেই জানলা দিয়েই আততায়ী ঢুকেছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে বৃদ্ধা যে বাড়িতে থাকতেন তার দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিল না। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, উঠোনের দু’দিকেই অন্য বাড়ি থাকায় শ্বাসকষ্ট সহ অনান্য রোগে ভোগা কল্পনা দেবী দরজা ভেতর থেকে না আটকেই শুতে যেতেন। রবিবার দুপুরের পরেও কল্পনা দেবীকে বাড়ি থেকে বের হতে না দেখে পাশের বাড়ির পরিচারিকা ঘরে ঢুকে বৃদ্ধার মৃতদেহ দেখতে পান।
প্রায় ২৫ বছর আগে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে একাই ভাড়া বাড়িতে থাকতেন প্রাথমিক শিক্ষিকা কল্পনা দেবী। একমাত্র ছেলে ভাস্করবাবু স্ত্রীকে নিয়ে অন্যত্র থাকতেন। ২০০৫ সালে ভাস্করবাবু আত্মঘাতী হওয়ার পরে পূত্রবধূ সীমা দেবীর সঙ্গেও কল্পনা দেবীর খুব একটা যোগাযোগ ছিল না বলে জানা গিয়েছে। তবে নাতনি এবং নাত জামাইয়ের সঙ্গে কল্পনাদেবীর যোগাযোগ ছিল। নাতজামাই পেশায় ডেকরেটর ব্যবসায়ী সুকান্ত সরকার বলেন, “আমি এবং আমার স্ত্রী প্রায়ই ঠাকুমার বাড়িতে আসতাম। বাজার করে দিতাম। আমার স্ত্রী পড়াশোনার খরচও কখনও সখনও ঠাকুমা দিতেন। আমি নিজেও মাঝে মধ্যে ঠাকুমাকে নিয়ে পেনশন তুলতে নিয়ে যেতাম। তবে আমার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় কয়েকদিন আসতে পারিনি।” প্রতিবেশী ঝুনু সাহা, ববিতা সাহারা বলেন, “শনিবার সকালেই আমাদের বলে মাসিমা ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন। পেনশনের টাকা তুলতে যাবেন বলেছিলেন।”
পূত্রবধূ সীমা দেবী বলেন, “শাশুড়ি মাকে অনেকবার আমাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। রাজি হননি। নিজেই রান্না করে খেতেন। ওঁর যে অনেক টাকা আছে, তা নয়।” কল্পনা দেবীর বোন শহরের থানা মোড় এলাকার বাসিন্দা অঞ্জনা শর্মা বলেন, “প্রায় মাস দুয়েক দিদির সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। দিদি একাই থাকত। কেউ তেমন খোঁজ করত না। এমন ঘটনা কে ঘটাল? দিদি কবে পেনশন তোলে, কোথায় টাকা রাখে তা নিশ্চয়ই কেউ খবর রাখত।” |