দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ‘দুর্দশা’ নিয়ে রবিবার রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের কাছে ক্ষোভ উগরে দিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিধায়ক এবং নেতারা।
শনিবারই ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ)-এর পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে মোর্চা। জিটিএ পরিচালনায় সাহায্যের আশ্বাস দিলেও, স্থানীয় উন্নয়নে মোর্চাকে যে নজর দিতে হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। এ দিন রেলমন্ত্রীর কাছে ‘ক্ষোভ’ জানিয়ে পাহাড়ের সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নে তারা কতটা আগ্রহী, মোর্চা সেই বার্তা দিল বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা।
উপলক্ষ, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের দু’টি নতুন টয় ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। রবিবার দুপুরে দার্জিলিং স্টেশনে ওই অনুষ্ঠানে হাজির থাকলেও জিটিএ-র চিফ এগজিকিউটিভ তথা মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ একটি কথাও বলেননি। তবে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি এবং কার্শিয়াং ও দার্জিলিঙের দুই দলীয় বিধায়কের অভিযোগ, ১৯৯৯ সালে টয় ট্রেন ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর সম্মান পেলেও, তার পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি হয়নি। মোর্চা নেতাদের কথায়, “শুধু ফাইলই তৈরি হয়েছে। হয়নি কাজের কাজ।” |
দার্জিলিং থেকে কার্শিয়াং এবং দার্জিলিং থেকে ঘুম পর্যন্ত দু’টি দু’কামরার টয় ট্রেনের উদ্বোধন হয় এ দিন। তাদের মধ্যে দার্জিলিং থেকে ঘুম পর্যন্ত যে ট্রেনটি, সেটি চলবে স্টিম ইঞ্জিনে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘জয় রাইড’। এ দিন দুপুরে ওই অনুষ্ঠানে মোর্চার কার্শিয়াঙের বিধায়ক রোহিত শর্মার অভিযোগ, “আগে টয় ট্রেনে ৯টি কামরাও দেখা যেত। তখন কত যাত্রী হত! এখন রেল কর্তৃপক্ষ কামরা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে, যাত্রীও কমে গিয়েছে।” দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের কোনও মানচিত্র রেল কর্তৃপক্ষের কাছে নেই এবং কোথায়, তাঁদের কী সম্পত্তি রয়েছে তা রেল-কর্তারা জানেন না বলেও অভিযোগ করেন ওই মোর্চা বিধায়ক। যে সব কারণে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের উন্নতি আটকে যাচ্ছে বলে মোর্চা নেতৃত্ব মনে করেন, সেই সংক্রান্ত একটি লেখাও তিনি তুলে দেন রেলমন্ত্রীর হাতে।
প্রায় একই সুরে দার্জিলিঙের মোর্চা বিধায়ক ত্রিলোক দেওয়ানের মন্তব্য, “এই রেলের উন্নতি না হলে দার্জিলিঙে পর্যটন ব্যবসার উন্নতি হবে না। পাহাড়েরও যাতায়াত-ব্যবস্থারও উন্নতি হবে না। টয় ট্রেন পাহাড়ের সব চেয়ে ভাল পরিবহণগুলোর অন্যতম।”
টয় ট্রেন নিয়ে একই ধরনের কিছু অভিযোগ জানিয়ে রোশন গিরি রেলমন্ত্রীর কাছে দার্জিলিং মেল, কাঞ্চনকন্যা ও মহানন্দা এক্সপ্রেসকে সুকনার কাছে গুলমা স্টেশন থেকে ছাড়ার দাবি জানান। দার্জিলিঙের বাসিন্দাদের জন্য উত্তরবঙ্গের ট্রেনগুলিতে সংরক্ষিত আসন বাড়ানোর দাবি তোলেন। গুলমা স্টেশনের নাম বদলে দার্জিলিং রোড করার প্রস্তাব দেন।
টয় ট্রেনের পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন রেলমন্ত্রী। মুকুলবাবুর কথায়, “এখানে পরিকাঠামোগত অসুবিধা রয়েছে। তার সঙ্গে গত বছরের ভূমিকম্পে এই রেললাইনের একটা বিরাট অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উন্নতির কাজে অসুবিধা হচ্ছে। তবুও ২০১৩ সালের মধ্যে আবার শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত চলবে ট্রেন। তবে এই কাজের জন্য আগে রাস্তা মেরামত করতে হবে।” রাস্তা মেরামতির জন্য রেলের পক্ষ থেকে ‘ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি’র সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানান রেলমন্ত্রী। তাঁর বাকি বক্তব্য জুড়ে ছিল রেলের আগামী দিনের নানা পরিকল্পনার কথা। |