শিলিগুড়িতে কমিশনারেট উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী
শেষ পর্যন্ত ‘উৎকণ্ঠা’ কাটিয়ে চালু হল শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট (এসপিসি)। পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচির একদিন আগেই রবিবার সন্ধ্যায় এসপিসি-র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়ির পুলিশ লাইনের ওই মঞ্চ থেকেই রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের শিলিগুড়ি শাখার নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। জোড়া উদ্বোধনের পরে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “শনিবার ছিল পাহাড়ের দিন। আজ সমতলের, শিলিগুড়ির দিন। পাহাড়-সমতলে একযোগে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের রাস্তা মসৃণ করতে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর। তাই যে দ্রুততায় জিটিএ গঠিত হয়েছে, সে ভাবেই কমিশনারেট চালু করা হল।”
নতুন পুলিশ কমিশনারেট হওয়ায় বাসিন্দাদের কী কী সুবিধে হবে, সে কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় আগে পুলিশ অফিসার-কর্মী মিলিয়ে ৯০০ জন কাজ করছিলেন। এখন কমিশনারেট হওয়ায় ২২০০ জন কাজ করবেন। সেই সঙ্গে ১০০০ জন ‘গ্রিন পুলিশ’ নিয়োগ করা হবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ আরও ভাল করতে।” স্বভাবতই শিলিগুড়ির শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজে আগের চেয়েও বেশি গতি আসবে বলে মুখ্যমন্ত্রী বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করেন। পাশাপাশি, রেলমন্ত্রী মুকুল রায় আরআরবি-এর নয়া ভবন চালুর পরে বলেছেন, “পাহাড়ের মতো সমতলের মানুষের মুখেও এখন হাসি। কমিশনারেট হল। আরআরবি হল। আগামী মাসে মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গে আসার কথা রয়েছে। সেই সময়ে এনজেপির অ্যাকসেল কারখানার কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনার চেষ্টা হচ্ছে।”
সরকারি সূত্রের খবর, পাহাড়ে জিটিএ গঠনের আগের দিন, ৩ অগস্ট এসপিসি চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু, সরকারি তরফে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞপ্তি জারি না-হওয়ায় তা পিছিয়ে ৬ অগস্ট করার সিদ্ধান্ত হয়। ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে এসপিসি চালুর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে জলপাইগুড়ির দুজন আইনজীবী মামলা করেন। প্রধানত জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের অধীন ভক্তিনগর থানার অন্তর্ভুক্তি নিয়েই তাঁরা আপত্তি তুলেছেন। আজ, সোমবার সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে শনিবার দুপুরেই রাজ্য সরকারের তরফে নতুন কমিশনারেট গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। পূর্ব ঘোষণা মতো সে দিনই দার্জিলিং রেঞ্জের ডিআইজি আনন্দ কুমার পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর পরেই বাড়তি তৎপরতায় এসপিসি চালুর দিন এগিয়ে আনা হয়।
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: সন্দীপ পাল
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের কথায়, “একসময়ে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যাঁরা উন্নয়ন করতে পারেননি, তাঁদের একাংশ এখন নানা ভাবে বাধা দিতে চাইছেন। কিন্তু, আমজনতার কথা মাথায় রেখে সে সব বাধা কাটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়েছেন। শিলিগুড়িতে কমিশনারেটর করেছেন। আগামী মাসেই সার্কিট বেঞ্চের কাজের সূচনা করতে চাইছেন।” প্রসঙ্গত, অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীও জানিয়ে দেন, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তিনি নিজে কথা বলে সেপ্টেম্বরেই সার্কিট বেঞ্চের কাজের সূচনা করাতে চান।
এই দিন কমিশনারেটের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) সুরজিৎ করপুরকায়স্থকে দিয়ে কমিশনারের সঙ্গে বাসিন্দাদের পরিচয় করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। ডিজি বলেন, “পুলিশের জন্য আর একটি নতুন অধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই ইতিমধ্যে অত্যন্ত দ্রুত ৪টি কমিশনারেট হয়েছে। এটি পঞ্চম। এখানে ৫টি থানাকে আনা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৬৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ১০ লক্ষ ২০ হাজার মানুষকে পুলিশ আরও ভাল পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করবে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, শিলিগুড়িতে কমিশনারেট চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে মাস ছয়েক আগেই। শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন ৪টি থানা ও ভক্তিনগর থানা এলাকার জনসংখ্যা যোগ করলে দাঁড়ায় ১০ লক্ষের বেশি। বর্তমানে ভক্তিনগর থানার আওতায় থাকা ১৪টি ওয়ার্ড শিলিগুড়ি পুর এলাকার আওতায় রয়েছে। যে হেতু সিটি পুলিশ ডিস্ট্রিক্ট অর্থাৎ নতুন পুলিশ কমিশনারেট গড়তে ১০ লক্ষ অথবা ততোধিক জনসংখ্যা হওয়া বাধ্যতামূলক, সে জন্য ভক্তিনগরকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি মাথায় রেখে এগোয় রাজ্য সরকার। সেই মতো প্রস্তুতি সম্পূণর্র্ হয়।
এই অবস্থায়, জলপাইগুড়ির আইনজীবীদের তরফে আপত্তি তোলা হয়। জলপাইগুড়ি জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি তথা আইনজীবী সৈকত চট্টোপাধ্যায় সহ দু’জন হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। তাঁদের অভিযোগ, জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের আওতা থেকে ভক্তিনগর থানা এলাকাকে এসপিসি-তে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে। কমিশনারেট চালু হওয়ার পরে সৈকতবাবুর বক্তব্য, “কংগ্রেসের কর্মী হিসেবে বলতে পারি, আমরাও সরকারে রয়েছি। একটা বিষয়ে মামলা হয়েছে। তার পরেও শুনানির আগের দিন কমিশনারেট চালু করার জন্য তাড়াহুড়ো হল কেন, সেই প্রশ্ন আমাদের রয়েই যাচ্ছে। আমরা যা বলার হাইকোর্টে বলব।”
এদিকে, ভক্তিনগর থানাকে কমিশনারেটে অর্ন্তভুক্ত করার প্রতিবাদে রবিবার সন্ধ্যে থেকে রিলে অনশনে বসেছে জলপাইগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশন। সোমবার জেলা আদালতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অভিনন্দন চৌধুরী বলেন, “জলপাইগুড়ি জেলা থেকে ভক্তিনগর থানাকে শিলিগুড়ি কমিশনারেটে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে বার আসোসিয়েশন লড়াই আন্দোলন চালাচ্ছে। রবিবারই হঠাৎ করে কমিশনারেট উদ্বোধন করে দেওয়ার প্রতিবাদে রিলে অনশন শুরু হয়েছে। সোমবার আইনজীবীরা জেলা আদালতে কাজে যোগ দেবেন না।” ভক্তিনগর থানাকে কমিশনারেটে অর্ন্তভুক্তির বিরোধিতা করে গঠিত জলপাইগুড়ি উন্নয়ন মঞ্চের তরফে এদিন সন্ধ্যায় শহরে মিছিল করা হয়। সোমবার প্রতিবাদ দিবস পালন করা হবে বলে ঘোষণা করেছে মঞ্চ।
এই দিন জলপাইগুড়ি যেখানে আন্দোলনে নেমেছে, সেখানে শিলিগুড়িতে এই দিন শাঁখ বাজিয়ে কমিশনারেটকে স্বাগত জানানো হয়।

শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট
মোট থানা পাঁচটি
দার্জিলিং জেলার থানা
শিলিগুড়ি থানা
• খালপাড়া ফাঁড়ি
• পানিট্যাঙ্কি ফাঁড়ি
প্রধাননগর থানা মাটিগাড়া থানা
• মেডিক্যাল ফাঁড়ি
বাগডোগরা থানা
জলপাইগুড়ি জেলার থানা
ভক্তিনগর থানা
• এনজেপি ফাঁড়ি
• আমবাড়ি-ফালাকাটা ফাঁড়ি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.