আইন বিষয়ে সচেতনা বাড়াতে রবিবার ফরাক্কার নবারুণে নজরুল ভবনে হয়ে গেল একটি শিবির। উপস্থিত ছিলেন জঙ্গিপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক পুলককুমার তিওয়ারি। তিনি বলেন, “আজকাল স্বামী-স্ত্রীর ছোট ঝামেলাও আদালত পর্যন্ত গড়াচ্ছে। গ্রামের ছোট ঝামেলা কিংবা ভাইয়ে-ভাইয়ে ভুল বোঝাবুঝিতেও মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এতে এক দিকে যেমন সময় নষ্ট হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে টাকা, তেমনি আদালতে জমা পড়ছে পাহাড় প্রমাণ মামলা। এই ভার লাঘব করতে সচেতন হতে হবে সাধারণ মানুষকেই। পারিবারিক ঝামেলার ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে মহকুমা স্তরেই মীমাংসা করা সম্ভব। এতে এক দিকে যেমন নিখরচায় মানুষ বিচার পাবেন, তেমনি আদালতে মামলার সংখ্যাও কমে আসবে।” জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক শৈলেন্দ্রকুমার সিংহ ও সাব জজ মৌ মুখোপাধ্যায়ও মনে করেন, মানুষের কাছে বিচার পাওয়ার রাস্তাটা সহজ করতে হবে।” ফরাক্কার বিধায়ক মইনুল হক বলেন, “মানুষকে সচেতন করতে না পারলে শিবিরের উদ্দেশ্যই সার্থক হবে না। মামলার সংখ্যা কমাতে গেলে যেতে হবে প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে। ফরাক্কার বাহাদুরপুর, বেওয়া, পদ্মার চর এলাকায় অশিক্ষা মানুষকে এখনও পিছিয়ে রেখেছে। সেখানে গিয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।” মইনুলের মতে, বছরে একবার হলেও যদি পঞ্চায়েতগুলিতে লোক আদালত বসিয়ে বিরোধ মেটানোর ব্যবস্থা করা হয়, তা হলেই আদালতে মমালা যেমন কমে, তেমনই মানুষের দুর্দশার মুক্তি ঘটে। ফরাক্কার আইনজীবী রবিউল আলম বলেন, “মামলা জমলে সমস্যায় পড়বেন মানুষই। আইন বিষয়ে সচেতন করতে হবে গ্রামের মানুষকে।”
জেলার সরকারি আইনজীবী দেবাশিস রায় বলেন, “মুর্শিদাবাদে লক্ষাধিক মামলা জমে থাকার মূল কারণ ৭১ লক্ষ ঘনবসতির জেলায় আদালতের সংখ্যা কম হওয়াটাই। কয়েকটি আদালতে বিচারকই নেই।” তিনি জানান, বেশিরভাগ মামলার তারিখ পড়ছে ছয় বা সাত মাস পর পর। ছোটখাট মামলার নিষ্পত্তি হতেও তাই চার থেকে পাঁচ বছর গড়িয়ে যাচ্ছে। সরকারি স্তরে তাই যেমন জেলায় আদালতের সংখ্যাবৃদ্ধির চিন্তাভাবনা চলছে তেমনই গ্রামীণ ন্যায়ালয় স্থাপনেরও চেষ্টা চলছে। পরিকাঠামো বাড়লেই মামলা কমবে। ফরাক্কার আইনজীবী রবিউল আলম বলেন, “মানুষের কাছেই আইনের সুযোগ পৌঁছে দিতে হবে।”
এই মুহূর্তে মুর্শিদাবাদে ৫টি মহকুমার মধ্যে ডোমকলে কোনও মহকুমা আদালত নেই। জেলায় ৪টি মহকুমায় ৪৯টি আদালতে সরকারি সূত্রে গত বছরের শেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট ৭৩,১৩৩টি ফৌজদারি এবং ২৬,২৫১টি দেওয়ানি মামলা মিলিয়ে ৯৯ হাজার ৩৮৪টি মামলা জমে রয়েছে। জমে থাকা মামলার সংখ্যা সব থেকে বেশি বহরমপুরে। জেলা সদরের ১৯টি আদালতের মধ্যে দেওয়ানি মামলা জমে রয়েছে ১৩ হাজার ৪৮৪টি। ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ৩১ হাজার ৫০৩টি। এরপরেই রয়েছে লালবাগ মহকুমা আদালত। সেখানে জমে থাকা দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ৬৯৭০টি। ১১ হাজার ৯৪৯টি ফৌজদারি মামলা জমে রয়েছে সেখানে। জঙ্গিপুর ও কান্দিতে এই সংখ্যা ১৬ হাজার ৫৮৪ ও ১৮ হাজার ৮৯৪। একক আদালত হিসেবে জমে থাকা মামলার সংখ্যাও সব থেকে বেশি বহরমপুর জেলা জজ ও বিশেষ আদালতে। এ বছর সংখ্যাটা আরও বেড়েছে। |