নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না ডেবরা ব্লকে। এ বার একটি গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীকে চাপে রাখতে বৈঠক ডাকল রবিবার। আর বৈঠক শেষে ঘোষণা করা হল, বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা না নিলে পদত্যাগ করবেন খানামোহন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েত সদস্যরা!
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে ফের উঠে আসছে বহিষ্কৃত প্রাক্তন তৃণমূল ব্লক সভাপতি অলোক আচার্যের নাম। আগে ডেবরা ব্লকে তৃণমূলের ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন অলোক আচার্য। যদিও বিধানসভা নির্বাচনে অলোকবাবু টিকিট পাননি। পরিবর্তে রাধাকান্ত মাইতিকে প্রার্থী করেছিল দল। তিনি জয়ীও হন। কিছু দিন যেতে না যেতেই অলোকবাবুর সঙ্গে তাঁর বিবাদ বাধে। ধীরে ধীরে দু’টি গোষ্ঠী তৈরি হয়। যে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই বিবাদ লেগেই থাকত। এমনকি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। তাই জুন মাসের শেষের দিকে রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে ৬ মাসের জন্য অলোক আচার্যকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরিবর্তে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা রতন দে-কে। ক্রমশ অলোক আচার্যের পরিবর্তে ডেবরায় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হয়ে দাঁড়ায় সভাপতি ও বিধায়কের গোষ্ঠী। |
কিছুদিন আগেই খানামোহন গ্রাম পঞ্চায়েতের সভাপতি চিত্ত দে-কে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরিবর্তে বিমল পড়িয়া ও বলরাম মান্নাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তারপরই ফের ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে অলোক আচার্য গোষ্ঠীর সদস্যরা। রবিবারে খানামোহন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার শ্যামসুন্দরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৈঠক করে তৃণমূলের এই গোষ্ঠী। বৈঠক শেষে খানামোহন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি সভাপতি চিত্ত দে বলেন, “বর্তমান বিধায়ক ও ব্লক সভাপতি দলকে সিপিএমের হাতে তুলে দিতে চাইছে। পুরনো নেতা-কর্মীদের সরিয়ে সিপিএম ঘনিষ্ঠদের নিয়ে দল চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ চলছে। অলোক আচার্যের মতো সাংগঠনিক নেতাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমাকে সরানো হয়েছে। এর প্রতিবাদে সরব হতেই মিটিং ডেকেছিলাম। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এক মাসের মধ্যে দল কোনও ব্যবস্থা না নিলে আমরা সকলে দলের পদ থেকে ইস্তফা দেব।” একই কথা জানিয়েছেন খানামোহন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান নিতাইচাঁদ মাইতি, পঞ্চায়েত সদস্য হরিপদ মাইতিরা। তাঁদের দাবি, “বর্তমান ব্লক সভাপতি ও বিধায়কের স্বৈরাচারী ভূমিকার কথা জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েও কোনও সুফল মেলেনি। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে এ বার পুরো ডেবরা ব্লকই এককাট্টা হচ্ছে। এরপরেও ব্যবস্থা না নিলে সকলেই দল থেকে বেরিয়ে আসবে।”
এ বিষয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি ব্লক সভাপতি রতন দে, জেলা সভাপতি দীনেন রায়। বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, “শুনেছি আমার নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে কিছু মানুষ। তা প্রমাণ করে জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের কাছে জানিয়ে শাস্তির দাবি জানাক। দল যা শাস্তি দেবে মেনে নেব।” ডেবরা ব্লক থেকে আসা জেলা কোর কমিটির নেতা বিবেক মুখোপাধ্যায় বলেন, “শুনেছি একটা মিটিং হয়েছে। তবে এই ধরনের কাজ উচিত নয়। দলের মূলস্রোতে থেকেই সকলের কাজ করা উচিত। প্রয়োজনে দলের ভেতরে প্রতিবাদ করবে। কিন্তু তা প্রকাশ্যে এনে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়।” |