নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বধূ অপমৃত্যুর একটি মামলায় তদন্তকারী অফিসারের (আইও) ‘ভূমিকা’ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করল মেদিনীপুর আদালত। ওই মামলায় নতুন তদন্তকারী অফিসার নিযুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে জেলা
পুলিশ সুপারকে।
গত শুক্রবার মেদিনীপুর শহরে এক বধূর অপমৃত্যু হয়। মৃতার নাম দেবী চক্রবর্তী (৩০)। শ্বশুড়বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। রাতেই মৃতার বাপের বাড়ির তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়, স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনই ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দিয়েছেন ওই বধূকে। অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে স্বামী রিঙ্কু চক্রবর্তী-সহ অভিযুক্ত শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক। রিঙ্কবাবুর একটি বই প্রকাশনা সংস্থা রয়েছে। ওই সংস্থার দু’জন কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের শনিবার দুপুরে মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হয়েছিল। এঁদের মধ্যে এক জনকে পুলিশ হেফাজতে চেয়ে সরকারপক্ষের তরফে আদালতের কাছে আবেদন করা হয়। বেলা আড়াইটা নাগাদ মামলাটি আদালতে ওঠে। তখন মামলার তদন্তকারী অফিসার দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় সেখানে ছিলেন না। সরকারপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নাজিম হাবিব এ জন্য সময় চেয়ে নেন। পরে ফের দু’বার মামলাটি ওঠে। তখনও তদন্তকারী অফিসার আদালত কক্ষে এসে পৌঁছননি। শেষমেশ বিকেল ৩টে নাগাদ তিনি আসেন।
মামলাটি উঠলে ধৃতদের এক জনকে পুলিশ হেফাজতে চাওয়া হচ্ছে কেন, সরকারপক্ষের আইনজীবীর কাছে তা জানতে চান সিজেএম কল্লোল দাস। কিন্তু তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে সরকারপক্ষের আইনজীবী আগে কোনও কথা বলতে না পারায় বিচারকের প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থ হন। সরকারপক্ষের আইনজীবী জানান, তদন্তকারী অফিসার তাঁর সঙ্গে দেখাই করেননি। তখন অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারক। মামলার কাগজে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মূল অভিযুক্ত অন্যত্র পালিয়ে গিয়েছেন। তাঁকে খোঁজার জন্য এক জনকে হেফাজতে প্রয়োজন। বিচারক সেই আবেদন খারিজ করে ধৃতদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সঙ্গে এই মামলায় নতুন তদন্তকারী অফিসার নিয়োগ করার কথাও বলেন বিচারক।
আদালত সূত্রে খবর, এমন পরিস্থিতি আগেও হয়েছে। সরকারপক্ষের আইনজীবীর সঙ্গে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের যোগাযোগের অভাবে অনেক সময় বিড়ম্বনা বাড়ে। আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে কখনও বিড়ম্বনায় পড়েন সরকারপক্ষের আইনজীবী, কখনও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়ে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারকে। বিচারকের সামনে কোনও একটি প্রসঙ্গকে কেন্দ্র করে এই দু’পক্ষের ‘মতানৈক্য’ হচ্ছে, এমন ঘটনাও নজিরবিহীন নয়। এমন সমস্যা এড়ানোর জন্যই বৈঠকের উপর জোর দেওয়া হয়। তবে এই বৈঠক নিয়মিত হয় না। জেলায় ডিস্ট্রিক্ট লেভেল মনিটারিং ক্রিমিনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিটি রয়েছে। সাধারণত, তিন মাস অন্তর এক বার বৈঠকে বসে এই কমিটি। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে সরকারপক্ষের আইনজীবীদের যোগাযোগ না-থাকলে এমন সমস্যা হবেই। কোন মামলার ক্ষেত্রে কোথায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে, কাগজপত্র তৈরির ক্ষেত্রে কোনও ত্রুুটি থেকে যাচ্ছে কি না, ভুল হয় থাকলে কী ভাবেই বা তা সংশোধন করা হবে, এই সব দেখতে সমন্বয় জরুরি। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, ওই মামলার ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ দেখে পদক্ষেপ
করা হবে। |