গরু পাচার করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের কাছে বাধা পেয়ে এক গ্রামবাসীকে প্রচণ্ড মারধর করেছিল পাচারকারীরা। ঘটনাটি ঘটেছিল দিন কয়েক আগে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর সীমান্তে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুবল মণ্ডল নামে ওই ব্যক্তি কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে শনিবার রাতে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর ঘটনা ঘটল ওই একই সীমান্তে। পুলিশ জানিয়েছে, স্বরূপনগরের কৈজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধার নাম সুমতি সরকার (৬৮)। সীমান্ত এলাকায় গরু পাচারে বাধা দিতে গিয়ে যে ভাবে পাচারকারীদের হাতে গ্রামবাসীরা অত্যাচারিত হচ্ছেন। তাঁদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে তাতে বড় ধরনের গোলমালের আশঙ্কা করছে প্রশাসন। তার উপর বৃদ্ধার মৃত্যুর ঘটনা সেই আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়ছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর সম্প্রতি বসিরহাট মহকুমার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি দিয়ে ব্যাপক হারে গরু পাচার শুরু হয়েছে। পুলিশ এবং বিএসএফ অভিযান চালিয়ে সম্প্রতি বেশ কিছু গরু আটক করলেও পাচার অব্যাহত রয়েছে। কয়েক মাস আগে স্বরূপনগর এলাকাতেই গরু পাচারকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা সোনাই নদী পেরিয়ে এপারে বিএসএফ জওয়ানদের উপরে চড়াও হয়ে মারধর করে। এমনকী বিএসএফ চৌকি ভাঙচুর ও সরঞ্জাম লুঠ করে তারা। দুষ্কৃতীদের প্রহারে গুরুতর জখম এক বিএসএফ জওয়ান পরে মারা যান। এই ঘটনার পর গ্রামবাসী, পুলিশ এবং বিএসএফ আলোচনায় ঠিক করে সকলে মিলে একযোগে গরু পাচার রুখতে কাজ করবেন। জেলার পুলিশ সুপারের নির্দেশে বসিরহাটের কয়েকটি জায়গায় বাঁশ বেঁধে এ জন্য চেকপোস্টও তৈরি করা হয়। কিন্তু তার পর দু’চারটি গরু ধরা এবং বাংলাদেশি আটক করা ছাড়া কাজের কাজ যে বিশেষ কিছু হয়নি তার প্রমাণ মাঝেমধ্যেই সীমান্ত পেরিয়ে এ পারে এসে দুষ্কৃতীদের হামলা এবং প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে গরুভর্তি গাড়ি ওপারে চলে যাওয়া। দুষ্কৃতীদের এমন বাড়বাড়ন্ত নিয়ে বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি গুলি চালনার বিষয়ে কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় প্রতিরাতে দুষ্কৃতীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দলে দলে এ পারে এসে গরু নিয়ে চলে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষ বাধা দিলে তাঁদের উপরে হামলা চালাচ্ছে। যার প্রমাণ, শনিবার রাত ৮টা নাগাদ এলাকা দিয়ে গরু পাচারের সময় জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন বৃদ্ধা সুমতিদেবী। গরুর পালের পায়ের চাপে এবং শিঙের গুঁতোয় গুরুতর জখম হন তিনি। তাঁকে বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান তিনি। ঘটনার পরদিন রবিবার বিএসএফের ১৫২ নম্বর ব্যাটালিয়নের জওয়ানেরা ঘটনাস্থলে গেলে বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। সুমতিদেবীর ছেলে নিতাইবাবু বলেন, “পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে সন্ধের পর বাড়ি থেকে বের হওয়াই যায় না। মা শৌচালয়ে যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন। সেই সময় পাচার হওয়া গরুর পালের সামনে পড়ে পিষে যান।”
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সীমান্তে দুষ্কৃতীদের অত্যাচারে তাঁরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। মাঠের ফসল নষ্ট করে গরু পাচার করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলেই মারধর, বোমাবাজি এমনকী প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। জোর করে, ভয় দেখিয়ে বাড়ির গোয়ালে পাচার জন্য আনা গরু রেখে দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। সীমান্তরক্ষীরাও ওই সব দুষ্কৃতীদের ভয় পায়। ফলে প্রশাসনের সর্বস্তরে জানিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না।
কৈজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য পরিতোষ সরকার বলেন, “গরুর পায়ের চাপে বৃদ্ধার মৃত্যুর ঘটনা বুঝিয়ে দেয় কী ভাবে গরু পাচার বেড়েছে এই এলাকায়। দুষ্কৃতীদের ভয়ে মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। তার উপর বিএসএফ-এর গুলি চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। দুষ্কৃতীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সমস্যাক কথা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।” |