|
|
|
|
তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেলপথ |
জমির দাম নিয়ে টানাপোড়েন |
পীযূষ নন্দী • গোঘাট |
জমির ‘উপযুক্ত’ মূল্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন চাষিরা। তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসে জমি-জট কাটাতে চায় প্রশাসন। সমস্যা না মিটলে তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেলপথের কাজে সমস্যা হচ্ছে। জমির ‘ন্যায্য মূলের’ দাবিতে ২০১০ সালের জুন মাস থেকে আন্দোলন করছেন গোঘাটের অমরপুর মৌজার চাষিরা। তৈরি হয়েছে ‘রেল চালাও গ্রাম বাঁচাও কমিটি।’
তারকেশ্বর থেকে বিষ্ণুপুর পর্যন্ত রেলপথের জন্য ৮২ কিলোমিটার রেল লাইন পাততে হবে। অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। আরামবাগ থেকে তারকেশ্বরের মধ্যে ২৫ কিলোমিটার পথে ট্রেন চলা শুরুও হয়ে গিয়েছে। বিষ্ণুপুর থেকে বাঁকুড়ার গোকুলনগরের মধ্যে ১৭ কিলোমিটার অংশেও ট্রেন চলছে। আপত্তি এসেছে শুধু গোঘাট ২ ব্লকের অমরপুর মৌজায়। এই অংশে প্রায় ২ কিলোমিটার রেললাইন পাতার কথা। সম্প্রতি আরামবাগে রেলের উদ্বোধনে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে গিয়েছিলেন, জমি-জট মেটাতে চাষিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে প্রশাসন। সেই আলোচনারই সূত্রপাত হয়েছে গত বুধবার। গোঘাট ২ ব্লকের প্রেক্ষাগৃহে ওই দিন অমরপুর মৌজার প্রায় ১৮০ জন চাষির সঙ্গে কথা বলেছেন হুগলি জেলার বিশেষ ভূমি অধিগ্রহণ আধিকারিক অঘোর রায়। উপস্থিত ছিলেন গোঘাট ২ বিডিও শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত-সহ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকেরা।
এর আগে চাষিদের দাবি ছিল, বিঘা-প্রতি ন্যূনতম ১৫ লক্ষ টাকা দর দিতে হবে। কাঠা-পিছু দাম চাই ৭৫ হাজার টাকা। ২০১০ সালের শুনানিতে জমির মূল্য ধার্য্য হয়েছিল বিঘা-পিছু ২ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ, কাঠা-পিছু ১৪,৬৫০ টাকা।
বুধবার চাষিদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতেই অঘোরবাবু জানিয়ে দেন, সরকারি সিদ্ধান্ত মতো বিঘা-পিছু আরও ৪০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এই হিসাবে বিঘা-প্রতি জমির দাম ধার্য্য হয়েছে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।
কিন্তু ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই চাষিরা প্রতিবাদে সরব হন। তাঁরা জানান, ২০১০ সালেই অমরপুর মৌজায় ৮০ হাজার টাকা কাঠা দরে জমি বিক্রি হয়েছে। সেই দলিলের ফটোকপিও প্রশাসনকে দেখান তাঁরা।
ওই চাষিরা আরও জানান, মাত্র দু’কিলোমিটারের মধ্যে কামারপুকুর মৌজায় রেল জমি নিয়েছে ৯৬ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা প্রতি-কাঠা দামে। এ ছাড়া, অমরপুর মৌজার উর্বর জমিতে বছরে তিন বার চাষ হয়। বেশ কিছু জমিতে বছরে চার বারও চাষ হয়। এখানকার ৯৯ শতাংশ মানুষ জমি ও কৃষিকাজের উপরে নির্ভরশীল। সরকার নির্ধারিত মূল্যে তাঁরা কেউ জমি দিতে চান না বলে চাষিরা জনে জনে প্রশাসনকে জানিয়ে দেন। কাঠা-প্রতি ৭৫ হাজার টাকা এবং বিঘা-প্রতি ১৫ লক্ষ টাকা দামের দাবিতেই অনঢ় তাঁরা। গত দু’বছরে ওই মৌজায় জমি বিক্রির নথিপত্র-সহ চাষিদের নতুন করে আবেদন করার পরামর্শ দেন আধিকারিকেরা। জমি অধিগ্রহণ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক আর অ্যালিয়াস ভেজ বলেন, “বৈঠকের রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”
অমরপুর মৌজার চাষিদের বেশির ভাগেরই ২-১ বিঘা জমি। সামান্য কয়েক জনের ৪-৬ বিঘা পর্যন্ত জমি আছে। রেলের প্রস্তাব মতো, প্রদীপ কাইতি ১০ কাঠা জমি অধিগ্রহণ হওয়ার কথা। সুখেন্দু মান্নার জমি যাবে প্রায় ২ বিঘা। সুভাষ ঘোড়ুইয়ের ৩ বিঘা, আশিস খাঁয়ের দেড় বিঘা এবং প্রদীপ রায়ে ৪ বিঘা জমিও অধিগ্রহণের জন্য চিহ্নিত হয়েছে। সকলেরই বক্তব্য, “উন্নয়নের স্বার্থে জমি আমরা দিতে চাই। কিন্তু ন্যায্য দামও চাই। সকলের পরিবারই চাষের উপরে নির্ভরশীল। রেলের প্রকল্পে জমি দিয়ে আমাদের অন্যত্র জমি কিনতে হবে। মৌজার অন্যত্র ৭৫ হাজার টাকা কাঠার নীচে জমি পাওয়া মুশকিল। তা ছাড়া, রেলপথ তৈরির কাজ শুরু হতেই জমির দামও বাড়ছে।”
এ বিষয়ে আন্দোলনকারীদের তৈরি করা কমিটির সম্পাদক প্রদীপ কাইতি বলেন, “এই আন্দোলনের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। এটা গ্রামবাসীদের আন্দোলন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
কাগজ না থাকায় আটক আলুর ট্রাক। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় হুগলির আরামবাগের দৌলতপুর থেকে বিহারে নিয়ে যাওয়ার পথে ৩৯৫ বস্তা আলু বোঝাই একটি ট্রাক আটক করল পুলিশ। শনিবার বর্ধমানের মেটাল ডিভিসি-র কাছে ঘটনাটি ঘটে। পরে ওই ট্রাকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এসপি সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “কাগজপত্র না দেখাতে পারায় ট্রাকের চালক, বিহারের সমস্তিপুরের ওড়িশিনগরের হাতি গ্রামের বাসিন্দা দিলীপকুমার মাহাতোকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই আলুর কিছুটা চাষির নামে বন্ডে থাকলেও, অন্য কোনও ব্যক্তি সেগুলি বিহারে পাঠাচ্ছিল।” ঘটনার তদন্ত করে চাষিদের নামে বিভিন্ন হিমঘরে মজুত থাকা আলু তাঁদের অজ্ঞাতসারে অন্যত্র পাচারের একটি বড় চক্রকে চিহ্নিত করা যাবে বলেও মনে করছে জেলা পুলিশ। |
|
|
|
|
|