মানেসরে মারুতির কারখানায় গোলমালের ঘটনা অনভিপ্রেত। তবে এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বরং হরিয়ানার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট ভাল। রবিবার শহরে এসে এই দাবি করলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা। পাশাপাশি তিনি এটাও স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, অন্য রাজ্য মারুতি-সুজুকিকে আমন্ত্রণ জানালেও, মানেসর থেকে কারখানা সরাবে না দেশের বৃহত্তম গাড়ি সংস্থাটি। কারণ এ ব্যাপারে তারা রাজ্য সরকারকে আশ্বাস দিয়েছে। শীঘ্রই কারখানাটি চালু হবে বলেও এ দিন দাবি করেছেন তিনি।
গোলমালের জেরে গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে মারুতির মানেসর কারখানা বন্ধ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গাড়ি সংস্থাটির লগ্নি পেতে তৎপর হয়েছে গুজরাত, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য। গত সপ্তাহেই শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, মারুতিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে রাজ্য।
|
শহরে হরিয়ানার
মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র |
এ দিন মাচ্র্ন্টস চেম্বারের সভায় শিল্পমহলের মুখোমুখি হন হুডা। স্বাভাবিক ভাবেই মারুতি প্রসঙ্গও ওঠে সেখানে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ দেশেরই একটি রাজ্য। তারা ওদের চিঠি দিতেই পারে। কিন্তু মারুতি-সুজুকি কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছেন, ওঁরা মানেসর ছেড়ে যাবেন না।’’
বস্তুত হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, মারুতির একটি ঘটনা দিয়ে রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতিকে বিচার করা উচিত নয়। বরং অপরাধপ্রবণতা বা শ্রম দিবস নষ্ট হওয়ার ঘটনা হরিয়ানায় সবর্নিম্ন। পাশাপাশি হরিয়ানা যে গাড়ি শিল্পের অন্যতম বৃহৎ কেন্দ্র, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
মানেসরে গোলমালের ঘটনার জেরে রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। বিশেষ তদন্তকারী দল গোটা ঘটনার তদন্ত করছে। হুডার দাবি, মারুতি কর্তৃপক্ষ তাতে সন্তুষ্ট। শীঘ্রই কারখানা খোলার ব্যাপারে আশাবাদী হলেও হুডা অবশ্য এ দিন নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা জানাননি।
হরিয়ানা যে লগ্নির অন্যতম গন্তব্য, হুডা এ দিন উদাহরণ দিয়ে তা তুলে ধরেন। তেমনই নয়া শিল্পনীতিরও ব্যাখ্যা দিয়ে লগ্নিকারীদের আস্থা পেতে কসুর করেননি তিনি।
সেই প্রসঙ্গেই এসেছে জমির সমস্যার কথাও। শিল্প নিজেই জমি কিনবে, নাকি সরকার অধিগ্রহণ করবে, প্রশ্ন ছিল সেই বিতর্ক ঘিরেই। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যখন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্য বেসরকারি শিল্পের জন্য কোনও জমি অধিগ্রহণ আর করবে না। সরকারকে বাদ দিয়ে শিল্পের পক্ষে জমি পাওয়া কি সম্ভব, সেই প্রশ্ন ছিল হুডার কাছে। জবাবে তিনি জানান, নীতিগত ভাবে সাধারণত তাঁরাও শিল্পকে নিজেদের জমি জোগাড় করতেই পরামর্শ দেন। তবে একই সঙ্গে যদি কোনও শিল্প প্রকল্প সমস্যায় পড়ে, বিশেষ করে বড় শিল্পের ক্ষেত্রে জমি পেতে সমস্যা হয়, তা হলে সরকার বাকি জমির সংস্থানে লগ্নিকারীদেকে সাহায্য করে।
তবে নিজে কৃষক পরিবারের সদস্য বলে কৃষকদের আবেগের কথাটাও উড়িয়ে দেননি হুডা। সেই সূত্রেই জমিদাতাদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে নয়া শিল্পনীতিতে হরিয়ানা সরকার ক্ষতিপূরণ ছাড়াও একাধিক ব্যবস্থা রেখেছে। যেমন ৩৩ বছর ধরে অ্যান্যুইটি প্রদান, কিংবা প্রকল্প এলাকায় জমি উন্নত করে সেখানাকার একাংশ বাণিজ্যক ব্যবহারের জন্য জমিদাতাদের দেওয়ার কথাও ভাবা হয়েছে। উল্লেখ্য, সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় তৎকালীন বাম সরকারও টাটা মোটরস-এর প্রকল্প এলাকার কিছুটা এ ভাবে বাণিজ্যক ব্যবহারের জন্য জমিদাতাদের দেওয়ার কথা বলেছিল
বহুপণ্যের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির পক্ষেও এ দিন সওয়াল করেন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী হুডা। তবে এটা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সিদ্ধান্তের উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। এবং যে সব রাজ্য এই সিদ্ধান্তের পক্ষে, কেন্দ্রের সেখানে বিদেশি লগ্নিতে সায় দেওয়া উচিত বলে এ দিন ইঙ্গিত দেন তিনি। |