আগামী লোকসভা নির্বাচন নিয়ে ব্লগে ভবিষ্যদ্বাণী করে নিজের দলকেই অস্বস্তিতে ফেলে দিলেন বিজেপি-র অন্যতম শীর্ষ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী।
আজ তাঁর ব্লগে আডবাণী লিখেছেন, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের কোনও একটির সমর্থনে কোনও অ-কংগ্রেসি বা অ-বিজেপি ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। এই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। সে কথা উল্লেখ করে আডবাণীর মন্তব্য, “তবে এমন সরকার কখনওই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।”
রাজনীতির কারবারিদের অনেকেরই ব্যাখ্যা, আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র যে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নেই, সেটাই ঘুরপথে কবুল করে নিলেন আডবাণী। স্বাভাবিক ভাবেই সেই ব্যাখ্যা গ্রহণ করে আজ বিজেপি-কে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস। দলীয় মুখপাত্র বলেছেন, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই আডবাণী হার স্বীকার করে নিয়েছেন।’ আর বিজেপি নেতারা নানা ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, আডবাণী ঠিক ও কথা বোঝাতে চাননি।
আডবাণী নিজেও আজ বলেন, “আমি এক বারও বলিনি যে বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না। দেশে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা দ্রুত কমছে। কিন্তু সেই সঙ্গে বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বের উপরেও দেশবাসী হতাশ। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই এই সুযোগে কোনও আঞ্চলিক নেতা প্রধানমন্ত্রী হতেই পারেন।”
এই ধরনের সরকারের উদাহরণও ব্লগে তুলে ধরেছেন আডবাণী। তিনি জানিয়েছেন, এর আগে চন্দ্রশেখর, এইচ ডি দেবগৌড়া এবং আই কে গুজরাল প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন কংগ্রেসের সমর্থনে। আবার ভি পি সিংহ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বিজেপি-র সমর্থনে। দৃষ্টান্ত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আডবাণীর দাবি, এই সব সরকার স্বল্পায়ু হয়। আর কংগ্রেস বা বিজেপির সমর্থন ছাড়া তারা বাঁচেও না।
তবে বক্তব্যের যে ব্যাখ্যাই করুন না কেন, তাঁর অ-বিজেপি (এবং অ-কংগ্রেস) প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাবনার কথা দলে তথা এনডিএ শিবিরে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। এনডিএ নেতাদের কেউ কেউ অবশ্য আডবাণীর মন্তব্যের মধ্যে অন্য ‘কৌশলের’ গন্ধ পাচ্ছেন। তাঁরা মনে করছেন, দল নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে পারে বলে যে সম্ভাবনা সম্প্রতি তৈরি হয়েছে, এই ভাবে তাকে কার্যত খারিজ করলেন আডবাণী। মোদীর পাশ থেকে সরে দাঁড়ানোর কৌশলই নিলেন তিনি।
মোদীকে প্রার্থী করা হবে কি না, তা নিয়ে এনডিএ-র মধ্যে মতভেদ প্রবল। জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে মোদীর তিক্ততা সুবিদিত। আগের লোকসভা ভোটে বিহারে মোদীকে প্রচারে আসতে কার্যত মানা করে দিয়েছিলেন নীতীশ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর নাম ওঠায় নিজের উষ্মা চেপে রাখেননি তিনি। জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের ভোটে এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কোনও ধর্মনিরপেক্ষ নেতাকেই তুলে ধরা হোক। এই নিয়ে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। তার পরে গডকড়ী জানান, মোদীকে প্রার্থী করা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সে কথাটা তিনি নীতীশকে জানিয়ে দিয়েছেন। এর পরপরই আডবাণীর এই ব্লগ নীতীশের হাত শক্ত করার পাশাপাশি এনডিএ জোটকেও শক্ত করার চেষ্টা করল বলেই মনে করা হচ্ছে।
দলের অন্য অংশের অবশ্য ধারণা, এ কথা বলে শীর্ষ নেতৃত্বকে চাপে রেখে দলে নিজের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করছেন এই প্রবীণ নেতা। দল যে চাপে পড়েছে, সেটা আজ ভাল ভাবেই বোঝা গিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আগরায় চিন্তন বৈঠকের ফাঁকে মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, “বিজেপি এবং এনডিএ-র মধ্যে মতবিরোধ নেই। লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি এবং এনডিএ একসঙ্গে বসে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঠিক করবে।” ব্লগের ব্যাখ্যা দিয়ে রাজনাথ সিংহ বলেছেন, আডবাণী বলতে চেয়েছেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-ই একক দল হিসেবে ক্ষমতায় আসবে।
এত বিবৃতিতেও অবশ্য অস্বস্তি কাটেনি। কটাক্ষ করতে ছাড়েননি কংগ্রেস নেতারা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব শুক্ল যেমন বলেন, “আমার মনে হয় গত লোকসভা ভোটেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। বিজেপি-র ইচ্ছে অনুযায়ী মানুষ তাদের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন।” আর এক কংগ্রেস নেতা সত্যব্রত চর্তুবেদী বলেন, “আডবাণীর মন্তব্য তাঁর দলের অন্তর্দ্বন্দ্বকেই সামনে আনল।” |