সামান্য অসুস্থতার কথা বললেই পথ্যের বাহানা দিয়ে আবাসিক ছাত্রীদের মাদক খাইয়ে দিতেন তিনি। তারপর, প্রায় বেঁহুশ ছাত্রীদের উপরে অবাধে শ্লীলতাহানি করতেন। তিনি আর কেউ নন, কালিয়াচকের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রধান শিক্ষক। শুক্রবার তাঁর বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করেছে ওই স্কুলের তিন আবাসিক ছাত্রী।
সরকারি হোমগুলিতে মহিলা আবাসিকদের উপরে ‘অত্যাচারের’ ঘটনা ক্রমান্বয়ে সামনে এসে পড়েছে। এই অবস্থায়, আবাসিক ছাত্রীদের উপরেও ‘শ্লীলতাহানির’ এমন অভিযোগ বাস্তবিকই অস্বস্তিতে ফেলেছে সরকারকে। নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের গলায় তাই স্পষ্টই উদ্বেগ, “পড়তে এসে বাচ্চা মেয়েগুলো এ ভাবে অত্যাচারের শিকার হতে পারে না! যে ভাবে হোক ওই শিক্ষককে খুঁজে বের করে ঘটনার সত্যতা জানতে হবে।”
অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ওই স্কুলে হানা দিলেও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক তথা আবাসিক স্কুলের কর্ণধারের খোঁজ মেলেনি। এর পিছনে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেন? নাজিব আলি তৃণমূলের স্থানীয় কোর কমিটির সদস্য। এলাকায় তার প্রতিপত্তিও যথেষ্ট। দায় এড়াতে পুলিশ ওই প্রধান শিক্ষককে ‘পালানোর পথ’ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ। জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “অভিযোগ পেয়েই পুলিশ ওই প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে হানা দিয়েছিল। কোনও ভাবে খবর পেয়ে তিনি পালিয়ে গিয়েছেন।” তিনি জানান, আবাসিক ছাত্রীরা ছাড়াও এলাকার লোকের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। সাবিত্রীদেবীর মন্তব্য, “অভিযুক্ত কোন দলের সেটা বড় কথা নয়। যে দলেরই হোক না কেন তাকে গ্রেফতার করতে হবে।”
পুলিশ খোঁজ না পেলেও ওই শিক্ষককে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র চলছে। ছাত্রীদের নিজের মেয়ের মত স্নেহ করি। কারও কোনও অসুবিধা শুনলে রাতে হস্টেলে যাই ঠিকই। কিন্তু ওদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করিনি।” কালিয়াচকের নাজিরপুরে গত ১৫ বছর ইংরেজি মাধ্যমের ওই আবাসিক স্কুলটি চালাচ্ছেন ওই শিক্ষক। তিনিই প্রধান শিক্ষক। স্কুলটি প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৫৫০। হস্টেলে ১০০ ছাত্রছাত্রী থাকে। ঘটনাটি জানাজানি হতে এ দিন বহু অভিভাবক মেয়েকে হস্টেল থেকে নিয়ে গিয়েছেন।
স্কুলের হস্টেলে রেখে মেয়েকে পড়াচ্ছিলেন মালদহের বাগবাড়ির এক প্রাক্তন সেনাকর্মী। নবম শ্রেণির ওই পড়ুয়া পুলিশকে জানিয়েছে, শুক্রবার প্রচন্ড মাথা ধরেছিল তার। হস্টেলেই শুয়েছিল সে। সে জানায়, “প্রধান শিক্ষক ঘরে ঢুকেই জানতে চান, কোথায় ব্যাথা হচ্ছে? তারপর একটি শিশি থেকে জোর করে আমাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে শুয়ে পড়তে বলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কেমন ঘুম এসে যায়। মাথা ঘুরতে থাকে। বুঝতে পারি, উনি (প্রধান শিক্ষক) অশালীন আচরণ করছেন। কিন্তু বাধা দেওয়ার ক্ষমতাই ছিল না। সকালেই বাবাকে টেলিফোনে সব জানাই।”
ঘটনাটি জানাজানি হতেই নবম এবং সপ্তম শ্রেণির কয়েক জন ছাত্রীও জানান, একই ‘অত্যাচারের’ শিকার তারা। এত দিন ‘লজ্জায়’ কাউকে বলতে পারেনি। তারা পুলিশকে জানায়, প্রায়ই নানা অছিলায় প্রধান শিক্ষক হস্টেলের ঘরে ঢুকে পড়তেন। এমনকী রাতে জোর করে ‘ওষুধ’ খাইয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করতেন তিনি। পুলিশের অনুমান, মাদক জাতীয় কিছু খাইয়ে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করতেন ওই শিক্ষক। |