আধুনিক অলিম্পিকের ১১৬ বছরের ইতিহাসে ৫ অগস্ট, ২০১২ একটা ঐতিহাসিক দিন হতে যাচ্ছে। এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকছে এক ভারতীয়ের নাম। রবিবারই অলিম্পিকের রিংয়ে প্রথম বার মেয়ে বক্সাররা পা রাখতে চলেছেন। আর তার পুরোভাগে নাম এক মণিপুরী মেয়ের এম সি মেরি কম। পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বক্সার লন্ডন গেমসে মহিলা বক্সিং ইভেন্টে ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি।
এবং কী অসাধারণ প্রতিনিধি! শনিবারই আন্তর্জাতিক অপেশাদার বক্সিং সংস্থা (এআইবিএ) ভিডিও দেখে রিভিউয়ের পর আগে জয়ী ঘোষিত ভারতীয় পুরুষ বক্সার বিকাশ কৃষাণকে হারিয়ে দেওয়ায় ভারতীয় শিবির প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। কিন্তু এআইবিএ-ই অলিম্পিকে মেয়েদের বক্সিং চালু করার লড়াইয়ে এক ভারতীয় বক্সারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক রিংয়ে যাঁর ধারাবাহিক অসাধারণত্ব দেখে আন্তর্জাতিক বক্সিং সংস্থাই নাম দিয়েছে ‘ম্যাগনিফিসেন্ট মেরি’, সেই মেরি কম-কে ‘মেয়েদের বক্সিংয়ের মুখ’ হিসেবে পেশ করে এআইবিএ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক সংস্থার (আইওসি) সঙ্গে লড়ে ২০১২ অলিম্পিকে মহিলা বক্সিংকে পদক-ইভেন্ট রূপে আবির্ভাব ঘটানোর লক্ষ্যে শেষ পর্যন্ত সফল। |
যমজ সন্তানের মা, ২৯ বছরের মেরি কম মাত্র দু’টো লড়াই জিতলেই অলিম্পিক পদক পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যাবেন। প্রথম বার অলিম্পিকে মেয়েদের বক্সিংয়ে মাত্র তিনটে ক্যাটেগরি রয়েছে। মেরি কম ৪৬ এবং ৪৮ কেজি বিভাগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেও লন্ডনে নামছেন ৫১ কেজি-তে। রবিবার ভারতীয় সময় সন্ধে সাড়ে ছ’টায় তাঁর লড়াই যাঁর বিরুদ্ধে সেই পোলিশ বক্সার ক্যারোলিনা মিশালচুক আবার ৫৪ কেজি বিভাগে প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। প্রথম লড়াইয়ে জিতলে মেরি কমের কোয়ার্টার ফাইনাল লড়াই প্রথম রাউন্ডে ‘বাই’ পাওয়া তিউনিসিয়ার মারোউয়া রাহালি-র সঙ্গে।
অলিম্পিকে মেয়েদের বক্সিংয়ের একমাত্র যোগ্যতা অর্জন পর্ব ছিল চলতি বছরের মে মাসে বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখান থেকে যেমন মেরি কম লন্ডনের টিকিট পেয়েছেন, তেমন তাঁর রবিবারের প্রতিদ্বন্দ্বী ৩২ বছর বয়সি মিশালচুক বিশ্ব মিটে ব্রোঞ্জজয়ী। ফলে স্বয়ং মেরি কম প্রথম রাউন্ডেই যথেষ্ট হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের গন্ধ পাচ্ছেন। তার ওপর মেরি কমের ব্যক্তিগত মার্কিন কোচ চার্লস অ্যাটকিনসনের আন্তর্জাতিক বক্সিং সংস্থার ‘থ্রি স্টার’ কোচিং সার্টিফিকেট না থাকায় তিনি অলিম্পিক নিয়মের জাঁতাকলে পড়ে গেমস ভিলেজে ঢোকার অনুমতি পাননি। ফলে মেরি কম-কে বাধ্য হয়ে গেমস ভিলেজে না থেকে লিভারপুলে থেকে ব্যক্তিগত কোচের কাছে ট্রেনিং নিতে হয়েছে। “আমাকে বলা হয়েছে দুটো লড়াই জিতলেই আমার পদক নিশ্চিত। সে জন্য আমি আরওই বেশি করে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীকে সামান্যতম হালকা ভাবে নিচ্ছি না,” বলেছেন মেরি কম। পাশপাশি অবশ্য খোঁচাও মেরেছেন তাঁর সমালোচকদের। “আমার সমালোচকরা তো বটেই, এমনকী আমার কোনও কোনও শুভানুধ্যায়ীও চায় যে, আমাকে এখনও নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। বারো বছর এই খেলাটায় আমি কাটানোর পরেও! পাঁচটা বিশ্ব খেতাব জেতার পরেও! আসলে আমি যে দুটো ক্যাটেগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, সেই দুটোই অলিম্পিকে নেই। কিন্তু দু’বছর আগে এশিয়াডে আমি ৫১ কেজিতে ব্রোঞ্জ জিতেছি। লন্ডনে সেটাতেই নামছি। ফলে আমার কাছে নতুন কিছু নয়। আমার সমালোচকরা হয়তো জানে না, কিন্তু আমি জানি পদক জেতার জন্য আমাকে কী করতে হবে,” বলেছেন মেরি কম। |