|
|
|
|
৪-১ সিরিজ জিতল ভারত |
|
প্রতিভার বুজরুকি থামিয়ে এ বার
মনোজকে নিয়মিত খেলানো হোক
অশোক মলহোত্র |
|
মনোজ তিওয়ারি আর রোহিত শর্মার মধ্যে তফাত কোথায় সেটা বুঝতে কি এর পরেও বাকি থাকবে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের?
একজন যখনই সুযোগ পেয়েছে, আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছে নিজেকে প্রমাণ করার। কখনও সেই সুযোগ হেলাফেলা করে মাঠে ফেলে দিয়ে আসেনি। অন্য জন বারবার সুযোগ পেয়েও উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছে। তবু তাকেই খেলিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি তো জীবনে কখনও শুনিনি, সেঞ্চুরি করার পর চোদ্দো-পনেরোটা ম্যাচ ধরে টানা একটা প্লেয়ার বেঞ্চে বসে আছে! তা-ও মানতাম যদি যাকে খেলানো হচ্ছে, সে দারুণ কিছু করে দেখাত। তা নয়, সে টানা ব্যর্থ হচ্ছে। দেখেশুনে আমার তো মনে হচ্ছিল, ধোনি বোধহয় ভুলেই গিয়েছে মনোজ তিওয়ারি নামে ওর টিমে কোনও প্লেয়ার আছে!
শনিবার মনোজের ৬৮ বলে ৬৫ আর রোহিতের ৯ বলে ৪ দেখার পর আশা করব এই অন্যায় তুলনাটা বন্ধ হবে। রোহিতকে নিয়ে বার বার একটা কথাই শুনি ধোনিদের মুখে। ওর নাকি দারুণ প্রতিভা! আরে বাবা, প্রতিভাটা আবার কী? এটা কোনও অদৃশ্য প্রভাব নাকি যে, দেখা না দিয়ে আড়াল থেকে নিয়ন্তার ভূমিকা পালন করে? ক্রিকেটারের প্রতিভা মানে তো স্কোরবোর্ডে তার জলজ্যান্ত প্রতিফলন ঘটবে! রোহিতের বেলায় সেটা ঘটছে কোথায়? তার সঙ্গে যোগ করতে হবে মনোজের দুর্দান্ত ফিল্ডিং এবং নতুন আবিষ্কার লেগস্পিন বোলিং। এ বার তাই প্রতিভার বুজরুকি থামিয়ে মনোজকে নিয়মিত খেলানো হোক। |
|
পাল্লেকেলেতে মারমুখী মনোজ। |
মনোজের মতো অশোক দিন্দার কপালেও কম উপেক্ষা জোটেনি। ছেলেটা ঘরোয়া ক্রিকেটে এত ভাল বোলিং করল, আইপিএলে সেরা ব্যাটসম্যানদের ঘাম ছুটিয়ে দিল, তার পরেও শ্রীলঙ্কার এক দিনের সিরিজে গিয়ে প্রথম দুই ম্যাচে দেখল, প্রথম একাদশে জায়গা নেই। আমি এই জিনিসটা দেখে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। এখনকার জাতীয় নির্বাচকেরা কি টিম ম্যানেজমেন্টকে প্রশ্নও করে না যে, ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করা একটা ছেলেকে আমরা বেছে দিলাম, তার পরেও তোমরা তাকে খেলাচ্ছ না কেন?
সিরিজের ফয়সালা আগেই হয়ে গিয়েছিল বলে ম্যাচ নিয়ে সাংঘাতিক কোনও আগ্রহ পড়ে ছিল না। আজ জিতে অবশ্য ওয়ান ডে র্যাঙ্কিংয়ে দু’নম্বরে উঠে এল ভারত। তবে আমার মনে হয় সেরা প্রাপ্তি বরং মনোজ এবং দিন্দার পারফরম্যান্স। গৌতম গম্ভীরের ৯৯ বলে ৮৮-র পরেও মাঝের দিকটায় আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। মনোজ, ধোনি (৩৮ বলে ৫৮) এবং ইরফান পাঠান (২৮ বলে ২৯) মিলে ২৯৪-৭ স্কোরে পৌঁছে দিল। দেখে মনে হচ্ছিল জেতার মতোই স্কোর। কিন্তু সাত নম্বরে নেমে জীবন মেন্ডিসের (৮৮ বলে ৭২) লড়াই আবার ম্যাচ জমিয়ে দিল। পাঠানের পাঁচ উইকেট আর দিন্দার আক্রমণাত্মক বোলিং শেষ পর্যন্ত ২০ রানে জেতাল ভারতকে। ধোনিরা সিরিজ জিতল ৪-১ ব্যবধানে।
কিন্তু বোলিং নিয়ে যে চিন্তাভাবনার জায়গা রয়েছে সেটা আবার প্রমাণ হয়ে গেল। জাহির খানকে এখনও কেন ওয়ান ডে খেলিয়ে যাব? ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এবং জাতীয় নির্বাচকদের তো উচিত পুরোপুরি তরুণ বোলারদের ওয়ান ডে-তে সুযোগ দেওয়া। দিন্দা আর উমেশ যাদবকে এখন যদি নিয়মিত না খেলাই তা হলে আর কবে খেলাব? আমি তো বলব, দিন্দাকে অবিলম্বে টেস্ট টিমেও ঢোকানো উচিত। কারণ একটাই। ঘণ্টায় ১৪৫ কিমি গতিতে আউটসুইঙ্গার করার ক্ষমতা। |
|
দিন্দাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস। |
বরাবরই দারুণ আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষা আর পেস বোলার-সুলভ মনোভাব ওর। আমার এখনও মনে আছে, কেকেআর-এর প্রথম কী দ্বিতীয় বছরে, ইশান্ত শর্মা তখন দারুণ বোলিং করছে, দিন্দা বলেছিল, ইশান্তের থেকে কী শিখব? ও তো আমার প্রতিদ্বন্দ্বী! গত এক বছরে দারুণ উন্নতিও করেছে ও। দেশের সবথেকে গতিসম্পন্ন বোলারদের মধ্যে এক জন তো বটেই, অন্যান্য অস্ত্রগুলোও অনেক ধারালো হয়েছে। খুব ভাল বাউন্সার রয়েছে। স্লোয়ারটাও দারুণ এনেছে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আগের মতো শর্ট-শর্ট বোলিং আর করে না। ব্যাটসম্যানকে সামনের পায়ে খেলানোর চেষ্টা করছে আর যেহেতু ওর আউটসুইংটা খুব ভাল, এই ডেলিভারিটা ওকে উইকেটও দিচ্ছে।
দিন্দার সঙ্গে আমার কখনও কথা হয়নি। কিন্তু একটা জিনিস জেনেছি যে, সারাক্ষণ ক্যাপ্টেনের জন্য দৌড়তে রাজি। আমি যখন বাংলার ক্যাপ্টেন ছিলাম তখন দু’জনকে এ রকম দেখেছিলাম। উৎপল চট্টোপাধ্যায় আর সাগরময় সেনশর্মা। সারাক্ষণ বল হাতে নেওয়ার জন্য তৈরি। উইকেট পড়ছে না দেখলে নিজেরাই এসে বলত, পাঁজি আমায় দাও। আমি উইকেট তুলব। দিন্দাও শুনেছি সে রকম। এ রকম বোলার তো যে কোনও ক্যাপ্টেনের সম্পদ!
ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের গোঁয়ার্তুমির শিকার না হতে হলে মনোজ এবং দিন্দা দু’জনেরই খুব উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি। |
ভারত |
গম্ভীর ক মালিঙ্গা বো সেনানায়কে ৮৮
রাহানে এলবিডব্লিউ পেরিরা ৯
কোহলি এলবিডব্লিউ প্রদীপ ২৩
রোহিত বো প্রদীপ ৪
মনোজ ক পেরিরা বো মালিঙ্গা ৬৫
রায়না ক থিরিমান্নে বো মালিঙ্গা ০
ধোনি ক চণ্ডীমল বো মালিঙ্গা ৫৮
ইরফান ন.আ. ২৯
অশ্বিন ন.আ. ২
অতিরিক্ত ১৬
মোট ৫০ ওভারে ২৯৪-৭।
পতন: ২৯, ৭৭, ৮৭, ১৯৭, ১৯৭, ২১৩, ২৯০।
বোলিং: মালিঙ্গা ১০-০-৬৪-৩, পেরিরা ১০-০-৫৩-১, ম্যাথেউজ ৫-০-২৯-০,
প্রদীপ ১০-০-৬৩-২, সেনানায়কে ১০-০-৫০-১, মেন্ডিস ৫-০-২৫-০।
|
শ্রীলঙ্কা |
থরঙ্গা ক রাহানে বো ইরফান ৩১
দিলশান ক জাহির বো ইরফান ০
থিরিমান্নে রান আউট ৭৭
চণ্ডীমল এলবিডব্লিউ দিন্দা ৮
ম্যাথেউজ রান আউট ১৩
কাপুগেদেরা এলবিডব্লিউ জাহির ৯
মেন্ডিস ক ধোনি বো ইরফান ৭২
পেরেরা ক কোহলি বো ইরফান ১৮
সেনানায়াকে বো ইরফান ৭
মালিঙ্গা ক রায়না বো দিন্দা ১০
প্রদীপ ন.আ. ০
অতিরিক্ত ২৯
মোট ২৭৪।
পতন: ১৩, ৬১, ৭৪, ৮৯, ১০২, ২০৪, ২৫২, ২৫৬, ২৬৬, ২৭৪।
বোলিং: জাহির ৯-১-৫৩-১, ইরফান ১০-০-৬১-৫, দিন্দা ৭.৪-০-৫৫-২, কোহলি ১-০-৩-০,
অশ্বিন ৯-০-৩৭-০, রোহিত ৬-০-২৩-০, রায়না ২-০-১২-০, মনোজ ১-০-১৪-০। |
|
|
ছবি: এএফপি |
|
|
|
|
|