বৃষ্টির ঘাটতি ও দেশে সম্ভাব্য খরা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আজ তিনি নিজেই এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন বাম নেতাদের। তাঁর বক্তব্য, এখনও সরকারি ভাবে খরার কথা ঘোষণা হয়নি। কিন্তু এ বার যে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে না, এ পর্যন্ত পাওয়া হিসেবেই তা স্পষ্ট। মৌসম ভবন গত কালই জানিয়ে দিয়েছে, বৃষ্টির ঘাটতি মেটার আর আশা নেই। কাজেই খরা পরিস্থিতির মোকাবিলায় সরকার তৈরি হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মনমোহন।
ইউপিএ সরকারের প্রস্তাবিত খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে নিজেদের আপত্তি ও দাবিদাওয়ার কথা জানাতে আজ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়েছিলেন প্রকাশ কারাট, সুধাকর রেড্ডি, দেবব্রত বিশ্বাস ও অবনী রায়। প্রধানমন্ত্রীকে তাঁরা অনুরোধ করেন, ৬টি রাজ্য যখন খরার মুখোমুখি, তখন খাদ্যশস্য রফতানি না করে ওই রাজ্যগুলিতে তা সরবরাহ করা হোক। তখনই প্রধানমন্ত্রী বৃষ্টির ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই যে সব রাজ্যে খরার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, সেগুলির জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে ১৯০০ কোটি টাকার অর্থ সাহায্য ঘোষণা করা হয়েছে। ডিজেল, বীজ, গবাদি পশুখাদ্যের মতো নানা ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
বাম নেতাদের যুক্তি, খরা পরিস্থিতির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখেই খাদ্য সুরক্ষা আইন তৈরি করা উচিত সরকারের। খাদ্যে ভর্তুকি কমানোর জন্য দারিদ্রসীমার উপরে ও নীচের মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি না করে ধনীদের বাদ দিয়ে বাকি সকলকেই গণবণ্টন ব্যবস্থার আওতায় আনা হোক। এই পরিবারগুলিকে দু’টাকা কেজি দরে মাসে ৩৫ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য দেওয়া হোক। প্রধানমন্ত্রী কারাটদের জানান, খাদ্য সুরক্ষা বিলটি আপাতত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে রয়েছে। স্থায়ী কমিটি কী সুপারিশ করে, সেই অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। সে সময় সকলের মতামতই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। |
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি অবনী রায়,
সুধাকর রেড্ডি, প্রকাশ কারাট ও দেবব্রত বিশ্বাস। ছবি: প্রেম সিংহ |
বামেরা মনে করছেন, খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু করতে গিয়ে রাজ্যগুলির অধিকারেও হস্তক্ষেপ করছে কেন্দ্র। খাদ্যে নগদ ভর্তুকি ব্যবস্থা চালু করার মতো শর্ত চাপানো হচ্ছে। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ-সহ বিভিন্ন রাজ্যও খাদ্য সুরক্ষা আইনের ফলে রাজ্যের ঘাড়ে যে আর্থিক দায় চাপবে, তা নিয়ে আপত্তি তুলেছে।
বামেদের যুক্তি, খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে নগদ ভর্তুকিতে লাভ হবে না। সেই টাকা অন্য কাজেও ব্যবহার হতে পারে। প্রকাশ কারাট বলেন, “পাঁচ কোটি টন খাদ্যশস্য সরকারি গুদামে মজুত রয়েছে। ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ীরা ২৫ লক্ষ টন খাদ্যশস্য ভর্তুকি মূল্যে কিনে তা রফতানি করে দিয়েছে। আমরা চাই মজুত করা খাদ্যশস্য সকলের মধ্যে বিলি করা হোক। যখন দেশে খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তখন খাদ্যশস্য রফতানি করা বোকামি। এতে শুধু বড় ব্যবসায়ীদেরই লাভ হবে।” সকলের জন্য খাদ্য সুরক্ষার দাবিতে গত পাঁচ দিন ধরে যন্তরমন্তরে ধর্নায় বসেছিলেন বামেরা। আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করেই থামতে চাইছেন না তাঁরা। এর পরে ১২ সেপ্টেম্বর দেশ জুড়ে এফসিআই-এর গুদামের সামনে পিকেটিং-এ বসবেন বামেরা। |