বেশ কিছু প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ হলেও কাজের আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি— শুক্রবার উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে পরিদর্শনে এসে এই চিত্র দেখলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
এখানে একটি নার্সিং কলেজ তৈরির জন্য স্বাস্থ্য দফতর টাকা বরাদ্দ করেছে। ব্যবস্থা হয়েছে জমির। কিন্তু কলেজ ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়নি। এর জন্য স্বাস্থ্য দফতর বরাদ্দ করেছে ৪ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। কলেজটি তৈরি হলে এখানে ২৪৭ জন প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কলেজ ভবনটি তৈরি করার কথা পূর্ত দফতরের। কিন্তু তারা এখনও ভবনের নকশা তৈরি করেনি। শুক্রবার হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী নার্সিং কলেজ তৈরির কাজ কেন এগোচ্ছে না, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সুপার তপন পালিত তাঁকে এ কথাই বলেন।
আরও কয়েকটি প্রকল্প হাসপাতালে রূপায়িত হওয়ার কথা আছে। সেই সব প্রকল্পের জন্যও অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু কোনওটির অগ্রগতি ‘সন্তোষজনক’ নয়। সদ্যোজাত অসুস্থদের চিকিৎসা সংক্রান্ত ইউনিট (এসএনসিইউ) তৈরির কাজ চলছে গত দু’বছর ধরে। প্রস্তাবিত ইউনিটটিতে ১০টি শয্যা থাকবে। শুধুমাত্র সদ্যোজাত শিশুদের চিকিৎসা করা হবে এখানে। এই ইউনিটের ভবন তৈরির জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৩ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা। কিন্তু ভবন তৈরির কাজ শেষ না-হওয়ায় ইউনিটটি চালু করা যাচ্ছে না। |
রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের অনেক সময়ে হাসপাতালে অপেক্ষা করতে হয়। তাঁদের জন্য একটি বিশ্রামাগারের দাবি অনেকদিন ধরেই উঠেছিল। বিশ্রামাগার তৈরির জন্য উলুবেড়িয়ার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় পর্যটন প্রতিমন্ত্রী সুলতান আহমেদ সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছেন। সেই টাকাও জেলাশাসকের কাছে পড়ে রয়েছে প্রায় দু’বছর ধরে। ফলে বিশ্রামাগার তৈরি কার্যত বিশ বাঁও জলে। একই ভাবে রাতে রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের অপেক্ষা করার জন্য আরও একটি বিশ্রামাগার তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য দফতর থেকে এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৯৮ লক্ষ টাকা। টাকা এসে পড়ে থাকলেও এখনও পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
তিনটি ক্ষেত্রেই সময় মতো কাজ শেষ না-হওয়া বা কাজ শুরু করতে না-পারার জন্য পূর্ত দফতরকেই দায়ী করা হয় হাসপাতালের পক্ষ থেকে। এ দিন স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী সঙ্গে ছিলেন পূর্ত দফতরের পদস্থ বাস্তুকারেরা। অসুস্থ সদ্যোজাতদের ইউনিট তৈরির কাজ আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার জন্য মন্ত্রী পূর্ত দফতরের বাস্তুকারদের নির্দেশ দেন। অন্যান্য কাজগুলিও দ্রুত শুরু করার কথা বলেন তিনি। লোকাভাবের জন্যই কাজে কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে মনে করেন পূর্ত দফতরের বাস্তুকারদের একাংশ।
মন্ত্রী পরে বলেন, “হাসপাতালে অনেকগুলি প্রকল্পের কাজ চলছে। কাজগুলি যাতে দ্রুত শেষ করা যায় সে বিষয়ে পর্যালোচনা করতেই হাসপাতালে গিয়েছিলাম।” প্রকল্পগুলির কাজ সময়ে শেষ করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পূর্ত-সহ বিভিন্ন দফতরের সমন্বয় বাড়ানোর কথা বলেন তিনি।
উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে কয়েক জন চিকিৎসক ও নার্সের ‘দুর্ব্যবহার’ নিয়ে রোগীর পরিবারের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রীর কাছে। মন্ত্রী কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেন। সুপারকে নির্দেশ দেন, কারা দুর্ব্যবহার করেন, সে সবিষয়ে যেন স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে লিখিত রিপোর্ট পাঠাতে। সুপার বলেন, “এ নিয়ে আগে অভিযোগ পাইনি। তবে নজরে রাখব। স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে জানাব।”
মন্ত্রী বাউড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালেও পরিদর্শনে আসেন। এখানে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আবাসন রয়েছে। কিন্তু সেখানে কেউ থাকেন না। হাসপাতালেও অনেক সময়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, নার্সরা গরহাজির থাকেন বলে অভিযোগ। একমাসের মধ্যে এই হাসপাতালে ‘কর্মসংস্কৃতি’ ফিরিয়ে আনার জন্য তিনি সুপার ঈশ্বর চট্টোপাধ্যায়কে নির্দেশ দেন। এ দিন মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী হায়দর আজিজ সফি, উলুবেড়িয়া (উত্তর) কন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি-সহ স্বাস্থ্য দফতরের পদস্থ কর্তারা। উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে একটি মাদার-চাইল্ড হাব করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। |