এক পক্ষকাল আগেও কলকাতার ভূগর্ভস্থ জলে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক থাকার কথা উড়িয়ে দিয়েছিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। আর শুক্রবার শহরে আর্সেনিক-দূষণ মোকাবিলায় তাঁর পুরসভাই গঠন করল টাস্ক ফোর্স। রাজ্য আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান কুমারজ্যোতি নাথকেই পুরসভার টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
গত ১৫ দিন ধরে রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতর (সুইড), রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, রাজ্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে দিয়ে যাদবপুর-টালিগঞ্জ এলাকার কয়েকটি নলকূপের জল পরীক্ষা করিয়েছিল পুরসভা। নিজেরাও ওই নলকূপগুলির জল সংগ্রহ করে এনে পুরসভা নিজেদের গবেষণাগারে পরীক্ষা করেছিল। সব পরীক্ষাতেই কয়েকটি নলকূপের জলে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক ধরা পড়ার পরে শুক্রবার পুরভবনে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন পুর-কর্তৃপক্ষ। আর তাতেই ঠিক হয়েছে, আর্সেনিক-দূষণকে আর হাল্কা করে দেখলে হবে না। তার পরেই ১৪ সদস্যের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্স গড়ে পুরসভা। |
এ দিনই বৈঠকে বসে টাস্ক ফোর্স কয়েকটি নীতি নির্ধারণ করেছে। টাস্ক ফোর্স জানিয়ে দিয়েছে, আর্সেনিকমুক্ত জলের সংস্থান রয়েছে, এই শংসাপত্র না-থাকলে এখন থেকে মহানগরীর কোনও আবাসন বা বাড়ির নকশা অনুমোদন করবে না পুরসভা। ইতিমধ্যেই যে সব আবাসন এবং বাড়ি গভীর নলকূপের জল ব্যবহার করছে, সেই সব জলের নমুনা পরীক্ষা করবে পুরসভা। সেই জলে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক থাকলে বিকল্প জলের ব্যবস্থা করতে হবে। ওই সব গভীর নলকূপ ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মেয়র পারিষদ (নলকূপ) তারক সিংহ এবং পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ।
পরে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আর্সেনিকমুক্ত জলের সার্টিফিকেট পেলে তবেই বিল্ডিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হবে, এই প্রস্তাব টাস্ক ফোর্স দিতে পারে। তবে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।” তবে পুরসভার আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান কুমারজ্যোতি নাথ বলেন, “বাড়ির নকশা অনুমোদন করাতে হলে জলের উৎস এবং জল দূষণমুক্ত কি না, তা জানানো জরুরি। বহুতল বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের এই নিয়ম রয়েছে। এখন কলকাতা পুরসভায় এই নিয়ম চালু হলে তাতে মানুষেরই লাভ। প্রতিটি আবাসনকে ফি দিয়ে তাদের জল পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক করানোটাও জরুরি।”
তারকবাবু বলেন, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতর, জনস্বাস্থ্য দফতর ও কলকাতার পুরসভার পরীক্ষাগারে জল পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা থাকছে।
সম্প্রতি শহরের কয়েকটি নলকূপের জলে সহনমাত্রার উপরে আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছে বলে রিপোর্ট দেয় যাদবপুর স্কুল অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ। সেই রিপোর্ট মেয়রের কাছেও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে আমল দেননি মেয়র। এ দিন বৈঠকের শুরুতেই মেয়র পারিষদ তারকবাবু বলেন, “ওঁদের (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের) দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতেই আমরা পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেছিলাম। আর তা থেকেই জানতে পারলাম যাদবপুর ও গল্ফগ্রিন এলাকার কয়েকটি নলকূপের জলে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে।”
বৈঠকে না থাকলেও মেয়র শোভনবাবু বলেন, “পুরো বিষয়টি তারকবাবু দেখছেন। একটি টাস্ক ফোর্স গড়া হয়েছে। এ বার নিয়মিত ভাবে নলকূপের জল পরীক্ষা করা হবে।” |