হাসপাতালে জোড়া খাটের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। ব্যবস্থা হয়নি।
‘অস্বাভাবিক বড়’ শরীরের তরুণীর জন্য বাড়তি খাবার দরকার। রাজ্যের ‘সুপার স্পেশ্যালিটি’ হাসপাতাল এসএসকেএমে তা-ও মিলছে না বলে অভিযোগ।
এই অবস্থায় সুস্থ হতে কলকাতায় এসে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ তুললেন বালুরঘাটের ‘বিশাল কন্যা’ সিদ্দিকা পরভিন। তাঁর বক্তব্য, হাসপাতালে আধপেটা খেয়ে আর না-ঘুমিয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। এমন চিকিৎসার চেয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়াই শ্রেয় বলে মনে করছেন আট ফুট উচ্চতার, ২৫ বছরের ওই তরুণী।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে হরমোনের চিকিৎসার জন্য সিদ্দিকাকে এসএসকেএমে ভর্তি করানো হয়। প্রায় এক মাস কেটে গিয়েছে। এখনও ছ’ফুট লম্বা খাটে পা মুড়ে শুতে হচ্ছে আট ফুট উচ্চতা আর ১৪০ কিলোগ্রাম ওজনের ওই তরুণীকে। বাড়িতে থাকলে দৈনিক দু’কিলোগ্রাম চালের ভাত লাগে। কিন্তু পিজি-তে তাঁর জন্য কোনও পৃথক পথ্যের ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ। দু’বেলা হাসপাতালের খাবারে পেট ভরছে না তাঁর। শুধু অভিযোগ করাই নয়, গত বুধবার সকালে জিনিসপত্র গুছিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য সিদ্দিকা কেবিন থেকে বেরিয়েও পড়েছিলেন বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। চিকিৎসক ও নার্সেরা বুঝিয়েসুজিয়ে তাঁকে ফের কেবিনে নিয়ে যান। সিদ্দিকার অভিযোগ মানতে চাননি পিজি-কর্তৃপক্ষ। সুপার তমালকান্তি ঘোষ বলেন, “আট ফুট লম্বা খাট হাসপাতালে নেই বলে আমরা সাধারণ খাটের সঙ্গে লম্বা কাঠের পাটাতন জুড়ে দিয়েছি। শুতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আর মেয়েটির প্রয়োজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট করে দিয়েছেন ডায়েটিশিয়ান। তাই আধপেটা খেয়ে থাকার প্রশ্নই নেই।” |
হাসপাতালে সিদ্দিকা পরভিন। —নিজস্ব চিত্র |
শুক্রবার কেবিনে গিয়ে অবশ্য কাঠের পাটাতন খুঁজে পাওয়া যায়নি। দেখা গেল, সাড়ে ছ’ফুটের শয্যায় কুঁকড়ে শুয়ে আছেন সিদ্দিকা। কেমন আছেন জানতে চাওয়ায় কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললেন, “কী চিকিৎসা হচ্ছে, জানি না। একটা ছোট্ট ঘরে আমাকে আটকে রাখা হয়েছে। খিদে পেলে খেতে দিচ্ছে না। বাইরে বেরোতে দিচ্ছে না। এক রকম বন্দি হয়ে রয়েছি আমি। বাড়ি চলে যেতে চাই।”
সিদ্দিকার বাবা, পেশায় দিনমজুর আফতাবউদ্দিন আহমেদের অভিযোগ, রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়েই তাঁর মেয়েকে শহরে আনা হয়েছিল। তাঁরা ভেবেছিলেন, সমস্যার কোনও একটা সুরাহা হল। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাতে সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত কী চিকিৎসা হল, সেটাই বুঝে উঠতে পারলাম না। কী সব পরীক্ষা করা হচ্ছে! তার পরে বলা হচ্ছে, রিপোর্ট হারিয়ে গিয়েছে। ফের পরীক্ষা করতে হবে। মেয়েকে ঠিকমতো খেতে দিচ্ছে না। ছোট খাটে দিনের পর দিন কুঁকড়ে শুয়ে মেয়েটা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।” এখানে আসার পরে নেতারা কেউ আর যোগাযোগও করছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কলকাতায় আফতাবউদ্দিনদের থাকারও কোনও জায়গা নেই। এক মাস এসএসকেএম চত্বরে কোনও মতে শুয়ে-বসে দিন কাটিয়েছেন তাঁরা। হাতের টাকা শেষ। দিন তিনেক আগে স্ত্রী মনসুরাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন আফতাবউদ্দিন। কয়েক দিনের মধ্যে মেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে চান তিনিও।
রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সম্পাদক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার তাঁদের কিছু অর্থসাহায্য করেছেন বলে জানান আফতাবউদ্দিন। কান্তিবাবু বলেন, “আপাতত রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর তহবিল থেকে কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে। মেয়েটির বাবার থাকার ব্যবস্থা হয়েছে মুকুন্দপুরের প্রতিবন্ধী স্কুলে। আরও চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের মানবিক হওয়ার প্রয়োজন ছিল। প্রতিশ্রুতি দিলে তা রক্ষা করতে হয়।”সিদ্দিকার অস্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধির মূলে আছে পিটুইটারি গ্রন্থির একটি টিউমার। ওই টিউমারের জন্যই তাঁর বৃদ্ধি-হরমোনের অস্বাভাবিক নিঃসরণ হচ্ছে। তাতেই শরীরের এই অতিরিক্ত বৃদ্ধি। খিদেও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, সিদ্দিকার হৃদ্যন্ত্রও খুব দুর্বল। তাঁর এই রোগের চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামো জেলায় না-থাকায় কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে সিদ্দিকাকে।
উপশম হবে কি না, পরের কথা। আপাতত হাসপাতালের ‘বন্দিদশা’ থেকে রেহাই পেতে চান তিনি। |