মায়ের বকুনি, অভিমানে ঘরছাড়া
রাত বারোটা। নিজের দোকানে বসে মিষ্টি তৈরি করছিলেন লালু মোদক। নবদ্বীপধাম স্টেশন সংলগ্ন তেঘরিপাড়া বৃহস্পতিবার তখন কার্যত সুনসান। হঠাৎ দোকানে হাজির এক বছর দশেকের এক বালক। তার ঝুলিতে ছিল একটা ঠাকুরমার ঝুলি।
সবুজ রঙের টি-শার্ট। হাফপ্যান্ট। হাতে প্লাস্টিকের ঝোলা। বোঝা যায়, অবস্থাপন্ন বাড়ির ছেলে। খুব সপ্রতিভ ভাবেই লালুবাবুর কাছে জানতে চায়, “আঙ্কল, একটা মন্দিরের সামনে নদী রয়েছে, এমন জায়গা এখানে কোথায়?” লালুবাবু সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন করেন, “কেন, কী হবে তা দিয়ে?” গঙ্গার ধারের মন্দিরময় শহর নবদ্বীপে এসে কেউ এমন কোনও প্রশ্ন করছে যখন, তখন কিছু যে একটা গোলমাল রয়েছে, তা তিন তখনই বুঝতে পেরেছিলেন।
শুক্রবার সকালে লালুবাবু বলেন, “বুঝতেই পারি ছেলেটা এখানে নতুন। নাম বলল কৌশিক বারিক।” ঠিকানা? ছেলেটির জবাব, “পূর্ব মেদিনীপুরের বাঁকা বোয়ালিয়া।” এখানে কেন? এ বার জবাব মেলে, “কাকার কাছে এসেছি। কাকার বাড়ি খুঁজে পাচ্ছি না। কাকার নাম সন্দীপ বারিক।” লালুবাবু বলেন, “বুঝতে পারছিলাম ছেলেটি কিছু কিছু বানিয়ে বলছে। তাকে তখন দোকানে বসিয়ে নৈশরক্ষীর বাহিনীর ছেলেদের ডাকি। সবাই মিলে জেরা করতেই ও জানিয়ে দেয়, বাড়ি থেকে পালিয়েছে। নাম ঠিকানাটা ঠিক। বাবার ফোন নম্বরও দেয়।” সেই মতো তাঁরা তখন কৌশিকের বাবা গুরুপদ বারিককে ফোন করে খবর দেন, তাঁর ছেলে তাঁদের কাছে রয়েছে।
ইতিমধ্যে গুরুপদবাবু ছেলের খোঁজ না পেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি অবশ্য ভেবেছিলেন, ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। তবে একটা সূত্র ছিল। কৌশিক হাওড়া স্টেশনে নেমে বুথ থেকে বাবার মোবাইলে একটা ফোন করে বলেছিল, সে ভাল রয়েছে। সেই নম্বরটা গুরুপদবাবু পুলিশকে দিয়েছিলেন। পুলিশ তাঁকে জানায়, ওই ফোনটা হাওড়ার ৬ নম্বর গেটের একটি বুথ থেকে করা হয়েছে। গুরুপদবাবু বলেন, “আমি তখন সবে হাওড়ায় ঢুকছি। এমন সময় অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন এল, আমার ছেলের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। আমি তখন ছেলের সঙ্গেও কথা বললাম।”
কিন্তু কেন বাড়ি থেকে পালাল সে? কৌশিক জানিয়েছে, রাখিপূর্ণিমার দিন বন্ধুদের জন্য বাড়তি তিরিশটা রাখি কেনায় মা তাকে বকাবকি করেছিলেন। তারপরে সে চলে যায় পাশেই মামার বাড়িতে। সেখান থেকে বেলা বারোটা নাগাদ সাইকেলে বাজকুল বাসস্ট্যান্ড গিয়ে বাসে করে মেচেদা চলে যায়। মেচেদা থেকে নবদ্বীপ ধামের টিকিট কাটে। হাওড়া এসে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করে উঠে পড়ে রাতের শেষ কাটোয়া লোকালে। নবদ্বীপে পৌঁছয় রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ। গুরুপদবাবু এরপর সোজা চলে যান নবদ্বীপেই। ভোর রাতে ছেলেকে ফিরে পান। তিনি বলেন, “ছেলে একটু বদরাগী। খামখেয়ালি। কিন্তু এমন কাণ্ড করবে, তা বুঝতে পারি না।”
সারা রাত ধরে ছেলেটিকে নিজেদের কাছেই রেখেছিলেন তাঁরা। তাঁর খাওয়াদাওয়ারও ব্যবস্থা করেন তেঘড়িপাড়ার ওই যুবকেরাই। মাত্র কয়েক দিন আগেই অযোধ্যা থেকে পালিয়ে নবদ্বীপে দাদু-দিদিমার বাড়ির খোঁজে চলে এসেছিল সঞ্জয় গোস্বামী। এ বার কৌশিক।
কিন্তু নবদ্বীপেই কেন? কৌশিকের বাবার পর্যটনের ব্যবসা রয়েছে। তাঁর সঙ্গেই কৌশিক নবদ্বীপে এসেছে কয়েকবার। তার মনে হয়েছিল, এখানে আশ্রমে থাকলে থাকা খাওয়ার পয়সা লাগে না। তাই নবদ্বীপেই চলে যায় সে। বাজকুল জনকল্যাণ শিক্ষা নিকেতনের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র কৌশিকের সঙ্গে ছিল দু’শো টাকা।
ঠাকুরমার ঝুলি কেন কিনেছিল কৌশিক? তার উত্তর, “ট্রেনেই কিনেছিলাম। মনে হল কিছু একটা পড়তে পড়তে যাই।” একটি টর্চও কিনেছিল সে।
ঠাকুরমার ঝুলির অনেক গল্পই অজানার উদ্দেশ্যে অভিযান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.