ঘাটালে বন্যা মোকাবিলা
মাস্টারপ্ল্যানে ভরসা হারিয়ে অন্য পথের খোঁজ
র্ষা মানেই ঘাটালে বন্যাযেন স্বতসিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। আর বন্যা হলেই রঙ-বেরঙের নেতাদের ঝুলি থেকে বেরিয়ে পড়ে বন্যা-নিয়ন্ত্রণের ‘মাস্টার প্ল্যান’! সে-ও প্রায় চার দশকের পুরনো কাসুন্দি। বন্যার পরে যদিও আর পরিকল্পনা এগোয় না! দিনে দিনে মানুষও বুঝছেনমাস্টারপ্ল্যান নেহাতই কথার-খেলা। অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা এটাও বুঝছেন, ঘাটালের যে-রকম ভৌগোলিক অবস্থান, নদীবেষ্টিত এবং কড়াইয়ের মতো ভূ-ভাগ---তাতে বন্যা এক-রকম অনিবার্যই। কিন্তু জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি তো কমানো যায়। যেতে পারত। সেটুকুও কি প্রাপ্য নয় স্বাধীন দেশের নাগরিকদের?
নদী-বিশেষজ্ঞ, গবেষক, সেচ-কর্তাদের একাংশেরও বক্তব্য, মাস্টারপ্ল্যান বা যাই হোক পুরোপুরি বন্যা-নিয়ন্ত্রণ অলীক কল্পনা। শিলাবতী, কংসাবতী, ঝুমি, কেঠে, পারাংয়ের মতো ঘাটালের চারপাশের নদীগুলির জলধারণ-ক্ষমতা পলি পড়ে-পড়ে ক্রমেই কমেছে। ক’দিনের টানা বৃষ্টিতেই প্লাবিত হয় এলাকা। অতিবৃষ্টি এবং জলাধার থেকে জল ছাড়া হলে তো কথাই নেই। ফি-বছরই এক ছবি ঘাটাল, দাসপুর, চন্দ্রকোনার একাংশে। জলের দখলে চলে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা, প্রধান প্রধান সড়ক। মানুষ ও গবাদি পশুর মৃত্যুও যেন রুটিন। নদীর পাড়ে পলিথিন-আস্তানায় পানীয় জলটুকুর জন্যও হাহাকার সম্বল করে কোনও রকমে বেঁচে থাকে বাকিরা। বিপুল ক্ষতি হয় চাষে এবং অন্য বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হাজার হাজার মানুষের। বন্যা কমলেও ভুগতে হয় নানা অসুখে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বন্যা-নিয়ন্ত্রণ যদি বা অসম্ভব হয়, ক্ষতি ও দুর্ভোগ কিন্তু কমানোই যায়। এবং সে জন্য বিপুল ব্যয়ে কোনও নাম-ভারী ‘প্ল্যানে’রও দরকার পড়ে না।
নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের কথায়, “বন্যা-রোধ করা যেমন পুরোপুরি সম্ভব নয়, তেমন কাম্যও নয়। তাই, জাতীয় বন্যা-মোকাবিলা কর্মসূচিতে দেশের প্রতিটি রাজ্যকেই বন্যার আগে প্রাক্-প্রস্তুতিতেই গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” কল্যাণবাবুর বক্তব্য, বন্যা হয় মূলত দু’টি কারণে। অতিবৃষ্টি এবং জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলে। জল যে নদী দিয়ে যাবে, সেই নদী যদি প্রশস্ত হয় এবং বাধা না পায়---তা হলে বন্যা হলেও দ্রুতই জল সরে যায়। বন্যার আগের প্রস্তুতিটাই জরুরি। এই নদী-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, কোন কোন এলাকা প্লাবিত হয়---তার একটা মানচিত্র তৈরি করা জরুরি। সেখান থেকে আগেই সম্ভাব্য দুর্গতদের সরিয়ে উঁচু জায়গায় নিয়ে গিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা দরকার। খাবার, পানীয় জল, ওযুধও মজুত রাখতে হবে। মেশিন-চালিত নৌকো প্রস্তুত রাখতে হবে যাতে দ্রুতই দুর্গতদের সরানো যায়।
কল্যাণবাবুর কথায়, “প্রাকৃতিক কারণেই হয় বন্যা। বন্যা হবে জেনে-বুঝেই ২০০৮ সালে জাতীয় বন্যা-মোকাবিলা কর্মসূচিতে ঠিকঠাক প্রাক্-প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হয়। যদি বন্যার আগে প্রশাসনের তরফে এই সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়, তা হলে প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা দুর্ভোগ থেকে অনেকটাই রেহাই পেতে পারেন।” এমনিতেই পলি পড়ে মজে যাওয়া নদীখাতে বন্যার সময়ে এস পড়া আরও পলি জমে। এই বিপুল পরিমাণ পলি পুরো তুলে ফেলাও যে কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুলতা-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন নদী-বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, কিছু এলাকায় খাল ও ছোটখাটো নদীগুলিতে সাময়িক সংস্কার করা যেতে পারে। তাতেও ভোগান্তি কিছুটা কমতে পারে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যলয়ের ভূগোলের বিভাগীয় প্রধান রামকৃষ্ণ মাইতির বক্তব্য, “ঘাটালের যা ভৌগোলিক অবস্থান তাতে বন্যার হাত থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া কঠিন। নাম-প্রকাশে অনিচ্ছুক সেচ দফতরের এক কর্তাও বলেন, “ঘাটালকে মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে বন্যার হাত থেকে বাঁচানো মোটেই সহজ কাজ নয়। আমরা সমীক্ষা করে দেখেছি, বন্যা হবেই।” অন্য দিকে, রামকৃষ্ণবাবুর মতে, “সম্ভাব্য প্লাবন-এলাকায় গ্রাম-কেন্দ্রিক ফ্লাড-শেল্টার তৈরি খুব জরুরি। এমন ভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে বন্যার সময়ে নীচে গরু-ছাগল থাকতে পারে। উপরে দুর্গত মানুষজন। ছাদের জল সঞ্চয় করে রাখতে হবে। সেই জলই ফিল্টার করে আপৎকালীন পানীয় হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। সমবায়ের মাধ্যমে যাতে এই ফ্লাড-শেল্টারগুলি চলে, তার ব্যবস্থাও জরুরি। ফ্লাড-শেল্টারগুলিতে খাদ্য-ভাণ্ডারও তৈরি করা যেতে পারে। এ জন্য বাড়ি-পিছু বছরভর চাল, ডাল, অন্যান্য সামগ্রী অনুদান হিসাবে সংগ্রহ করা যায়। এ-ভাবেই গ্রামে স্বয়ংসম্পূণর্র্ দুর্যোগ-মোকাবিলা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে। যাতে স্থানীয় মানুষ নিজেরাই অসময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারেন।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.