|
|
|
|
|
‘অপহরণকারী’র সঙ্গেই ঘর
বাঁধতে গেলেন অষ্টাদশী
কিংশুক গুপ্ত • ঝাড়গ্রাম |
|
শুক্রবার দুপুর। ঝাড়গ্রাম আদালত চত্বরে সপরিবার সেজেগুজে হাজির বছর বাইশের এক যুবক। রীতিমতো উদ্বিগ্ন। এজলাসের বাইরে দাঁড়িয়ে ঘন ঘন ঘড়ি দেখছেন। ঘামছেন কুলকুল করে।
এজলাসের ভিতরে তখন চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে এক অষ্টাদশী। পরনে ময়ূরকণ্ঠী শাড়ি। তবে বিচারকের নির্দেশে ‘ব্যক্তিগত জামিনে’ যখন হোম থেকে বেরনোর ছাড়পত্র পেলেন, যেন শ্রাবণের মেঘ কেটে শরতের আকাশ ফুটে বেরোল তাঁর মুখে। ওই যুবকেরও চোখে জল। দীর্ঘ দেড় বছর পর এল বহু প্রতীক্ষিত এই ক্ষণ। আদালত থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার আগে যুবকটির মা হবু বউমাকে বরণও করে নিলেন। হল মালাবদল, মিষ্টিমুখ।
বছর চারেক আগের কথা। ওই যুবক তখন আঠারো ছুঁয়েছেন। ঝাড়গ্রাম শহরে বাড়ি হলেও থাকতেন বিনপুরের হাড়দা অঞ্চলে মামাবাড়িতে। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা আজকের এই অষ্টাদশী। সে তখন কিশোরী। মন দেওয়ার-নেওয়ার সেই শুরু। দু’জনের সম্পর্কের কথা জানাজানি হতেই নাবালিকা মেয়ের অন্যত্র বিয়ে স্থির করেন বাড়ির লোক। সেটা ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি। মেয়েটি তখন দশম শ্রেণিতে পড়ে। বিয়ের কথা জানামাত্র ঘর ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে।
গত বছর ৬ ফেব্রুয়ারি ‘টিউশনে যাচ্ছি’ বলে সোজা চলে আসে ঝাড়গ্রামের ছেলেটির বাড়িতে। প্রেমিকের পরিবার তাকে ফেরায়নি। কিন্তু মেয়েটির বাবা বিনপুর থানায় গিয়ে ওই যুবকের বিরুদ্ধে তাঁর নাবালিকা কন্যাকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। পরদিনই ছেলেটিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মেয়েটিকেও আটক করা হয়। টানা ৬২ দিন জেলহাজতে থাকার পর ২০১১ সালের এপ্রিলে জামিনে মুক্ত হন ওই যুবক। এ দিকে, মেয়েটি নিজের বাড়িতে ফিরতে রাজি না হওয়ায়, তাকে মেদিনীপুরের হোমে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। তারপর থেকে টানা দেড় বছর ওই হোমেই ছিল সেই মেয়ে।
বুধবার আঠারো পূর্ণ হয় ওই তরুণীর। ওই দিনই আদালতে তাঁর আইনজীবী তপন চৌধুরী ও ছেলেটির আইনজীবী কৌশিক সিংহ হোম থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার আবেদন জানান। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এ দিন তাঁকে ওই আদালতে হাজির করানো হয়। বয়সের প্রমাণপত্র দেখে ওই তরুণীকে হোম থেকে বেরোনোর ছাড়পত্র দেন সহকারি দায়রা বিচারক রোহন সিংহ। ভাবী শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার আগে ওই তরুণী বলেন, “আমাকে ভালবেসে ওকে জেল খাটতে হয়েছে। আমিও দেড় বছর হোমে প্রতিটা মুহূর্ত ওর কথা ভেবে কাটিয়েছি।” ছেলেটি এখন এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। কোর্ট-কাছারির খরচ তিনিই দিয়েছেন। আবেগঘন গলায় যুবক বলেন, “আমাদের ভালবাসা আরও গাঢ় হয়েছে। এ বার সুখে ঘর করতে চাই।” দ্রুত বিয়ের আয়োজন করা হবে বলে জানান ছেলেটির মা-বাবাও। তাঁরা সপরিবার হাজির থাকলেও, আদালতে মেয়েটির বাড়ির কেউ কিন্তু আসেননি। |
|
|
|
|
|