ফের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইলেন জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল। একই সঙ্গে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ছুটি নিয়ে হাসপাতাল ছাড়লেন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসকও। এই অবস্থার মধ্যেই বৃহস্পতিবার শাশ্বতবাবু জানিয়েছেন, তাঁকে কারণ দর্শানোর যে চিঠি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা তিনি এখনও হাতে পাননি। তবে তাঁর সোজা কথা, “যদি আমাকে শো কজ লেটার দেওয়া হয়, আমি আবার সুপারের পদ থেকে অব্যাহতি চাইব। আমি আগেই এই পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে হাসপাতালের সাধারণ এক জন চিকিৎসক হিসেবেই থাকতে চাই। সে কথা আমি বছর খানেক আগেই স্বাস্থ্য ভবনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলাম। তবে তাঁরা আমাকে সে সুযোগ দেননি।”
এরই মধ্যে এই দিন শাশ্বতবাবু প্রসূতি বিভাগে কর্মরত চার চিকিৎসককে সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের জেনারেল ওয়ার্ডে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে ওই চার জনই বিশেষজ্ঞ স্ত্রীরোগ চিকিৎসক। কেন তিনি এমন করলেন? সুপারের বক্তব্য, “এঁরা সকলেই স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হলেও চাকরিতে তাঁরা সাধারণ চিকিৎসক হিসেবেই নিযুক্ত। তাঁরা প্রসূতি বিভাগে আটকে থাকায় অন্য বিভাগে কাজে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হল।” তবে মাত্র বুধবারেই এই হাসপাতালে সারা দিন প্রসূতি বিভাগে কোনও চিকিৎসক না থাকায় এই হাসপাতালে সঙ্কট তৈরি হয়। তার পরে মহকুমাশাসকের হস্তক্ষেপে দু’জন চিকিৎসককে বাড়ি থেকে নিয়ে এসে অবস্থা সামাল দেওয়া হয়। ওই দিন সুপারেরও দেখা মেলেনি হাসপাতাল চত্বরে। তাঁকে ফোন করেও পাননি খোদ মহকুমাশাসকও। তার পরের দিনই কী করে ওই প্রসূতি বিভাগেরই চিকিৎসকের সংখ্যা কমিয়ে দিলেন? সুপারের ব্যাখ্যা, “যে চার জন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, তাঁদের দিয়েই কাজ চালাতে হবে। আমি এই দিন তাঁদের সে কথা লিখিত ভাবে জানিয়েও দিয়েছি।” এর পরেই ওই বিভাগের এক জন চিকিৎসক অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে চলে গিয়েছেন। অর্থাৎ, এখন বাকি তিন জনকে চালাতে হবে ওই বিভাগ। সুপার স্বীকার করেন, “এখন যা অবস্থা, তাতে প্রসূতি বিভাগে আবার সঙ্কট দেখা দেবে। কারণ, ৪৫টি শয্যা রয়েছে এই বিভাগে। কিন্তু এখনই রোগী রয়েছে ১৭০ জন। প্রতিদিন প্রসূতি ভর্তি হচ্ছে গড়ে ৬৫ জন করে। ৫৫ জনের প্রসব হচ্ছে। সমস্যা তো তাই হবেই।”
তিনি বলেন, “আমি স্বাস্থ্য দফতরের কাছে এই বিভাগের চিকিৎসক চেয়েছি।” তিনি জানান, ওই বিভাগে বহু রোগীকে মাটিতে ফেলে রাখতে হচ্ছে। তাই পরিকাঠামো গত উন্নয়নের দাবিও করেছি। তাঁর কথায়, “এ সবের দায় আমার নয়। তবু যদি আমাকে দায়ী করা হয়, তা হলে এই পদে থাকব কেন?” মহকুমাশাসক এনাউর রহমান বলেন, “পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। ডেপুটি সিএমওএইচকেও সব কথা জানিয়েছি। তাঁকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আশা করছি, অবস্থার উন্নতি হবে।” জেলার নতুন সিএমওএইচ অজয় চক্রবর্তী বলেন, “ওই হাসপাতালের পরিস্থিতির কথা এখনও আমাকে কেউ জানায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।” |