এত দিন শহরের নলকূপে আর্সেনিকের অস্তিত্বই মানতে চাইছিলেন না কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। আর এ বার শহরে আর্সেনিকের মাত্রার তীব্রতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় নিজে উপস্থিত থেকে একটি ব্রিটিশ সংস্থার আনা যন্ত্র দিয়ে যাদবপুর-টালিগঞ্জ এলাকার দু’টি নলকূপের জল পরীক্ষা করান। তাতে পুর-সমীক্ষার থেকেও বেশি পরিমাণে আর্সেনিক মেলে। তবে মেয়র এ দিন বলেন, “জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর বিশেষ যন্ত্র দিয়ে কয়েকটি নলকূপে পরীক্ষা চালিয়েছে। আগে যে নলকূপগুলিতে আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছিল, সেখানেই এ বার আর্সেনিক মিলেছে। তবে আগেও বলেছি, এখনও বলছি, শহরে আর্সেনিকের তীব্রতা তেমন ভাবে নেই। আর্সেনিকপ্রবণ এলাকাও সীমিত।” |
এ দিন আনোয়ার শাহ রোডের কাছে বিশ্বাসপাড়া লেন-এর একটি ক্লাবে নলকূপের জল পরীক্ষা করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। সেখানে প্রতি লিটারে ০.২ মিলিগ্রাম আর্সেনিক মেলে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) বেঁধে দেওয়া সহনমাত্রার (লিটার প্রতি ০.০১ মিলিগ্রাম) থেকে ২০ গুণ বেশি। পুর-সমীক্ষায় ওই নলকূপের জলে লিটারে ০.০৮ মিলিগ্রাম আর্সেনিক মিলেছিল। আর রাজেন্দ্রপ্রসাদ কলোনির একটি ক্লাবের পাশে নলকূপের জল পরীক্ষা করে প্রতি লিটারে ০.০৫ মিলিগ্রাম আর্সেনিক মেলে। এর আগে কলকাতা পুর-এলাকার নলকূপের জলে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক আছে কি না, তা নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা মানতে চাননি পুর-কর্তৃপক্ষ। রাজ্য জল অনুসন্ধান দফতর (সুইড) ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে দিয়ে যাদবপুর-টালিগঞ্জ এলাকার কয়েকটি নলকূপের জল পরীক্ষা করানো হয়। পুর-গবেষণাগারেও পরীক্ষা হয়। ওই তিন সংস্থার রিপোর্ট মোটামুটি মিলে যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টের সঙ্গে। তখন আর্সেনিকপ্রবণ নলকূপগুলিকে ‘সিল’ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
কলকাতা যে আর্সেনিকপ্রবণ, তা নিয়ে রাজ্যের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্স বহু বছর ধরেই রাজ্য ও পুর-কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে আসছে। কেন্দ্রীয় ভূ-জল নিগমও কলকাতা পুর-এলাকায় গভীর ও অগভীর নলকূপ বসানোর উপরে নিয়ন্ত্রণ জারির সুপারিশ করেছে। তবু কলকাতা পুরসভা আর্সেনিকের বিপজ্জনক উপস্থিতি অস্বীকার করে এসেছে। পাশাপাশি যাদবপুর এলাকায় ঢালাও ভাবে নলকূপ বসানোর অনুমোদনও দিয়েছে তারা। মেয়র পারিষদ (নলকূপ) তারক সিংহ জানান, পরিস্থিতির মোকাবিলায় আজ, শুক্রবার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক হবে। |