‘বিকল্প’ শক্তি, মত মোর্চা বিরোধীদের
সরাসরি না লড়েও ৮% ভোট তৃণমূলের
প্রার্থী প্রত্যাহারের (মৌখিক ভাবে) পরেও গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) নির্বাচনে প্রায় ৮ শতাংশ ভোট পেল তৃণমূল। বৃহস্পতিবার পাহাড়ের ১৭টি আসনে ভোটগণনা সম্পূর্ণ হওয়ার পরে দেখা যায়, গড়ে একেকটি আসনে তৃণমূলের প্রার্থীরা প্রায় ৭০০ ভোট পেয়েছেন। পানিঘাটা, সৈরিনির মতো কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীদের পক্ষে যথাক্রমে ১৫০০ ও ১১০০ ভোট পড়েছে।
পাহাড় ও সমতলের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই এই ঘটনাকে ‘ইঙ্গিতবাহী’ বলে মনে করছেন। কারণ, তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রকাশ্যে দলের সব প্রার্থী প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেন। ভোটের দিন কোনও বুথে পোলিং এজেন্ট কিংবা বাইরে তৃণমূল প্রার্থীদের অনেককেই দেখা যায়নি। এর পরেও যদি ওই পরিমাণ ভোট মেলে, তা হলে ভোটের ময়দানে নেমে লড়লে কী ফল হত, সেই প্রশ্নে পাহাড়বাসীদের মধ্যেও চলছে জল্পনা। দার্জিলিঙের কিছু প্রবীণ রাজনৈতিক নেতার মত, পাহাড়ে মোর্চা বিরোধী মনোভাবাপন্ন বাসিন্দারা যে ‘বিকল্প’ রাজনৈতিক শক্তির খোঁজ করছেন, এ দিনের ভোটের ফল সেই বার্তা দিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত দলের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের ঘোষণা মতো জিটিএ-র ৪৫টি আসনেই জিতেছে।
জয়ের পর উচ্ছ্বাস দার্জিলিঙে। ছবি: রবিন রাই
কিন্তু, গোর্খা লিগ, সিপিআরএম, জিএনএলএফের মতো দলগুলি একজোট হয়ে আগামী দিনে তৃণমূলকে সমর্থন করতে আসরে নামলে কী হতে পারে, সেই প্রশ্নও উঠছে মোর্চার অন্দরে। যদিও মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাং বলেছেন, “তৃণমূল আমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। তৃণমূলের পাহাড়ে সংগঠনও নেই। পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী সব দলের সাকুল্যে ভোট কত, সেটা এ বার স্পষ্ট হয়েছে। ওই ভোট তৃণমূলের দিকে গিয়েছে।”
বিপদে-আপদে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনঘন পাহাড়ে ছুটে যাওয়ার জন্যই তাঁর দলের জনপ্রিয়তা পাহাড়ে ক্রমশ বাড়ছে এই ফল কি তার ইঙ্গিত? বিনয় তামাংয়ের বক্তব্য, “পাহাড়ের মানুষ সরল-সাদাসিধে। পাহাড়কে যাঁরা ভালবাসবেন, পাহাড় তাঁদের ভালবাসবে। এর মধ্যে রাজনীতি খুঁজে লাভ নেই। তবে জিটিএ গঠনের পরে আমরা নিশ্চয়ই ভোটের ফল বিশ্লেষণ করব।” একই সঙ্গে তাঁর টিপ্পনী, “যে সব দল পাহাড়ে গণতন্ত্র নেই বলে চেঁচিয়েছে, তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে ভোট অবাধেই হয়েছে। না হলে প্রার্থীর অনুপস্থিতিতেও তৃণমূলের পক্ষে এত ভোট পড়ত না!”
জিটিএ নির্বাচনে ১৭টিতে প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল। বাকি ২৮টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন মোর্চা প্রার্থীরা। ২১ জুলাই শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে জিটিএ নির্বাচনে প্রার্থী প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পেরিয়ে যাওয়ায় প্রার্থিপদ তুলতে পারেনি তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে প্রচারও করেননি প্রার্থীরা।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরেও তাঁদের পক্ষে এতটা ভোট পড়ায় তৃণমূল নেতারা পাহাড়বাসীর প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেছেন। দল সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীও বৃহত্তর প্রেক্ষিতে পাহাড়বাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার বিষয়টি দলীয় নেতাদের মারফত জানিয়ে দিয়েছেন। যেমন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের কথায়, “১৪ মাসে সরকারে মুখ্যমন্ত্রী ৯ বার পাহাড় সফর করেছেন। পাহাড়ের উন্নয়নে তিনি নানা ভাবে চেষ্টা করছেন। পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা কোথায়, তা ফের স্পষ্ট হল। আমরা পাহাড়বাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ।” পাশাপাশি, মোর্চার জয়ী প্রার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করব, জিটিএ পাহাড়বাসীর প্রত্যাশা পূরণের সব রকম চেষ্টা করবে।” তৃণমূল সরাসরি লড়লে কী হত? গৌতমবাবুর সতর্ক মন্তব্য, “এটা গবেষণার বিষয় হতে পারে। এটা নিয়ে কী বলব!”
উৎকণ্ঠার ১২ ঘণ্টা
পিছোল কমিশনারেট উদ্বোধন
সকাল ৮টা
• জিটিএ-র ভোট গণনা শুরু।
সকাল ৯টা
• কমিশনারেট চালু নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ জানতে ঘনঘন ফোন দার্জিলিং-শিলিগুড়ির অফিসারদের।
বেলা সাড়ে ১০টা
• ভোটগণনা শেষ। স্বস্তি মহাকরণে।
বেলা ১১টা
• ফের হাইকোর্টে খোঁজখবর মহাকরণ থেকে।
বেলা ১২টা
• আইনমন্ত্রীর দফতর থেকেও হাইকোর্টে খোঁজখবর।
বেলা ১টা
• ৪ অগস্ট জিটিএ গঠনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারির প্রক্রিয়া শুরু।
বেলা ২ টো
• শিলিগুড়ি কমিশনারেটে ভক্তিনগর কেন, হাইকোর্টে মামলা। অনিশ্চয়তা বাড়ল।
বেলা ৪ টে
• অনুষ্ঠানের আমন্ত্রপত্র বিলি হয়নি, হতাশা পুলিশে।
বিকেল ৫টা
• হবু কমিশনারেট-মহাকরণ কথা।
সন্ধ্যে ৬টা
• কমিশনারেট চালুর দিন বদল। হবে ৬ অগস্ট।
রাত ৮ টা
• অনুষ্ঠানের নতুন কার্ড ছাপানোর প্রস্তুতি শুরু।
যদিও মোর্চা বিরোধী দলগুলির সম্মিলিত ভোট তৃণমূল পায়নি বলে দাবি গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতির। তিনি জানান, ১৯৯৮ সালের ডিজিএইচসি (গোর্খা পার্বত্য পরিষদ) ভোটে বিরোধীরা ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। গোর্খা লিগের ২ জন কাউন্সিলরও ছিলেন। প্রতাপ বলেন, “জিটিএ-তে ৭৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। বাকিরা ভোট দেননি। তবু মোর্চা নেতৃত্বকে শুভেচ্ছা জানাই। তাঁরা এলাকার উন্নয়ন করুন, এটা চাই। না হলে কী হতে পারে, তা সুবাস ঘিসিংয়ের পরিণতিই বলে দিচ্ছে!”
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য অশোক ভট্টাচার্যও এ দিন মোর্চাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পাহাড়ের বিভিন্ন বিরোধী দলের পক্ষেও মোর্চাকে অভিনন্দন জানানো হয়। অশোকবাবু বলেন, “মোর্চা এখন নিছক রাজনৈতিক দল নয়, শাসক দল। আমরা আশা করছি, মোর্চা নেতারা পাহাড়ে মানুষের প্রত্যাশাকে মর্যাদা দেবেন।” আগামী দিনে মোর্চার কোনও সহযোগিতা প্রয়োজন হলে, তা তাঁরা দিতে প্রস্তুত বলেও অশোকবাবু জানান।
এ দিন ভোটের ফল বেরোতেই পাহাড়ে মোর্চা কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও রাস্তায় নেমে পড়েন। মহকুমা সদর তো বটেই, ঘুম, পোখরিবং, মিরিক, সৌরিনি, পানিঘাটা, পেডং, নিমবংয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন তারা। পাহাড়ের হোটেল মালিক নীলম তামাং, খুচরো ব্যবসায়ী প্রেমা শেরপা, তাকদেন লামারা বলেন, “জিটিএ চুক্তির পরে এক বছরের মদ্যে পাহাড়ে গোলমাল হয়নি। চুটিয়ে ব্যবসা করেছি। জিটিএ গঠন হচ্ছে। এ বার নিশ্চয়ই আরও নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে পারব।”
‘ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়শনে’র উপদেষ্টা রাজ বসুর মন্তব্য, “উত্তরবঙ্গে একমাত্র সম্ভাবনাময় শিল্প পর্যটন। গত সাড়ে তিন বছর ধরে দার্জিলিংয়ে টানা গণ্ডগোল চলাতে পর্যটকরা এক রকম পাহাড়ে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন। গত এক বছরে নতুন করে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ বার পাহাড়ে শান্তির পরিবেশ ফেরায় আমরা খুশি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.